মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
মঙ্গলকোটের মাটিতে বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা ডাবলু আনসারী নেই এগারো বছরের বেশি সময়কাল।তবে চলতি বিধানসভার ভোটে সোশাল মিডিয়ায় বিশেষত ফেসবুকে গেরুয়া প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে ঝড় তুলছেন একদা মঙ্গলকোটের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ খ্যাত ডাবলু আনসারী মহাশয়। তাঁর বেশ কয়েক টি ফেসবুক একাউন্ট রয়েছে।সেখানে হাজার হাজার ফ্রেন্ড (সদস্য) রয়েছেন।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা রয়েছেন সেখানে।এমনকি বিপক্ষ শিবির তথা তৃণমূল কংগ্রেসের অনেকেই আছেন! তাঁরা মিত্র না দলের ‘গুপ্তচর’ তা সময়ই বলবে? তবে মঙ্গলকোটের বিজেপি প্রার্থী রানাপ্রতাপ গোস্বামীর হয়ে যেভাবে দফায় দফায় সোশাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছেন। তাতে ভোট ময়দানে মঙ্গলকোটে ডাবলুর উপস্থিতি যেন না থেকেও জ্বলজ্বল করছে। বিশেষ সুত্রে প্রকাশ, মঙ্গলকোটের ভোটগ্রহণের আগেই (২২ এপ্রিল) বিজেপি নেতা ডাবলু আনসারী নির্বাচন কমিশনের কাছে ‘অনুমতি’ নিয়ে এলাকায় ঢুকতে পারেন।কে এই ডাবলু আনসারী যাকে নিয়ে মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক আলোচনা / সমালোচনা তুঙ্গে। এগারো বছরের বেশি তিনি এলাকাছাড়া।তবুও তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন মঙ্গলকোটের বিধানসভার ভোটে।ফেসবুকে শিবরাত্রির শুভেচ্ছাজ্ঞাপন থেকে হোলির অভিনন্দন বার্তা সচিত্র সহ। ফেসবুকের কমেন্ট বিভাগে পক্ষে বিপক্ষে মুহূর্তের মধ্যেই শয়ে শয়ে পোস্ট হয়ে যাচ্ছে।বিজেপি প্রার্থী যখন নাম ঘোষণার পরেই কৈচরে যোগাদ্যার মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। কিংবা বাবলাডিহি – কোগ্রাম – পুরাতনহাটে মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন বিজেপির প্রার্থী। তখন সাথে সাথেই সংখ্যালঘু বিজেপি নেতা ডাবলু আনসারীর ফেসবুকে পোস্ট ছড়িয়ে যাচ্ছে হাজার রাজনৈতিক মহল সহ সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে।মঙ্গলকোটের সংখ্যালঘু সমাজে বিতর্কিত করে ফেলছে ডাবলু আনসারীর এহেন গেরুয়া প্রচার।তবে ভালো সাড়া মিলছে বলে দাবি করেছেন ডাবলু আনসারী মহাশয়। কে এই ডাবলু আনসারী? যাকে চিন্তায় ডান থেকে বাম সর্বপরি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বিগত বাম জমানায় মঙ্গলকোটের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই ডাবলু আনসারী।যার প্রভাব শুধু মঙ্গলকোট নয় অবিভক্ত বর্ধমান সহ সীমান্তবর্তী বীরভূমের একাংশে থাকত। সিপিএমের মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদে দশ বছরের বেশি কাজ করে গেছেন। শতাধিক অনুগামীদের পাহাড়ায় মঙ্গলকোটের থানা থেকে ব্লক অফিস কাঁপাতেন তিনি।থানার ওসিরা ডাবলুর বাইরে যেতেন না বলে জনশ্রুতি। এমনকি ব্লক অফিসে যাবতীয় টেন্ডার হত এই ডাবলু আনসারীর ইশারায়। অজয় নদের বেশিরভাগ বালিঘাটের নিয়ন্ত্রণ থাকতো এই নেতার। তাই জাঁদরেল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে সিপিএমের তপন শুকুরের মত রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত ছিলেন একদা ডাবলু – বাবলু।তাই এহেন ডাবলুর সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে আসাটা শাসক দলের কাছে ব্যাপক অস্বস্তির। তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে থাবা দেওয়ার পাশাপাশি কংগ্রেস – বামেদের একাংশ ভোট গেরুয়াদের পক্ষে আনতে পারেন ডাবলু আনসারী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । কেননা রাজনৈতিক জীবনে প্রথম দিকে জাতীয় কংগ্রেস,পরে সিপিএম সর্বশেষ বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন ডাবলু।রাজনীতির উদ্ধে সাধারণ মানুষদের পাশে প্রায় থেকেছেন এই নেতা।তাই সেইসব অতীতের ‘ঋণ’ শুধতে পারে মঙ্গলকোটের একাংশ। এই আশংকা করছে খোদ তৃণমূলও। যদিও তারা প্রকাশ্যে তা মানতে চাইনি।এবারের মঙ্গলকোটের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী বলেন ” ডাবলু আনসারীর এহেন ফেসবুকে গেরুয়া প্রচার আমাকে পঞ্চাশ হাজার বেশি ভোট পাওয়াবে “। জানা গেছে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মঙ্গলকোটে হিন্দুত্বের ফোকাস টা অপেক্ষাকৃত কম রাখছে গেরুয়া শিবির। তাই ডাবলু আনসারীর মত একদা মঙ্গলকোটের হেভিওয়েট নেতা কে দলবদলের পতাকা তুলে দিয়েছেন খোদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মহাশয়। এখন দেখার ডাবলু আনসারী কে দিয়ে বিজেপি কিভাবে তৃনমূলের ভোট মোকাবিলা করে মঙ্গলকোটে? শোনা যাচ্ছে, এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মঙ্গলকোট থানা সংলগ্ন মাঠে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে দলবল নিয়ে মঙ্গলকোটের চেনা মাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে ময়দানে নামতে পারেন মঙ্গলকোটের একদা বেতাজ বাদশা ডাবলু আনসারী মহাশয়।তবে এহেন তৎপরতার মধ্যেই সম্প্রতি ডাবলু আনসারীর ভাই বাবলু আনসারী কে অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার করেছিল আউশগ্রাম থানার পুলিশ। তাই ডাবলু আনসারী মঙ্গলকোটের মাটিতে পা রাখলে পুলিশের পুরাতন মামলার সক্রিয়তা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।