তিন বছর অবধি শিশুদের ভাইরাস জ্বর, রিপোর্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির
জাহিরুল হক ,
সাম্প্রতিক সময়কালে শিশুদের জ্বর উদ্বেগ বাড়িয়েছে রাজ্যবাসীর।উত্তরবঙ্গে দু হাজারের মতো শিশু জ্বরে আক্রান্ত। পাঁচের বেশি শিশু মারা পড়েছে। গত শুক্রবার কলকাতা থেকে চিকিৎসকদের এক বিশেষজ্ঞ কমিটি জলপাইগুড়ির একাধিক হাসপাতালে যায়।পরে তাঁরা রিপোর্ট দেন যে, তিন বছর অবধি শিশুদের ভাইরাস জ্বর হচ্ছে।তাঁরা প্রাথমিকভাবে যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের জ্বরের কারণ রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল (আরএস) ভাইরাস। এই বয়সী শিশুরাই বেশি ভুগছে জ্বরে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে প্রকাশ , কলকাতার পাঁচজন বিশেষজ্ঞের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। গত চার দিনে এই হাসপাতালেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে অজানা জ্বরে। গত মঙ্গলবার জলপাইগুড়িতে বছর ছয়েকের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যার শরীরে ভাইরাল নিউমোনিয়ার উপসর্গ পাওয়া গিয়েছিল। গত বুধবার মাত্র দু’দিনের জ্বরে মারা গেছে তিন মাসের একটি শিশু। তাছাড়া জেলার একাধিক হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি শতাধিক। একের পর এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল সহ জেলার একাধিক হাসপাতালে। এই বিশেষজ্ঞ দলে রয়েছেন, ডাঃ রাজা রায় (মাইক্রোবায়েলজি), অধ্যাপক পল্লব ভট্টাচার্য, ডাঃ দীপ্তকান্ত মুখোপাধ্যায় (কমিউনিটি মেডিসিন), ডাক্তার মিহির সরকার (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ) ও ডাক্তার বিকাশ মন্ডল। ডাঃ রাজা রায় জানান , -‘প্রতি বছরই এমন জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এ বছর কোভিড পরিস্থিতির জন্য গোটা বিষয়টির ওপরে আরও বেশি নজর রাখা হয়েছিল, ভয়ের অতটা কারণ নেই। এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল বা আরএস ভাইরাসের প্রকোপ বেশি হচ্ছে। মূলত এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তিন বছরের ঊর্ধ্বে ১২ বছর বয়স অবধি বাচ্চাদের মধ্যে আবার রেসপিরেটারি ভাইরাসের প্রভাব অতটা দেখা যায়নি।’ করোনার মতোই সিঙ্গল স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস। একে বলা হয় হিউম্যান রেসপিরেটারি সিনসিটিয়াল ভাইরাস । মূলত শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ছড়ায় এই ভাইরাস। ছোঁয়াচে, দ্রুত ছড়াতে পারে। একবার শরীরে ঢুকলে ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ছড়ায়। শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। শরীরে ভাইরাল লোড বাড়লে প্রবল শ্বাসকষ্টও হতে পারে। শিশুরা এই ভাইরাসের প্রকোপে পড়লে ব্রঙ্কিওলাইটিস হতে পারে, বড়দের নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ধুম-জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীতে প্রদাহ হলে দেরি না করিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া ভাল। কারণ বেশি বাড়াবাড়ি হলে অসুখ নিউমোনিয়ার পর্যায়ে চলে যেতে পারে’। কলকাতার বিশিষ্ট চিকিত্সকরা জানান , কোভিডের মধ্যেই ভাইরাল জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় চিন্তা বেড়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বড়দের থেকে বাচ্চাদের মধ্যেও জ্বর, সর্দি-কাশি ছড়াচ্ছে। অনেকে পেট ব্যথা, বমি হচ্ছে। জলপাইগুড়িতে বাচ্চাদের মধ্যে ধুম জ্বর ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণ বেশি দেখা যাচ্ছে। এই ভাইরাল জ্বর খুব ছোঁয়াচে, তাড়াতাড়ি সংক্রমিত হতে পারে। বাচ্চারা ভাইরাল জ্বরে খুব তাড়াতাড়ি কাবু হয়ে পড়ে। এখন স্কুল বন্ধ হলেও বড়দের থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যেও। সাবধান থাকতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা। বর্ষা চলছে তাই অভিভাবকদের সদা সর্তক থাকতে হবে সন্তানদের নিয়ে।