মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ),
,
সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে বীরভূমের মল্লারপুর থানার পুলিশ লক আপে নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার শুনানি চলে। এদিন কলকাতা হাইকোর্ট কে সরকারি আইনজীবী জানিয়েদেন – ‘ ওই নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্ন নেই ‘। পক্ষান্তরে পুলিশি গাফিলতিতে মৃত্যুর ঘটনা টি ঘটেছিল, তা মান্যতা দিলেন সরকারি আইনজীবী। আগামী ২৪ ডিসেম্বর নিহত নাবালকের অভিভাবক কে ডেকেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হতে পারে ওই পরিবার কে। ওই দিনই রয়েছে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিউজের ভিক্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট বীরভূমের মল্লারপুর লকআপে নাবালকের মৃত্যুর ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে মামলা রুজু করে থাকে। এই মামলায় প্রথম দিকে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি সৌমিত্র সেনের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি উঠে। সেখানে গত শুনানিতে বীরভূম পুলিশসুপারের রিপোর্ট তলব আদেশনামা ছিল। যা দাখিল হয়েছিল জেলাপুলিশের তরফে। পুলিশ সুপারের মল্লারপুর কান্ডে রিপোর্ট দেখে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। যার ফলস্বরূপ ২৫ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের ডিজিপি এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের আলাদাভাবে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। ডিজিপির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – রাজ্যের সমস্ত থানায় কত সিসিটিভি রয়েছে? তা আদৌও কাজ করে কি? পাশাপাশি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে – নাবালকদের ক্ষেত্রে থানা গুলিতে আলাদা চাইল্ড কর্নার আছে কিনা তা জানাতে ? তা সংখ্যায় কত? উল্লেখ্য , গত ৩০ অক্টোবর বীরভূমের মল্লারপুরে স্থানীয় থানার পুলিশ এক নাবালক কে তুলে আনে। তুলে আনার পরের দিন নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে মল্লারপুর থানার লকআপে। হোমে না পাঠিয়ে কেন পুলিশ লক আপে আনা হয়েছিল নাবালক টি কে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। পরিবারের তরফে পুলিশি মারধরের ফলে মৃত্যুর অভিযোগ প্রথমে তোলা হলে পরে তা ‘বিশেষ চাপে’র কাছে নতিস্বীকার করে আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি রাখে। পুলিশি ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘জনরোষ’ দেখায়।বিষয়টি রাজনৈতিক মাত্রা পায় বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের প্রতিবাদ মিছিলে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তরফে বিষয়টি নিয়ে সরব, বিশেষত থানায় সিসিটিভির ফুটেজ চাওয়া হয় প্রকৃত ঘটনা জানতে। সেখানে পুলিশ জানিয়েছিল – ‘সিসিটিভি বিকল রয়েছে’। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্ট বীরভূমের মল্লারপুর ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মামলা রুজু করে থাকে। সেখানে প্রথম শুনানিতে বীরভূম পুলিশ সুপারের রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। সেই রিপোর্ট দেখে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি সৌমিত্র সেনের ডিভিশন বেঞ্চ চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকে। রাজ্যের ডিজিপির কাছে সমস্ত থানায় কত সিসিটিভি রয়েছে? এবং তা আদৌও কার্যকরী কিনা? তার হলফনামা চাওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আলাদাভাবে হলফনামা চাওয়া হয়েছিল – থানায় নাবালকদের জন্য পৃথক চাইল্ড কর্নার আছে কিনা, তা লিখিত ভাবে জানাতে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বোলপুর থানার পুলিশ লকআপে এক ব্যক্তির রহস্যমৃত্যুতে তৎকালীন আইসির জেল হেফাজত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ – ‘থানা গুলিতে সিসিটিভি ঠিকই থাকে, তবে কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধের প্রমাণ লোপাট করতে সিসিটিভির অচলের যুক্তি দেখানো হয়। কোথাও আবার সিসিটিভির তার ইঁদুরে খেয়ে নেওয়ার যুক্তি আদালতে পেশ করা হয় ‘। বর্ধমান সদর থানায় রাজনৈতিক নেতা বামাপদ মন্ডলের গাঁজার মামলায় এইরুপ যুক্তি জেলার সদর এসিজেম এজলাসে পুলিশের তরফে পেশ করা হয়েছিল।সাংবাদিক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রেও সিসিটিভির ফুটেজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – থানায় সিসিটিভি গুলি যদি ঠিকঠাক রাখা যায়, তাহলে বালি – কয়লা অধ্যুষিত এলাকার অপরাধীদের থানায় যাতায়াত কমবে, সেইসাথে পুলিশ লকআপে মারধরের ঘটনাও কমে যাবে’। সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। সেখানে নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পুলিশি গাফিলতি কার্যত স্বীকার করে নেন সরকারি আইনজীবী। আগামী ২৪ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে নিহত নাবালকের পরিবার কে ডেকেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ওই পরিবারের বক্তব্য শুনে পরবর্তী নির্দেশ দিতে পারে কলকাতা হাইকোর্ট।