মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
সারদা আর্থিক প্রতারণা মামলায় অভিযুক্ত জেলবন্দি দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানি চললো কলকাতা হাইকোর্টে।বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। এই মামলার তদন্তকারী কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এর ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেন দেবযানীর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টপাধ্যায়। তিনি এদিন সওয়াল-জবাবে সিবিআইয়ের ইচ্ছাকৃত তারিখের পর তারিখ নিয়ে মামলা দীর্ঘায়িত করা নিয়ে অভিযোগ তুলেন।ইতিমধ্যেই সিবিআই এই মামলায় ২৪ বার ডেট নিয়েছিল।তবে গত মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল নিজেই তাঁর ক্ষোভের কথা ( সময় চাওয়া নিয়ে) জানিয়েছিলেন এজলাসে। বেশকিছু আগে কলকাতা হাইকোর্টে ভার্চুয়াল শুনানি চেয়ে কয়লা ও গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র পিটিশন দাখিল করেছিলেন। সেসময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই বিনয় মিশ্রের পিটিশনের শুনানি দু সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। তবে কলকাতা হাইকোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছিল।গত মঙ্গলবারও কলকাতা হাইকোর্টে একপর্যায়ে ভৎসনার মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই কে। সারদায় অভিযুক্ত জেলবন্দি দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিনের শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই এর আইনজীবী। তাতে সাথে সাথেই কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিলেন ।পাশাপাশি সিবিআই কে উদ্দেশ্য করে বলেন – ‘ আপনারদের সবসময় শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার মনোভাব দেখা যায় কেন? একটা মামলা নয়,পরপর কয়েক টি মামলায় আপনাদের এই প্রবণতা লক্ষ্য করছি’। সারদা আর্থিক প্রতারণা মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টপাধ্যায় জানান – ‘ ২০১৪ সালে ৯ মে সিবিআই এই মামলার তদন্তভার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নেয়।সিবিআই তিনটি পর্যায়ে এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। আরসি ৪ তে অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে মদন মিত্র, কুনাল ঘোষ, রজনকান্তি মজুমদার, সৃঞ্জয় বসু, জামিন পেয়েছেন। আরসি ৫ তে দেবযানী মুখোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন। আরসি ৬ তে ৮ জন অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকেই জামিন পেয়েছেন। কুনাল ঘোষ গত ২০১৬ সালে জামিন পেয়েছেন। তাহলে কেন দেবযানী মুখোপাধ্যায় জামিন পাবেন না?” টানা ৮ বছর ২ মাস অযথা জামিন আটকাতে সিবিআই শুধু সময় নিচ্ছে বলে দাবি দেবযানীর আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টপাধ্যায় এর।২০২০ সালে ১ ডিসেম্বর তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এর এজলাসে সিবিআই এক পেন ড্রাইভ উদ্ধারের কথা বলে। সেইসাথে তা ফরেন্সিক পরীক্ষার দাবি জানিয়েছিল। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়।৮ বছরের বেশি জেলে রয়েছেন দেবযানী। এখনও এই মামলার ট্রায়াল শুরু হয়নি।এর আগে এই মামলায় গুরত্বপূর্ণ অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন। তাহলে দেবযানী কেন জামিন পাবেন না?’ বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে এই মামলার উভয়পক্ষের সওয়াল-জবাব চলে।উল্লেখ্য, বেআইনী আর্থিক সংস্থা সারদার সদর দপ্তর কলকাতার মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে রিসেপশনিস্ট হিসেবে ছিলেন দেবযানী মুখোপাধ্যায়।পরে এই সংস্থার ডিরেক্টর মন্ডলীর প্রভাবশালী সদস্য হয়েছিলেন। সারদায় আর্থিক বিষয়টি দেখভাল করতেন। হিসাব বহির্ভূত ভাবে অর্থ সরানোর অভিযোগ রয়েছে দেবযানীর বিরুদ্ধে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন তিনি। বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে এই দেবযানীর জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানি চলে ।  আগামী সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট অভিযুক্ত জেলবন্দি দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন নিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করতে পারে বলে জানা গেছে।

 
			 
			 
			