‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১৯৭১: ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত
ফারুক আহমেদ
‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১৯৭১: ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল গতকাল শুক্রবার বিকেলে। রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন এ আয়োজন করে।
জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশের গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নজরুলসংগীতশিল্পী সম্পা দাসের দুটি নজরুলসংগীতের পর আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনলাইনে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান রবার্ট বব লান্সিয়া, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক ক্রস্টোফার ব্লাকবান ও সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
রবার্ট বব লান্সিয়া বলেন, ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১৯৭১: ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বইটি কেন গুরুত্বপূর্ণ? বইটিতে মানবিক, সহানুভূতির কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিরোধিতা করলেও সাধারণ জনগণের সামর্থ্য ছিল। পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসন এ কনসার্টের মাধ্যমে সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানিদের গণহত্যা, নির্যাতনের চিত্র।ঐতিহাসিক বইটি আমাদের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে ইতিহাসে আমাদের ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচিত হবে। আমি দুই লেখককে অভিনন্দন জানাই।’
ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক ক্রস্টোফার ব্লাকবান বলেন, ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১৯৭১: ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বইটি শুধু ঐতিহাসিক ঘটনাবলিকে চিত্রিত করার প্রয়াস করেনি; এটি একটি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে, কীভাবে একটি কনসার্টের মাধ্যমে মানুষের সেবামূলক কাজের পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘স্বাধীনতার অনেক বছর হতে চলছে। সেই সময়ের পুরোনো স্মৃতি আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। এমন সময়ে বইটির মাধ্যমে লেখকদ্বয় নতুন করে সেই সময়ের গণহত্যা বিভীষিকার কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। লেখকদ্বয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইতিহাস অলিম্পিয়াড জাতীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. এমরান জাহান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যখন নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করা হয়, তখন বিশ্বজুড়ে জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রশ্ন জেগে ওঠে। বাংলাদেশ নামটা তখন বহির্বিশ্ব জানত না। পণ্ডিত রবিশংকর ও জর্জ হ্যারিসনের এ উদ্যোগের মাধ্যমে সারা বিশ্ব জানতে পারে ‘বাংলাদেশ’ নামের দেশটির কথা। ঠিক ৫২ বছর পর ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ১৯৭১: ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ বইয়ের মাধ্যমে সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম আবার জানতে পারবে।
আরও আলোচনা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইজিএম) সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল, লেখক দন্ত্যস রওশন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম মনসুর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্য বিভাগের চেয়ারপারসন মনিরা পারভীন, আলোকচিত্রী, গবেষক সাহাদাত পারভেজ, লেখক ও গবেষক আবু সাঈদ, প্রিয়জিৎ দেবসরকারসহ প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নজরুলসংগীতশিল্পী উম্মে রুমা টফি ও মুক্ত আসরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শায়লা রহমান গান পরিবেশন করেন। ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের এই আয়োজনের সঙ্গে সহ–আয়োজক মুক্ত আসর, বইবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘বইচারিতা’ ও জেসিআই ঢাকা ইয়াংক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফাতিমা জাহান ও নাফিজা রহমান। স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বাংলা ও ইংরেজি ভাষা বইটি ভারতের একমাত্র পরিবেশক উদার আকাশ।