মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু
,
বিগত বাম জমানায় অবিভক্ত বর্ধমানের মঙ্গলকোট এবং বীরভূমের নানুর কারও ভূলবার নয়। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পালাবদলে সিঙ্গুর – নন্দীগ্রাম গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও পরিবর্তনের পথ চলা শুরু এই মঙ্গলকোট – নানুর থেকেই।নানুরের বাসাপাড়া সংলগ্ন সূচপুরে ১১ জন ক্ষেতমজুর কে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় ছুটে এসেছিলেন মমতা।বাসাপাড়ায় সোনা চৌধুরীদের পাশে নিয়ে উপরওয়ালার নামে কসম খেয়ে বলেছিলেন – ‘ যতদিন বাঁচবো,ততদিন শহীদ দিবস পালনে ২৮ জুলাই আসব’। অথচ তিনি ২০১১ সালের পর থেকে সূচপুরের শহীদ দিবসে কোনদিন আসেননি।অথচ কুড়ি কিমি দূরে একই দিনে ২০১২ সালে বোলপুরে প্রশাসনিক সভা সেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। চলতি সপ্তাহে কুচবিহারের শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে অডিও টেপ প্রকাশ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। আসানসোলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লাশ নিয়ে রাজনীতি করা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী কে বিঁধেছেন।আবার কাটোয়ায় মমতা প্রকাশ্য জনসভায় এই অডিও টেপ প্রকাশ ঘিরে সিআইডি তদন্তের হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। তর্ক বিতর্ক যাইহোক না কেন। লাশ নিয়ে রাজনীতি করা নিয়ে মঙ্গলকোটের নাম প্রথম সারিতে পড়বে।কেননা মফস্বল এলাকার লাশ নিয়ে মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়েছিল এই মঙ্গলকোট কে ঘিরেই!২০১০ সালে ৪ ই কিংবা ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলকোটের শ্যামবাজার সংলগ্ন দিলীপ ঘোষ নামে এক এলাকায় তৃণমূল কর্মীর ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই খুনে অভিযোগের তীর উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। এই এলাকাতেই ২০০৯ সালে ১৫ জুন খুন হয়েছিলেন ফাল্গুনী মুখার্জি নামে এক সিপিএম নেতা তথা বর্ধমান জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ। ফাল্গুনী মুখার্জী খুনের পরবর্তী সন্ত্রাস হিসাবে পূর্ণিমা মাঝী,দিলীপ ঘোষ, আলাউদ্দিন সেখ, হাসমত সেখ প্রমুখ তৃনমূল কর্মী সমর্থক সিপিএমের হাতে খুন হতে থাকে। সেসময় মঙ্গলকোটের বেশ কয়েকটি জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিহত সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে সিবিআই তদন্ত এবং নিহত দলীয় কর্মী সমর্থকদের খুনের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার ছিটেফোঁটা কার্যকর করা হয়নি।রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় দশ বছর থেকেও ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে যেমন নুন্যতম সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।ঠিক তেমনি নিহত কর্মীসমর্থক খুনের মামলায় অভিযুক্তরা আইনে শাস্তি দূর অস্ত, অভিযুক্তদের বেশিরভাগ বর্তমানে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় লালন পালন হচ্ছে বলে অভিযোগ।মঙ্গলকোটের এইসব নিহতদের পরিবার গুলিতে কোন চাকরির ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি শাসক দল তৃণমূল। এমনকি সিপিএমের বিরুদ্ধে বাম আমলে লড়াই করা নানুরের সোনা চৌধুরী, মঙ্গলকোটের আজাদ মুন্সি, কেতুগ্রামের জাহির সেখ প্রমুখ খুন হয়েছে দলের বড় এক নেতার ইশারায় বলে অভিযোগ।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে ২০১০ সালে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মঙ্গলকোটের তৃণমূল কর্মী দিলীপ ঘোষের লাশ নিয়ে কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা।সেসময় সিপিএমের সন্ত্রাসে মুখর তৃণমূল নেত্রী নিহতের খুনের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি তুলেছিলেন। আজ অভিযুক্তদের বড় অংশ তৃণমূলের সভা মিছিলে থাকে বলে এলাকাবাসীরা নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন। কুচবিহারের শীতলকুচির ঘটনায় অডিও টেপে লাশ নিয়ে রাজনীতি করার বার্তায় ফের মনে করিয়ে দিলো বাম আমলে একের পর এক খুন হওয়া তৃণমূল কর্মীদের লাশ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে মমতার নেতৃত্বদানে ভূমিকার কথা। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নানুরের সূচপুর হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে মঙ্গলকোটের শ্যামবাজারের দিলীপ ঘোষ এর মতন বক্সিনগরের আলাউদ্দিন সেখ, মল্লিকপুরের হাসমত সেখরা…..