নিঃসঙ্গ নারীত্ব!!
মৌসুমী মন্ডল (কলকাতা)
এখন আর নিজেকে প্রমাণ করার জন্য, কারো কাছে জবাবদিহি করতে ইচ্ছে করেনা।
সবার কাছে ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে আর মন চায় না।
যে যা ভাববার ভাবুক না, যা ইচ্ছে হয় বলুক…… সেগুলো শোনার আর আগ্রহও জন্মায় না।
জীবনের মধ্যবর্তী পর্যায়ে এসে এখন এসব বড্ড অর্থহীন লাগে!
যা দায়িত্ব কর্তব্য আছে, সেগুলো নীরবে করে যাওয়াই
এখন আরেক টা দায়িত্ব।
এই তো জীবন!!!
কেটে যাচ্ছে ঘড়ির কাঁটার নিয়মে।
কত স্বপ্ন!
পাওয়া- না পাওয়ার হিসেব গুলোও এখন আর মিলাতে ইচ্ছে করে না।
মাঝে মাঝে পূরানো হয়ে যাওয়া অ্যালবামের ছবি গুলোর মধ্যে খুঁজে বেড়াই “দুই বিনুনীর উজ্জ্বল দু’চোখে স্বপ্ন আঁকা ” আমির মাঝে “পড়ন্ত বেলার ধূসর চুলের” এই আমি কে!
চোখের পলকে কতো গুলো বছর পার হয়ে গেল। আমি এক ছেলে মা। তিন মাস আগে বৌমা এসেছে ঘরে।
বর, ছেলে সবাই যে যার মতো ব্যাস্ত।
একটা সময় আমিও খুব ব্যাস্ত ছিলাম।
বরের অফিস,ছেলের স্কুল। ছেলেকে পড়ানো….টিফিনের ঝামেলা…
উঃ!!! নিজের জন্য এক মুহূর্তও সময় ছিল না।
এখন আমার দায়িত্ব অনেক টাই কমে গেছে। ছেলে বড়ো হয়ে গেছে। কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়টা।সে তার নিজের জগতে ব্যাস্ত।আমার জন্য তার সময় কোথায়!
ইট কাঠে ঘেরা এই শহরটা বড্ড বিবর্ণ লাগে!!
মনে হয় যেন এখানে আমি ভীষণ একা!
খুব মনে পড়ে কিশোরী বেলার সেই দিনগুলোর কথা।
দু’চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন!
“আমার স্বপ্ন গড়তে গড়তে ভেঙে গেছে কতবার
জিততে জিততে কতবার আমি মুঠোয় পুরেছি হার”
বন্ধুর মত একজন মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া…
ছেলের জন্ম থেকে বড়ো হওয়া ……
সব যেন সিনেমার মত চোখের সামনে ভাষে।
মনে হয় এইতো সেদিনের কথা !
শত সহস্র অপূর্ণতার মাঝেও পূর্ণ হয়েছে আমার জীবন।
ইদানিং জানিনা কি অদ্ভুত রোগে ধরেছে!কিছুই ভালো লাগে না।
শারীরিক ভাবে তো ভালোই আছি।
কিন্তু মানসিক ভাবে হয়তো ভালো নেই।
ভেতর টা কেবল শূন্য শূন্য লাগে। মাঝে মাঝে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।
আচ্ছা এই রোগের নাম কি??
বুড়ো বয়সের ভীমরতি!!
একা একাই কথা বলি নিজের সাথে।
এই তো আমি……
“কত না পাওয়ার বেদনা লুকিয়ে হেসেছি সুখের হাসি,
আপনজনকে নির্ভার করে গিলেছি কান্নারাশি”
সন্ধ্যা বেলায় কখনো রাস্তায় বেরোলে ফুচকাওলা দেখলেই লোভ সামলাতে পারি না।
রক্তে সুগার,কোলেস্টেরল ধরা পড়েছে।
তাও ফুচকাওলার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি।
ডাক্তার চিনি ছাড়া লিকার চা খেতে বলেছেন।
ডাক্তারের নির্দেশকে তুড়ি মেরে বেশ কড়া লিকারের চিনি দিয়ে দুধ চা খাই। সাথে থাকে গোটা সাত /আট নোনতা বিস্কুট।
চমৎকার জুড়ি এই বিস্কুট আর দুধ চা।
পায়রা গুলো আমার নিত্য দিনের সঙ্গী। ওদের কিচির মিচির গুলো মাঝে মাঝে খুব ভালো লাগে। আবার মাঝে সাঝে চরম বিরক্ত লাগে! হয়তো
তখন আমার মুড খারাপ থাকে।
ওদের সংসার কিন্তু দারুণ!!
একটা দুটা করে খড়কুটা এনে এনে বাসা বানায়। বসবাস করে।
বাচ্চা- কাচ্চা হয়। আবার মুখে খাবার যোগাড় করে এনে ছানাদের খাওয়ায়। মুগ্ধ হয়ে দেখি ওদের…..
ভাবছি এখন থেকে নিজেকে নিজেই রোজ ট্রিট দেবো।
ফুচকা খাবো।
সকালে হাঁটতে বেরিয়ে অনেক দূর চলে যাবো।ফেরার সময় দোকানে ভাঁড়ে দুধ চা আর বেকারী বিস্কুট খাবো।
কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা…মনে মনে…..
অজান্তেই কেন যেন গানটা গেয়ে উঠলাম।
তবে হ্যাঁ আমি কিন্তু হেরে যাওয়া নারীদের দলে পড়ি না! মন খারাপ হয় ঠিকই। হতাশ ও হই।
কিন্ত হতাশা আমার ওপরে চেপে বসতে পারে না।
এখন সময় আমার ……
খুব ইচ্ছা হয় বারবার সমুদ্রের কাছে যেতে….
জমানো সব অভিমান গুলো ঢেলে দিয়ে আসবো বিশাল সমুদ্রে।
ঢেউ হয়ে আছড়ে পরবে সব অনুযোগ গুলো।
ফিরে আসবো এক পশলা প্রশান্তি নিয়ে।
“নাইবা করলো আপন পৃথিবী ,তবু নেই অভিমান রাগ,
সুনীল আকাশ,সাগর,পৃথিবী ,সযতনে ভালো থাক।”