পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জন্মবার্ষিকী পালিত
কাজী নূর।। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ১২১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার ১ জানুয়ারি কবির বসতভিটা ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুরে নিজ বাড়িতে দোয়া এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকালে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইয়াসিন কবীরের সভাপতিত্বে দোয়া এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ, অধ্যাপক এম এ সামাদ, অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আনছার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ জাফর শেখসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম পল্লীকবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পর্যায়ক্রমে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ, আনছার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পল্লীকবির কর্মজীবন ও বাংলা পল্লী সাহিত্যে তার অবদানের কথা তুলে ধরে কবির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন বক্তারা।
বাংলা ভাষায় আধুনিক যুগের কবিদের নাম বলতে গেলে প্রথমেই যে কয়েকজনের নাম আসে, জসীমউদ্দীন তাদেরই একজন। জসীমউদ্দীন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর শহরতলীর তাম্বুলখানা গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন। ১৯২১ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯২৪ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন তিনি। কলেজ জীবনেই ‘কবর’ কবিতা রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। এই কবিতাটি পরে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর কবির আরও ৪৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হলো নক্সী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, বেদের মেয়ে, গ্রামের মায়া, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, বাঙালীর হাসির গল্প, ডালিম কুমার, বোবা কাহিনী। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না ও জীবন সংগ্রামের কাহিনিই তার কবিতার উপজীব্য। সাহিত্য বিশারদদের মতে, ‘পল্লীকবি’ উপাধিতে ভূষিত জসীমউদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। গ্রাম বাংলার মাটি ও মানুষের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনাকে কেন্দ্র করে দরদি কবিতা, ছড়া, গীতিকবিতা ও উপন্যাসসহ সাহিত্য রচনা করায় তিনি পল্লীকবি নামে উপাধিতে ভূষিত হন।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীন সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. লিট উপাধি ও ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। একইদিনে ফরিদপুর সদরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে পৈতৃক ভিটায় দাফন করা হয় তাকে।