পার্থের আংটি কান্ডে হেস্টিংস থানার তলব প্রেসিডেন্সি জেল সুপার কে
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের একদা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মাসের পর মাস কাটছে জেলের অভ্যন্তরে। কখনো নিম্ন আদালত আবার কখনো বা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েও কোন সুরাহা পাননি তিনি।এমতাবস্থায় জেলের মধ্যে তাঁর হাতের আংটি পড়া নিয়ে প্রভাবশালী ত্বত্ত্বর অভিযোগ আনে কেন্দ্রের আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডি। ব্যাঙ্কশাল আদালতে ইডির এজলাসে খোদ বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়েন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট জেল সুপার।এরেই মধ্যে নিজেদের স্বচ্ছতা আনতে কারা বিভাগের আইজি কলকাতা পুলিশে লিখিত অভিযোগ জানান।এই ঘটনায় সিআরপিসি ৪১ এ ধারায় জেল সুপার কে তলব করেছে হেস্টিংস থানা।জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে আংটি কেন? আদালতে এই প্রশ্নের মুখেই পড়তে হয়েছিল প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষকে। এবার সেই কাণ্ডে প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে নোটিস দিয়ে তলব করল হেস্টিংস থানার পুলিশ।ইতিমধ্যেই, জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে হেস্টিংস থানায় জেলের আইন ভাঙা ও কর্তব্যের গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ডিআইজি (কারা)। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই জেল সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠাল পুলিশ।কিন্তু কেন এই অভিযোগ জমা পড়ল? পার্থর আংটি-কাণ্ডে কারা দফতরের থেকে রিপোর্ট তলব করেছিল আদালত। সেখানে জেলের মধ্যে পার্থর হাতে আংটি কেন রয়েছে সেই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কারা দফতরের তরফে জানানো হয়, তারা ইতিমধ্যেই এব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা করেছে।পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলার শুনানি চলছে ব্যাঙ্কশাল আদালতে। বিচারপর্বে পার্থর আংটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারক পার্থকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি তো জেলবন্দি। আপনার হাতে এতগুলো আংটি কেন? আপনি জানেন না যে, জেলবন্দিদের হাতে আংটি রাখা যায় না?’ সেই প্রশ্নের উত্তরে পার্থ জানিয়েছিলেন যে, তিনি নাকি নিজের স্বাস্থ্যের জন্য এই আংটি পরেন জ্যোতিষ মেনে।কিন্তু জেলের মধ্যে কোনওধরনের অলঙ্কার পরারই নিয়ম নেই। ইডি জানিয়েছিল, যখন তারা পার্থকে নাকতলার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছিল, তখন আংটি খুলিয়েই আনা হয়েছিল। কিন্তু তারপর কীভাবে তিনি আংটি পেলেন তা জানেন না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। তারপরই জেল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তোলেন বিচারক। এবার এই কাণ্ডে ফের একবার জেল সুপারকে ডাকল পুলিশ।প্রেসিডেন্সি জেল সুপারকে হেস্টিংস থানার তরফ থেকে একটি নোটিশ দিয়ে তলব করা হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি বিতর্কে সুপারকে তলব করা হয়েছে বলে খবর। সিআরপিসি ৪১(এ) ধারাতে নোটিশ পাঠিয়ে জেল সুপারকে হাজিরা দিয়ে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।আদালতে ভর্ত্সনার পর সংশোধনাগারে হাতের আঙুলের আংটি খুলে ফেলেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু এই আংটি বিতর্কে তার পরে অভিযোগ দায়ের করে খোদ কারা দফতর। প্রেসিডেন্সি সংশোধানাগারের সুপারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনে হেস্টিংস থানায় লিখিত অভিযোগ করেন কারা দফতরের ডিআইজি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের অগ্রগতি ১৫ দিন অন্তর আদালতেও জানাতে হবে বলে সূত্র মারফত প্রকাশ ।উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে ইডি বিশেষ আদালতে শুনানির দিন কয়েকটি ছবি আদালতের সামনে তুলে ধরা হয় ইডির আইনজীবীর তরফে। ইডির দাবি , -‘ পার্থ চট্টোপাধ্যায় এতটাই প্রভাবশালী যে তিনি সংশোধনাগারে থেকেও তাঁর হাতের আঙুলে তিনটি আংটি’। ইডির আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনে কার্যত অবাক হয়েছিলেন বিচারক। ভার্চুয়ালি শুনানি চলাকালীন বিচারক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আঙুল দেখতে চান। দেখা যায় সত্যি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আঙুলে আংটি রয়েছে। যদিও আইনি প্রশ্নের মুখে চটজলদি তিনি আংটিগুলো খুলে ফেলেন। এরপরই আংটি কাণ্ডে আদালতে সশরীরে হাজিরা দিয়ে কৈফিয়ত তলব করা হয় সংশোধনাগার সুপারের। তিনি হাজিরা দেন।যুক্তি হিসেবে আদালতে জানিয়েছিলেন গত বছর ৫ অগস্ট যখন পার্থকে সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয়, তখন তার আঙুল এতটাই ফুলে ছিল যে আংটিগুলো খোলা সম্ভব হয়নি। যা শুনে আদালত তীব্র ভর্ত্সনা করে। একইসঙ্গে আদালত জানায়, -‘ তাহলে শুনানির দিন কী ভাবে চটজলদি খুলে ফেললেন আংটি?’ এরেই মধ্যে কলকাতা পুলিশের হেস্টিংস থানায় তলব পড়লো জেল সুপারের।এখন দেখার আত্মপক্ষ সমর্থনে কি বলেন ওই জেল সুপার?