শ্রীজিৎ চট্টরাজ/ গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১৪ মার্চ, ২০২২। ১৭নভেম্বর ১৯৬৬। লন্ডনের লাইসিয়াম বলরুমে ২৩ বছরের এক ডাক্তারি ছাত্রী ১৫ জন প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রথম বিশ্ব সুন্দরীর মুকুট জিতেছিলেন। নাম রিটা ফারিয়া। এখন স্বামী কন্যা ও পাঁচ নাতি নাতনি নিয়ে প্রবাসে থাকেন।
সাম্প্রতিক কালে দেশ বিদেশে সুন্দরী প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তার সমালোচনা করে বলেছেন, এখন এই প্রতিযোগিতা মূল্যহীন। পৃথিবী এখন বাস্তব কিছু সংকটে ভুগছে। নারী পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। এখানে রূপকথার কোনও স্থান নেই।
অনেকেই রিটার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নাই হতে পারেন। যুগ যুগ ধরে মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় আজ অবশ্য শুধু দৈহিক সৌন্দর্য নয়, মানসিক সৌন্দর্য ও বৌদ্ধিক চেতনারও বিচার করা হয়।
এই শহর কলকাতার সঙ্গে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার যোগ ৭৫ বছর আগে। ১৯৪৭ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় কোলকাতার এস্থার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম পান প্রথম মিস ইন্ডিয়া শিরোপা। ১৯৬৭তে একই মুকুট পান তাঁর কন্যা জাহান। মা মেয়ের সেরা মুকুট পাওয়ার ঘটনা কলকাতা কেন, বিশ্বে নজির নেই। যুগ পাল্টেছে।পাল্টেছে রুচি। পাল্টেছে অনেক কিছুই। কিন্তু সৌন্দর্যের খোঁজ আজও চলছে। কলকাতা তার মধ্যে পথিকৃৎ।আজও এই দেশে বঙ্গ ললনাদের কানের পাশে জুলফির তারিফ করে বলেন জুলফে বঙ্গাল।
কলকাতার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার উঠোনে বিলকিস পারভিন চ্যাটার্জি একটি নাম। স্বামী তন্ময়ের সূত্রে চ্যাটার্জি পদবিপ্রাপ্তি। বিলকিস একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ, সমৃদ্ধশালী রাণী। নামের প্রতি সঠিক মর্যাদা রেখেছেন মিষ্টি বিলকিস। সৌন্দর্য ও ফ্যাশন দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ তাঁকে বিবাহিতা ও অবিবাহিতা নারীদের নিজস্ব আত্মসম্মান, ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অস্তিত্বকে সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা চালাতে উজ্জীবিত করেছে।
সম্প্রতি তাঁর সংস্থার পক্ষে নিজস্ব গ্রুমিং এ তৈরি মডেলদের নিয়ে ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হয়েছে স্ট্যাডেল হোটেলে। গত ১২ মার্চ শনিবার পূর্ব কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন টপক্যাট সি সি ইউ এর ফ্লোরে বিলকিসের সংস্থা পি অ্যান্ড সি ফেস অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ২০২২ এর গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হলো।
মোট ১৪জন প্রতিযোগীদের নিয়ে এই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়। তিনটি বিভাগে নির্বাচিত হন প্রতিযোগীরা। জুনিয়র বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন তানিশা মণ্ডল, প্রথম রানার আপ হন অমৃত মিশ্র, বাঙ্গা সারাহ রাও হন অত্যন্ত প্রতিভাধর জুনিয়র। গোল্ড বিভাগে বিজয়ী হন অমৃতা চ্যাটার্জি, প্রথম রানারআপ নাজিয়া পারভিন ও দ্বিতীয় রানার আপ হন মোহর চৌধুরী।
তৃতীয় বিভাগ ছিল প্লাস সাইজ বিভাগ। এই বিভাগে বিজয়ী হন মোনালিসা রানা, প্রথম রানার আপ সুদেষ্ণা চ্যাটার্জি এবং অনন্য সুন্দরী হিসেবে নির্বাচিত হন স্বাতী রায়। তিন মাস ধরে অফ লাইন ও অন লাইন গ্রুমিং করে ১৪ জন প্রতিযোগীকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এরপর সংস্থার তত্ত্বাবধানে দুই রাত্রি তিনদিন আবাসিক ভাবে থেকে প্রতিযোগিতায় যোগদানের জন্য নিজেদের তৈরি করেন বাছাই করা প্রতিযোগীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টেকনো গ্রূপের কো চেয়ারম্যান এবং প্রফেসর মানসী রায়চৌধুরী। এছাড়া গ্রুমিং এ যাঁরা ভূমিকা নেন, এবং প্রতিযোগিতায় যাঁরা বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন তাঁরা হলেন প্রাক্তন মিসেস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল রিচা শর্মা , অভিনেত্রী পায়েল মুখার্জি, শালিনী শ্রীবাস্তব, ফ্যাশন ডিজাইনার ইন্দ্রনীল মুখার্জি, শিল্প উদ্যোগী ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী, সঙ্গীতা সিনহা, অভিনেত্রী ও প্রাক্তন সুন্দরী পুরস্কার বিজয়ী মীনাক্ষী সুদন ও সংস্থার সার্বময়কত্রী বিলকিস পারভিন চ্যাটার্জি।
এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের যোগ্য করে তুলতে গ্রুমিং বিশেষজ্ঞ ডা: সায়ন্তনী সেনগুপ্ত, টিনা গৌড়, বীণা কৌরেরও যথেষ্ট অবদান আছে। সংস্থার পক্ষে তন্ময় চ্যাটার্জি ও বিলকিস পারভিন চ্যাটার্জি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, গত বছর ২০২১ সালে যেমন ভাবে বাংলা আমরা নববর্ষে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছিলাম ঠিক সেই ভাবেই আগামী বাংলা নববর্ষে আমরা মডেলদের নিয়ে বাংলা ক্যালেন্ডার প্রকাশ করবো।
এই অনুষ্ঠানেই সংস্থার পক্ষ থেকে মঞ্চে ডেকে মিডিয়া পার্টনারদের সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম মিডিয়া পার্টনার ছিল নিউজস্টারডম।