মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ),
কর্মরত অবস্থায় সরকারি কর্মী কেউ মারা গেলে,মৃতের পরিবারের তরফে চাকরি মিলতো অনায়াসেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মৃতের স্ত্রী কিংবা তার সন্তানদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠিতে দীর্ঘ বিভাগীয় সরকারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিলতো চাকরি। অবিবাহিত মেয়েরা দাবিদার থাকলেও বিবাহিত মেয়েরা কোনদিন দাবিদার হতে পারতো না বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ির সদস্যা হবার জন্য। তবে ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিশিথা মাত্রে, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছিল পোষ্যের চাকরিতে বিবাহিত মেয়েদের গ্রহণযোগ্য আবেদনের বৈধতা নিয়ে। এই বেঞ্চ বিবাহিত মেয়েদের তাদের বাপের বাড়ির পোষ্যের চাকরিতে দাবিতে বৈধতা জানিয়ে দেয় । এই রায়ের কপি ( ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়) যুক্ত করে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের এক কর্মীর বিবাহিত মেয়ে। আগেও সে কলকাতা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিসে বারবার জানিয়েও কোন সুফল না মেলায় সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি উঠে । সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেয় – ‘কর্মরত অবস্থায় মৃতের চাকরি পাওয়া স্ত্রী – সন্তানের অধিকার নয় ‘। তাছাড়া ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ পোষের চাকরিতে বিবাহিত বলতে যে মাপকাঠি উল্লেখ করেছে তা হল – বিবাহ বিচ্ছিনা, স্বামী পরিতক্তা, বিধবা এবং বাপের বাড়িতে থাকা বিবাহিত মহিলা। এক্ষেত্রে কোনটিই প্রযোজ্য নয় মামলাকারীর সমর্থনে।উচ্চ আদালত সুত্রে প্রকাশ , ২০১৩ সালে কলকাতা পুলিশের কর্মী ভবানী শংকর বোস কর্মরত অবস্থায় মারা যান। মৃতের পরিবারের পক্ষে পোষ্য চাকরির জন্য কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ( হেডকোয়ার্টার) অফিসে আবেদন জানান মৃতের বিবাহিতা মেয়ে বন্দনা ঘোষ। এই আবেদন টি সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিস থেকে খারিজ করে দেওয়া হয় । এই আবেদন খারিজের পরবর্তীতে ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশিথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে পোষ্য চাকরিতে বিবাহিতা মেয়েরাও আবেদনযোগ্য রায় টি ঘোষিত হওয়ায় এই রায় কে হাতিয়ার করে ২০১৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মীর বিবাহিতা মেয়ে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয় । সেখানে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ – ‘ কর্মরত অবস্থায় মৃতের চাকরি পাওয়া স্ত্রী – সন্তানের আইনগত অধিকার নয়’।তাৎক্ষণিক আর্থকস্টের জন্য দ্রুত পেনশন চালু করলে সেই পরিবারের আর্থিক বিষয়টি চাকরির দাবিতে ততটা সমর্থন পাইনা। তাছাড়া ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে পোষ্যের চাকরিতে বিবাহিতা বলতে যে মাপকাঠি উল্লেখ করা হয়েছে, তা মামলাকারী সেই মাপকাঠির আওতায় পড়েনা।