প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল সরকারের মুখ উজ্জ্বল করলেন
ফারুক আহমেদ
পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল নিজেই পাঁচটি পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলেন ১১ ডিসেম্বর ২০২২ রবিবার টেট পরীক্ষা সফল করতে। নির্বিঘ্নে পরীক্ষা সফল করতে তিনি কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রশাসনকে। ছয়টি জেলায় নেট কানেকশনও বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। রবিবার মিডিয়ার সামনে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসুকে। এছাড়াও তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন, টেট পরীক্ষা সমূহের সঙ্গে যুক্ত সকল সদস্যকেই। বাংলার মানুষের মনে তিনি জায়গা করে নিলেন স্বচ্ছতার সঙ্গে টেট পরীক্ষা উত্তরে দিয়ে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দায়িত্ব নিয়েই টেট পরীক্ষা সফল করতে তিনি দৃঢ় সংকল্প বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট থেকেছেন সর্বত্র। রাজ্য সরকারের মুখ উজ্জ্বল করলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল।
রবিবার প্রাথমিকের টেট পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে নির্বিঘ্নে। রাজ্যজুড়ে প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেন। পরীক্ষা ঘিরে আঁটোসাঁটো ব্যবস্থার আয়োজন করেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পরীক্ষা ঘিরে যেকোনও প্রকার অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে সচেষ্ট ছিল রাজ্য সরকারও। পরীক্ষা নির্বিঘ্নে এবং ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে টেট পরীক্ষা হয়েছে একটা গণ উত্সবের মতো, এমনই দাবি করলেন, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বললেন, “টেট ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। একটা ‘ধারণা’ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল আমাদের দফতর নিয়ে। আশা করি আজকের এই পরীক্ষা একটা বার্তা দেবে তাদের জন্য। শুধু তাই নয় সাধারণ মানুষ ও পরীক্ষার্থীদের জন্যও ইতিবাচক বার্তা দেবে আজকের পরীক্ষা।”
উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী আরও বললেন, “এটা একটা গণ উত্সবের মত হয়েছে। একটা দল চেষ্টা চালাচ্ছিল যাতে আমাদের পরীক্ষা বানচাল হয়। একদল সত্যি চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যে ভাবে পরীক্ষা সংগঠিত হয়েছে তাতে তাদের কাছেও বার্তা পৌঁছবে বলেই দাবি করলেন, মাননীয় উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। একইসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি খারিজ করে দিলেন শ্রী বসু। তিনি বললেন, “কোনও প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, কোনও প্রশ্নপত্র লিক হয়নি।…. সবাই হয়তো চাকরি পাবেন না। এটা আজ আমাদের একটা প্রাথমিক পদক্ষেপ হল। নিয়োগের ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপে আমরা যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেব।”
প্রাথমিকের টেটকে নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিল পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল। বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স, মেটাল ডিটেক্টর, কন্ট্রোল রুম, ফ্রিস্কিং সহ করা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পর্ষদ। প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন এই পরীক্ষার জন্য। শেষপর্যন্ত ভালো ভাবেই সম্পন্ন হল।
রবিবার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যাতে সুষ্ঠুভাবে টেট নিতে না পারে, পরীক্ষা বানচাল করা যায়, তার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কড়াহাতে পর্ষদ সেই বিপত্তি এড়িয়ে পরীক্ষা নিল। যা সফল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি মিথ্যে বলেই জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোথাও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছেন। একটি ভুয়ো প্রশ্ন ঘুরছিল, কার প্ররোচনায় জানি না। এটি প্রমাণিত হয়েছে, সম্পূর্ণ ভুয়ো প্রশ্ন। নানান ভাবে পরীক্ষাকে বানচাল করার চেষ্টা হয়েছে। পরীক্ষাকে পিছিয়ে দেওয়ার, ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেগুলিকে অতিক্রম করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ খুব সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে পেরেছে, এটি খুব আশাব্যাঞ্জক।’
নির্বিঘ্নে টেট পরীক্ষা সম্পন্ন করে শিক্ষা দফতর এদিন সরকারের মুখ উজ্জ্বল করলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল নানান সমস্যার সমাধান করে দৃঢ় সংকল্প সঞ্চারিত করে নয়া উদ্যোগে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে সচল করলেন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সমস্ত ডিএলএড কলেজের পঠনপাঠন ও পরীক্ষা সমূহের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে তিনি বদ্ধপরিকর হয়েছেন। অনেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদেকে বদনাম করতে টেট পরীক্ষার এডমিট কার্ড নিয়ে ভুয়ো সংবাদ ছড়িয়েছিলেন সোসাল মিডিয়াতে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফয়দা তোলার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষ এতে অতিষ্ঠ হয়েছেন। সকল অন্যায় অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল। তিনি একই সঙ্গে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খুটিনাটি সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছেন নিমেষেই।
অধ্যাপক ড. গৌতম পাল ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ সালের জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের মেডিকেল সায়েন্সেস এবং ফিজিওলজি বিভাগে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যের প্রথম দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. গৌতম পাল ২০১৯ সালে। বর্তমানে তিনি সহ উপাচার্যের দায়িত্বেই আছেন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে।
ড. গৌতম পাল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের বরিষ্ঠ শিক্ষক এবং বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন।
তিনি একজন অসাধারণ শিক্ষক এবং বিজ্ঞানী। শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও লেখক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে গোটা বিশ্বব্যাপী।
দীর্ঘ ৩১ বছর তিনি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণ এবং গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অধীনে বহু স্নাতকোত্তর এবং পিএইচ. ডি. স্তরের ছাত্র-ছাত্রীরা গবেষণা করে ভারত এবং বিদেশের কলেজে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানজনক পদে আসীন হয়েছেন। সেই সঙ্গে সমান্তরালভাবে সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর গবেষণার কাজ ও লেখালিখি। তাঁর স্নেহধন্য অনেক ছাত্র এবং গবেষক সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় আজ সাফল্যের সঙ্গে কৃতিত্বের ছাপ রাখছেন প্রতিনিয়ত। তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ১৮৩ টি এবং তিনি বিজ্ঞানের উপর বই লিখেছেন ১১ টি।
পরিবেশ বিজ্ঞানের পাঠক্রম তৈরি এবং পরিবেশ বিজ্ঞানের গবেষণায় সমগ্র ভারতের নিরিখে তাঁর অবদান চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। তিনি বিজ্ঞান চর্চায় গ্রন্থ রচনা করে ভারতের পাশাপাশি গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সুখ্যাতিপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় হয়েছেন।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিজ্ঞানের উপর বাংলা ভাষায় রচিত তাঁর এক হাজার পৃষ্ঠার উপরের বইটি দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবত্ বহু পাঠক, ছাত্র-ছাত্রী গবেষকদের সুখপাঠ্য হিসাবে বিবেচিত রয়েছে। সম্প্রতি করোনার এবং মানব মস্তিষ্ক নিয়ে লেখা তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ে অসাধারণ গ্রন্থ দুটো পাঠক দরবারে সমাদৃত হয়েছে।
প্রতিনিয়ত তাঁর লেখা বাংলার দৈনিক কাগজে প্রকাশিত হয়ে আসছে। তিনি গবেষণার পাশাপাশি দক্ষ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দাগ কেটেছেন সবার মনে। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সমাজকে আলোকিত করতেই নতুন দায়িত্ব পালনে আন্তরিক প্রয়াস সার্থক করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন।