খায়রুল আনাম,
প্রার্থী বদলের দাবিতে বিজেপি কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আগুন জ্বালালেন
এবারের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জেলা বীরভূমের নলহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি শিবিরে। তবে, শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে নতুন মুখ নিয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে বিদায়ী বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসও মইনুদ্দিন শামসের দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেও, এই বিষয়টিকে কোনও গুরুত্বই দেয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব। বাম জামানাতে কলকাতা থেকে এসে বামফ্রন্ট শরীক ফরওয়ার্ড ব্লক দলের কলিমুদ্দিন শামস নলহাটি কেন্দ্রের বিধায়ক হয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী হন। পরবর্তীতে বিগত বিধানসভা নির্বাচনে কলিমুদ্দিন শামসের পুত্র মইনুদ্দিন শামস ফরওয়ার্ড ব্লক দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে নলহাটি কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করে বিধায়ক হন। কিন্তু দল এবার তাঁকে প্রার্থী না করে নলহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহকে নলহাটি কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তারপরই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে দলের প্রতি বিষোদগার করতে শুরু করেন মইনুদ্দিন শামস। এমন কী তিনি ‘টাকার বিনিময়ে’ প্রার্থী করার অভিযোগও তোলেন। আরও জানা যায় যে, তিনি তারপর তাঁর পুরনো দল ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সেখানে তাঁকে কোনও গুরুত্ব না দিয়ে ‘প্রায় তাড়িয়ে দেওয়া হয়’ বলে বলা হয়। এরপরই তিনি নলহাটি কেন্দ্রেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। নলহাটি কেন্দ্রে মহাজোটের ফরওয়ার্ড ব্লক দলের ওই কেন্দ্রের এক সময়ের বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণাও করে দেওয়া হয়েছে। এবার নলহাটি কেন্দ্রের জন্য বিজেপি শিল্পপতি তাপসকুমার যাদবের নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতেই, তা নিয়ে দলীয় স্তরে অন্যান্য অনেক কেন্দ্রের মতো এখানেও বিজেপি কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। দলের এই ঘোষিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবার সরাসরি প্রতিবাদ ও সংঘাতের পথে পা বাড়ালেন নলহাটির বাসিন্দা তথা জেলার আমন্ত্রিত সদস্য অনিল সিং। দলের তিনবারের পরাজিত এই প্রার্থী স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন, নিজের জমি-জায়গা বিক্রি করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিকূল অবস্থার সাথে লড়াই করে, এলাকায় দলকে একটা শক্ত জায়গায় যখন নিয়ে এলাম তখন, তাঁকে বাদ দিয়ে মাস ছয়েক আগে দলে আসা এক বিত্তশালী শিল্পপতিকে প্রার্থী করে দেওয়া হলো। আর এজন্য তিনি দলের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার নাম করেই অভিযোগ করেন যে, ধ্রুব সাহা একটা অযোগ্য লোক। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। আর এজন্য আমি ও আরও অনেকেই দলের পদ ও দলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগও করলাম। ধ্রুব সাহার মতো অযোগ্য লোক যতদিন জেলা সভাপতি থাকবেন, ততোদিন তিনি দলেও ফিরবেন না বলে জানিয়ে দেন। দলের ঘোষিত প্রার্থী বদলের দাবি উঠেছে নলহাটির পাশের কেন্দ্র মুরারইয়ে। ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে দেবাশিস রায়কে। কিন্তু ওই প্রার্থীকে মেনে নিতে চাইছেন না দলের একটা বড় অংশই। শনিবার ২০ মার্চ মুরারই বিধানসভার চার সাধারণ সম্পাদক, মণ্ডল ও বুথ শক্তি প্রমুখ এবং জেলা কমিটির দুই সদস্য দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ই-মেল করে জানিয়ে দেন যে, মুরারই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করা না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। কিন্তু দল এ ব্যাপারে আগের অবস্থানেই থেকে যাওয়ায় সোমবার ২২ মার্চ সকালে বিজেপি কর্মীরা প্রথমে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। পরে তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে রাস্তায় টায়ার জ্বেলে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, দল প্রার্থী বদল করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ের তালাও খোলা হবে না। এদিকে দলের জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা জানিয়ে দিয়েছেন, দলের প্রার্থী নির্বাচন করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আজ যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা দলের দুর্দিনের কর্মী। আজ দলের সুদিনে প্রার্থী হতে পারছেন বা বলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।।