বর্ধমানে পুলিশের বদলী ঘিরে উঠছে প্রশ্নচিহ্ন

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

একুশে বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে বড় ইস্যু হিসাবে পরিচিতি পাচ্ছে কয়লা ও গরু পাচার মামলা।গরু পাচারের মামলায় মূল অভিযুক্ত এনামুল হক অবশ্য জেল হেফাজতে রয়েছেন। তবে কয়লা পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা মামলা দাখিলের পর দেখেই বেপাত্তা। লালা তার আইনজীবীদের মাধ্যমে অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ সর্বপরি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টেও মামলার এফআইআর বাতিল সহ অন্তবর্তী জামিনের জন্য ছোটাছুটি চালাচ্ছেন। তবে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট লালার আইনী রক্ষাকবচ চাওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। তার উপর ওইদিনই সিবিআইয়ের কলকাতা শাখা অফিস থেকে লালার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে চার জেলার এসপি এবং ডিএম সাহেবদের চিঠি দিয়েছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অবগত করে ৭০ জায়গায় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবার উদ্যোগ নিয়েছে এই মামলার তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। গত ১৮ ই ফেব্রুয়ারিতে আসানসোলের সিবিআই এজলাসে ফেরার কয়লা মাফিয়া লালার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবার নির্দেশ জারি হয়েছিল। ইতিমধ্যেই এই মামলায় আরেক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি রাজ্যের ১২ টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছিলো কেন্দ্রীয় বাহিনী সাথে নিয়ে।কয়লা পাচার মামলায় যোগসূত্রকারী ‘ফেরার’ বিনয় মিশ্রের তথাকথিত  আত্মীয় বাঁকুড়ার আইসি মিশ্র বাবু কে দফায় দফায় জেরা করে সিবিআই সন্তুষ্ট নয়।উল্লেখ্য,  এই মামলায় দশের বেশি পুলিশ অফিসার সিবিআইয়ের জেরা করার  ডাক পেয়েছেন। কেউ কেউ এই ডাক (জেরা) পাওয়ার  নোটিশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টেরও দারস্থ হয়েছিলেন। তবে কোন নির্দেশ এখনো হাইকোর্ট দেয়নি প্রেরিত নোটিশ এড়িয়ে যাওয়ার।ঘটনা যাই হোক, পশ্চিম বর্ধমান জেলা পুলিশ মহলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ অফিসার জানাচ্ছেন – ” গত দুই থেকে তিনমাসে পুলিশের বদলী গুলিকে আতশকাঁচে রাখলে অনেককিছুই মিলবে, যা সিবিআই আশা করতে পারবেনা “। আবার কেউ কেউ জানাচ্ছেন নাম গোপন রাখার শর্তে – ” বর্ধমান শহরের দুটি আবাসন নগরীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট গুলি বেনামে কারা রেখেছে তা খতিয়ে দেখুক ইডি”। বিশেষ সুত্রে প্রকাশ, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কয়লা মাফিয়া অনুপ মাঝি ওরফে লালার মূল বাণিজ্যকেন্দ্র এলাকার এক আইসি বদলী করে নেন লালার বসতবাড়ি এলাকায়।যাতে মান্থলী পেমেন্ট চালু থাকে! আবার লালার বেনামে থাকা দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এলাকার এক পুলিশ অফিসার প্রমোশন পেয়েও থানা ছাড়ছেন না।তাঁকে অবশ্য থানাতেই পাওয়া যায়না বেশিরভাগ সময়।বিভিন্ন সাহেবের কাছে থাকেন তিনি আবার।পশ্চিম বর্ধমান জেলার কয়লার ‘আতুরঘর’ থানার এক পুলিশ অফিসার  বদলীর নির্দেশের পর অতিরিক্ত দুমাস কাটিয়েদেন। স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ,  ওই থানায় মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার লেনদেন নাকি চলে।তিনি প্রমোশন পেয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় পোস্টিং পেয়েও অন্য জেলার গরু পাচারের মূল কেন্দ্র এলাকাতে থানার দায়িত্ব নেন।মাঝখানের পদটি তিনি দায়িত্বভার না নিয়েই চলে যান বর্তমান জায়গায়।যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ অফিসারদের দাবি – ‘ সিবিআই যদি সংশ্লিষ্ট থানা গুলির ওসি /আইসি পদে থাকা পুলিশ অফিসারদের ট্যাক্স দেখা লোকদের চিহ্নিত করে থাকে । তাহলে তাদের মাধ্যমে কয়লা ও গরু পাচার মামলায় হাওলা সম্পত্তি গুলির সন্ধান পেতে পারে’। আবার কেউ কেউ বলছেন – ‘ বেআইনী নগদ টাকা পুলিশের কেউ কেউ স্থানীয় মহাজনদের কাছে ‘ইনভেস্ট’ করে টাকার রাশি দুর্দান্তগতিতে এগিয়ে নিয়ে যান!’ পশ্চিম বর্ধমান এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার গত দুই থেকে তিনমাসে পুলিশের বদলী ঘিরে প্রশ্ন দেখা গেছে। রাজ্যের এডিজি ( আইনশৃঙ্খলা)  দ্বারা আইসি পোস্টিং এর নির্দেশ জারি যেমন করা হয়েছে, আবার তেমনি তা বাতিল ঘোষণাও করা হয়েছে নোটিশের মাধ্যমে। যেসব থানার আইসি পোস্টিং হয়েছিল একসময়, তার সিংহভাগ থানায় ওসিরাই দায়িত্ব সামলাছেন আবার!তবে ব্যতিক্রমী হিসাবে কেউ কেউ থানায় আইসি দায়িত্বভার নিয়ে নেন জটচলদি।  এখন দেখার সিবিআইয়ের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এইসব বিষয়ে মাথা ঘামায় কিনা? 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *