বাঁশিপুরের গাজন

Spread the love

সাধন মন্ডল বাঁকুড়া:-চৈত্র সংক্রান্তিতে বঙ্গ জুড়ে গাজন উৎসবে মেতে ওঠে সারা বাংলার মানুষজন। বিভিন্ন সৈবতীর্থ গুলিতে শিব ভক্তদের ভিড় দেখা যায় ও গাজন উৎসব হয়। তেমনি বাঁকুড়া জেলার একটি জনপদ। হল সিমলাপাল থানার দুবরাজপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাঁশিপুর। এই গ্রামে একটি ছোট্ট জলাশয়ের ভিতরে শিব লিঙ্গ বিরাজমান। এই জলাশয়ের শৈব তীর্থটির নাম হল বানেশ্বর। স্বপ্নাদেশ অনুসারে তথাকথিত তফসিলি জাতি ভুক্ত পাহান বা লোহার সম্প্রদায়ের মানুষজন এই শিবের পুরোহিত। পুরোহিতদের মধ্যে মিহির লোহার, দিলীপ লোহার ,জয়ন্ত লোহার ,শ্রীকান্ত লোহার ,তাজু লোহার , একই বংশের ছেলে। বংশপরম্পরায় এদের হাতেই বানেশ্বর পূজিত হয়ে আসছেন কয়েকশো বছর ধরে। পুরোহিতরা জানালেন ,আমরা কোন বৈদিক মন্ত্র জানিনা। বাবা বানেশ্বর কে আমাদের অন্তর দিয়ে পূজা করি।
এই মূর্তিটি আছে ১৫ ফুট ব্যাসার্ধের একটি জলাশয়ে,যার গভীরতা প্রায় ২৫ ফুট । শিলাবতী নদীর কাছাকাছি এই জলাশয়টি অবস্থিত, ফলে সারা বছর বানেশ্বর জলের তলায় নিমজ্জিত থাকেন। মেলা কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত অনেকেই জানালেন ,অতি প্রাচীনকালে শিলাবতী নদীতে কোন এক প্রবল বন্যায় ভেসে এসেছিল এই মূর্তি। এই কারণেই নাম বানেশ্বর। মিহির লোহার জানালেন ,প্রসন্ন পাহান (লোহার) নামে আমাদের এক পূর্বপুরুষ বানেশ্বর বাবার স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেন । সেই থেকে বংশপরম্পরায় এই পুজো করে চলেছি। পুজো প্রসঙ্গে তিনি জানালেন ,গভীর এই জলাশয়টি জলশূন্য করার কাজ শুরু হয় প্রতিবছর চৈত্র মাসের ২০ তারিখে। কোন পাম্পসেট নয়, কলসি করে জল শূণ্য করার রীতি, এই কাজে পাশাপাশি সকল গ্রামের মানুষ হাত লাগান। দেব মাহাত্ম্য অনুসারে প্রতি দিন জল শূণ্য করতে হয় এবং সারা বৈশাখ মাস নিত্য পুজো হয়। আশ্চর্যের বিষয় বৈশাখ মাসে খুব একটা বেশি জল ভর্তি হয় না। বৈশাখ সংক্রান্তির পুজো শেষ হওয়া মাত্রই জলাশয়টি জলে পূর্ণ হয়ে যায়। ফের এক বছরের প্রতীক্ষা। এই স্থানে বানেশ্বর মহাদেবের সাথ সাথে ,খাঁদারানি, চন্ডী সহ একাধিক দেবদেবীর মূর্তি আছে। পুজো উপলক্ষে চৈত্র সংক্রান্তির দিন মেলা বসে। বর্তমানে পুজো কমিটি প্রায় ২৫ বছর ধরে এ দিন থেকে ২৪ প্রহর ব্যাপী রাধানাম সংকীর্তনের আয়োজন করে আসছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
লোকশ্রুতি এটি একটি বহু প্রাচীন জৈন মূর্তি। প্রয়াত গবেষক চিত্তরঞ্জন সিংহবাবুর মতে মূর্তিটি স্ত্রী লিঙ্গ।

চৈত্র সংক্রান্তিতে এই মেলা উপলক্ষে ১০ থেকে১৫ হাজার মানুষের জন সমাগম ঘটেছে বলে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে জানা যায়। এখানে এই একদিনেই মেলা খুব জমে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *