বাংলার বিধানসভা ভোটে মিমের অবস্থান ঘিরে প্রশ্নচিহ্ন

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন,


একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে আদৌও কি প্রার্থীপদ ঘোষণা করবে মিমের সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি? একাধারে মিমের রাজ্য নেতার দলত্যাগ করে আলাদা দল ঘোষণা করা।তাও নন্দীগ্রামে গিয়ে তৃণমূল নেত্রীর ভোট প্রচারে এই নব রাজনৈতিক দলের সামিল হওয়ার  ঘোষণা। অন্যদিকে ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের মিম নিয়ে উচ্চবাচ্য না করা ঘটনা গুলি ক্রমশ রাজনৈতিক প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম দল কে ঘিরে।সাম্প্রতিক বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে চমকপ্রদ ফল করে তেলেঙ্গানার আসাদউদ্দিন ওয়াইসির মিম।কুড়ির কাছাকাছি আসন লড়ে পাঁচটি আসন কেড়ে নেয় তারা।রাজনৈতিক কারবারিদের মত, মিম ভোট টা কাটলে এবারে বিহারের মসনদে বসতেন লালু পুত্র।এখন এইসব অতীত, সামনেই বাংলার বহু চর্চিত একুশে বিধানসভা নির্বাচন।তাই বিহার লাগোয়া বাংলার বিশেষত উত্তরবঙ্গের মুর্শিদাবাদ – মালদা – উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কমপক্ষে কুড়িটি আসন নিয়ে চিন্তিত শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী সহ তৃনমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব হায়দ্রাবাদের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কে বরাবর রাজনৈতিক  আক্রমণের নিশানা করেছে এবং করছে।এমতাবস্থায় মাস খানেক আগে হঠাৎ ভাঙরের এক সভা ঘিরে বাংলায় আবির্ভাব ঘটে ভাইজানের।কে এই ভাইজান?  ভারতের ইসলামিক ইতিহাসে ফুরফুরা শরীফ এক উজ্জ্বল নিদর্শন। সব ধর্মাবলম্বী এবং প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই অবাধ যাতায়াত এখানে।এখানকার পীরজাদাদের একজন হলেন আব্বাস সিদ্দিকি। সেখানে গত ৩ জানুয়ারি কোন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছাড়াই চলে আসেন মিমের সুপ্রিমো তথা সাংসদ আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি। আব্বাস সিদ্দিকির সাথে একান্তে রাজনৈতিক আলোচনা সারেন ওয়াইসি।চলনে-বলনে সংবাদমাধ্যম কে বুঝিয়ে দেন – ‘বাংলায় মিম চলবে আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বে ‘।  এরেই মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি কলকাতা প্রেসক্লাবে আব্বাস সিদ্দিকি ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ নামে এক রাজনৈতিক দল গড়েন।যেখানে সমস্ত তথাকথিত সংখ্যালঘুদের নিয়ে সংখ্যাগুরু ভোট আদায়ের কৌশল রয়েছে। শুধু মুসলিম (৩০%)  নয় আদিবাসী, দলিত হিন্দু সর্বমোট ৮০% ভোটারদের লক্ষমাত্রা রাখা হয়েছে। সেখানে আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি মিম উর্দু ভাষী মুসলিমদের দল হিসাবে পরিচিত। তাই গত ৩ জানুয়ারি হুগলির ফুরফুরা শরীফে আসা মিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির আব্বাস সিদ্দিকির নেতৃত্বে চলার  বক্তব্য মানানসই নয় বর্তমান সময়কালে।একাধারে খোলসা করে আব্বাস সিদ্দিকি মিম নিয়ে উচ্চবাচ্য যেমন করছেন না।ঠিক তেমনি নিজমত করে মিম সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বাংলায় দলীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছেন ইতিমধ্যেই । হয়তো তিনি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না ভাইজানের উপর?  ইতিমধ্যেই ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজান ছোটবড় মিলিয়ে দশের বেশি রাজনৈতিক দলকে নিজের জোটে এনেছেন। যারমধ্যে ঝাড়খন্ডের আদিবাসী দল গুলি রয়েছে । কংগ্রেস – সিপিএমের কাছে মিম অচ্ছুৎ হলেও, আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিয়ে কোন আপত্তি নেই। ত্রিশের কাছাকাছি আসন পেয়েছে আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের সেকুলার ফ্রন্ট। যার সিংহভাগ আসনের প্রার্থীও ঘোষণা হয়ে গেছে। একুশে বিধানসভার নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই যেন আব্বাস সিদ্দিকি ও ওয়াইসির মিমের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।ওয়াকিবহাল মনে করছে – ‘ভাইজান হয়তো বুঝেছেন শুধু মুসলিম ভোট নিয়ে লড়াই করলে সাফল্য ভালো আসবেনা, তাই আদিবাসী – দলিত হিন্দুদের একছাতায় আনার চেস্টা চলছে।তাতে মিম কে শেষপর্যন্ত ত্যাগও করতে পারেন!’ অপরদিকে বাংলার আসন্ন বিধানসভার প্রাক্কালে তেলেঙ্গানা – বিহারের বিধায়ক সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের পর্যবেক্ষক পদে নিয়োগ করেছেন মিমের সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন  ওয়াইসি।তেলেঙ্গানার নামপল্লির বিধায়ক জাফর হুসেন এবং এফেন্দির বিধায়ক মির্জা রিয়াজ উল হাসান কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা, হাওড়া,হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম  মেদনীপুর, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা।বিহারের আমোর বিধায়ক আখতার উল হাসান এবং বিহারের মিমের যুব সভাপতি আদিল হাসান কে মুর্শিদাবাদ বীরভূম ও নদীয়া জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিহারের জোকিহাট এবং কোচাদ্বোমানের বিধায়ক হাজি মহম্মদ ইজাহার আসফি কে দেওয়া হয়েছে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা।শুধু মালদা জেলার দায়িত্বে পর্যবেক্ষক পদে আনা হয়েছে বাইসির বিধায়ক সইদ রুকনুদ্দিন আহমেদ এবং বাহাদুরগঞ্জের বিধায়ক অঞ্জর নইমি কে।তবে এখন কোন প্রার্থী ঘোষণা করেনি মিমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যার জেরে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলত্যাগ করে আলাদা দল ঘোষণা করেছেন।ওই দল আবার বিনা আমন্ত্রণেও নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেত্রীর ভোট প্রচারে সামিল হবে।এখনো একমাস হাতে নেই বাংলায় বিধানসভা ভোট হতে।সেখানে মিমের সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি দলীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করলেও এখনো কোন প্রার্থী ঠিক করেনি তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ‘ মিম সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের উপর দক্ষিণবঙ্গের রাশ ছেড়ে দিলেও উত্তরবঙ্গের দশের বেশি আসনে প্রার্থীপদ অত্যন্ত গোপনে হয়তো তৈরি করে রেখেছেন। মূলত বিহার সীমান্তে থাকা উত্তরবঙ্গের আসনগুলিকে টার্গেট করে রেখেছেন মিম সুপ্রিমো। সেজন্য হয়তো আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজান বর্তমানে উত্তরবঙ্গের এই আসন গুলিতে সেভাবে সংযুক্ত মোর্চার সাথে আসন ভাগাভাগিতে যাচ্ছেন না! ‘

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *