বকেয়ার দাবিতে মমতার ধর্ণাকে সমর্থন
বামেদের গুরুত্ব না দিয়ে মোদী বিরোধী ইন্ডিয়া রাষ্ট্রীয় জোটের পক্ষে জয়রাম রমেশ
খায়রুল আনাম
আসন্ন লোকসভা ভোটের লক্ষ্যেই যে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা সাংসদ রাহুল গান্ধী তাঁর এবারের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা-য় বেরিয়েছেন তা স্পষ্ট। আর এক্ষেত্রে তিনি লোকসভার কংগ্রেস নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর মুর্শিদাবাদ জেলাকে যেমন বেছে নিয়েছেন তেমনি, তার পাশের জেলা বীরভূমকেও তিনি তাঁর এই ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় রেখেছিলেন। মনে করা হচ্ছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে থাকা বীরভূমের দু’টি লোকসভা আসন বীরভূম ও বোলপুরকে পাখির চোখ করে এবারও জেতার লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপাবে বিজেপি। কেননা, বিগত দিনে লোকসভা ভোটের আগে এজেলায় এসে বিজেপির দুই মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জনসভা করে গেলেও ভোটের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটে জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান কাণ্ডারী অনুব্রত মণ্ডলের লোকসভার ভোট ময়দানে থাকার তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। গোরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে তিনি এখন তিহাড় জেলে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। আর এই সুযোগটাকেই এবার কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। জেলায় অন্তত একটি আসনও ঘরে তুলতে বদ্ধ পরিকর বিজেপি। সে ক্ষেত্রে বিজেপি বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়কে হারাতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। তিনবারের সাংসদ শতাব্দী রায়কে যে চতুর্থ বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করছে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি এখানে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে এনে প্রার্থী করতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও দুধকুমার মণ্ডল এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামও ভাবনার মধ্যে রয়েছে। বিগত লোকসভা ভোটে বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দী রায় ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭০ টি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। বিজেপির দুধকুমার মণ্ডল পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৫৩ টি ভোট। আবার শুক্রবার ২ ফেব্রুয়ারি রাহুল গান্ধী তাঁর বীরভূমে যে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা করেন তার পুরোটাই ছিলো বীরভূম লোকসভার অধীনে। রাহুল গান্ধীর এই যাত্রাকালে তিনি মুর্শিদাবাদ হয়ে বীরভূমে আসেন। সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাহুল গান্ধীর পাশে এসে যেমন ভিড়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তী তেমনি বীরভূমের রামপুরহাটে তাঁর কাছে এসেছেন সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ। যাঁরা এখন চাইছেন না, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটে শামিল হয়ে রাজ্যে আসন ভাগাভাগিতে যাক। রাজ্য বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম এখন চাইছে, লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোট ভেঙ্গে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে গিয়ে অন্তত কিছুটা হলেও নিজেদের দুর্দশা কাটিয়ে পায়ের নীচে মাটি খুঁজে পেতে। কিন্তু রাহুল গান্ধীকে এই যাত্রায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে শোনা যায়নি।
আর এই প্রেক্ষিতেই কিন্তু রামপুরহাটে এসে হাজির হন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা জয়রাম রমেশ। লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোটে যাতে কোনও আঁচড় এখনই না লাগে তা তিনি নিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছেন। জয়রাম রমেশ রামপুরহাটের মাড়গ্রামে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে ও রাজ্যের বকেয়া পাওনার দাবিতে কলকাতার ধর্ণা-আন্দোলনকে সমর্থন করে কেন্দ্রের বিজেপির নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, যে রাজ্যে বিরোধী দলের সরকার রয়েছে, সেই দলের প্রতি বৈষম্য করছে মোদী সরকার। এটা যে কেবল পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে তাই নয়। কর্ণাটক, হিমাচল, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডেও হচ্ছে। সেইসাথে তিনি স্পষ্ট করেন যে, রাহুল গান্ধীর এই ভারত জোড়ে ন্যায় যাত্রা কংগ্রেস কর্মীদের শক্তি বাড়াবে। ইন্ডিয়া জোট রাষ্ট্রীয় ভোটের জন্য । পশ্চিমবঙ্গ বা অন্য কোনও রাজ্যের বিধানসভা ভোটের জন্য নয়। রাজ্যে আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভোটে আমরা বিরোধীরা একত্রিত হয়ে বিজেপি ও আরএসএসকে হারাবার কথা বলছি। যার অনিবার্য অর্থই হলো, ইন্ডিয়া জোটে না থাকার কথা বলা সিপিএমের অস্তিত্বের সঙ্কট আরও ত্বরান্বিত করা।
ছবি : মাড়গ্রামে জয়রাম রমেশ।