বার কাউন্সিল কে স্মারকলিপি ‘সারা বাংলা আইনজীবী ঐক্য মঞ্চে’র
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
চলতি সপ্তাহে কলকাতার সিটি সিভিল কোর্টে অবস্থিত বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের অফিসে একগুচ্ছ দাবি কে সামনে রেখে স্মারকলিপি দিল রাজ্যস্তরের এক আইনজীবী সংগঠন। ‘সারা বাংলা আইনজীবী ঐক্য মঞ্চ’ এর বিভিন্ন আদালতের ৫০ জনের বেশী সদস্যগণ সম্মিলিত ভাবে আইনজীবী ও আইন পেশার স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল-এ স্মারকলিপি জমা দেন । দাবী গুলি হল :-
১) অবিলম্বে “The West Bengal Advocates Welfare Corporation Act, 2012” অনুসারে আইনজীবিদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে ।২) অবিলম্বে সকল আইনজীবিদের চিকিৎসাবীমা ৫ লক্ষ টাকা ও জীবনবিমা ১৫ লক্ষ টাকার আওতায় এনে সুরক্ষা প্রদান করতে হবে ।৩) করোনা কালে আইনজীবিদের পেশাগত ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতি আইনজীবীকে এককালীন ২ লক্ষ্য টাকা করে দিতে হবে ।৪) করোনা আক্রান্ত মৃত আইনজীবিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা করতে হবে ।৫) অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গের সকল আদালতের কাজ স্বাভাবিক করতে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলকে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে ।৬) সারা রাজ্যে আইনজীবিদের পেশাগত হেনস্থা রুখতে পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে ।৭) পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলকে অবিলম্বে আইন পেশায় দালাল রাজের অবসান ঘটিয়ে আইনজীবিদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে হবে ।৮) পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে এ নথিবদ্ধ আইনজীবিদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে ।এই আইনজীবী সংগঠনের কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন – ‘”আমরা স্মারকপত্র তুলে দিয়েছি, এখন দেখার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রতিনিধিরা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?”। সম্প্রতি রাজ্যের মৃত আইনজীবীদের পরিবারের পাশে একসাথে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের ‘ওয়েস্টবেঙ্গল এডভোকেট ওয়েলফেয়ার ফান্ড ‘ এবং ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এডভোকেট ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ এর চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক জানিয়েছিলেন – “করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবার পিছু দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা”। পাশাপাশি ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ এর কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান শ্যামল ঘটক,ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন – ” মৃত আইনজীবীদের পরিবার পিছু ৩০ হাজার টাকা এবং করোনা পজিটিভ আইনজীবীদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে আবেদনের ভিক্তিতে “। অর্থাৎ একজন করোনায় নিহত আইনজীবীর পরিবার দু তরফে সর্বমোট ৮০ হাজার টাকা পাচ্ছেন। এতে খুশি আইনজীবীদের একাংশ। সম্প্রতি রাজ্যের আইনজীবীদের কাছে মৃত আইনজীবী এবং চিকিৎসাধীন আইনজীবীদের তালিকা চেয়েছিল ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’।গত মাসে এই বিষয়ে ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র তরফে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেখানে করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবার এবং চিকিৎসাধীন আইনজীবীদের উপযুক্ত তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে তালিকা দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এই অরাজনৈতিক আইনজীবীদের সংগঠন এই বিষয়ে সিটি সিভিল কোর্টে অবস্থিত ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র অফিসে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল।তবে আইনজীবীদের করোনা ভ্যাক্সিন নিয়ে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল কোন ভূমিকা না নেওয়ায় সেই ক্ষোভ রয়েছে অনেকেরই। তবে জেলার বিভিন্ন মহকুমা / সদর আদালতের বার এসোসিয়েশন এমনকি কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন নিজ নিজ উদ্যোগে করোনা ভ্যাক্সিন দেওয়ার কর্মসূচি চালাচ্ছে।মারণ ভাইরাস করোনা আবহে দেড় বছর সময়কালে একপ্রকার ‘বেকার’ বলা যায় রাজ্যের সিংহভাগ আইনজীবী। ষাট হাজারের বেশি নথিভুক্ত আইনজীবী যেমন পেশাগতভাবে বিপন্ন, ঠিক তেমনি মারণ ভাইরাস করোনায় শতাধিক আইনজীবী প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। কলকাতা হাইকোর্ট সহ শহরতলীর বিভিন্ন আদালত সেইসাথে জেলা ও মহকুমা আদালতগুলিতে একের পর এক আইনজীবী মারা যাচ্ছেন করোনা পজিটিভ হয়ে।কলকাতা হাইকোর্ট এর কয়েকজন প্রাক্তন বিচারপিতি, প্রাক্তন জেলাজজ সহ সিজেএম পদমর্যাদাপূর্ণ বিচারকও মারা পড়েছেন এই মারণ ভাইরাস করোনা তে।আর নিহত আইনজীবীদের সংখ্যাটা ক্রমশ দীর্ঘ। আলিপুর জজকোর্ট এবং পুলিশকোর্টের শঙ্করশন রায়, ভাস্কর সেন,কৌশিক মুখার্জি, রীতা মন্ডলদের মত আইনজীবীরা যেমন মারা গেছেন। ঠিক তেমনি হাওড়া জেলাকোর্টের মহুয়া সেন,সেখ হায়দার আলী, রথীন চক্রবর্তী প্রমুখ আইনজীবী মারা গেছেন।কলকাতা হাইকোর্টের শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যাংকশাল আদালতের তন্ময় কুমার দত্ত,শীতেষ দত্ত চৌধুরী, প্রমুখ মারা গেছেন। জঙ্গীপুর কোর্ট,মুর্শিদাবাদ, তমলুক, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান প্রভৃতি জেলা ও মহকুমা আদালতে গড়ে পাঁচের বেশি আইনজীবী মারা পড়েছেন এই মারণ ভাইরাস করোনাতে। টানা দেড় বছরের বেশি সময়কালে আদালত একপ্রকার ‘অচল’ ছিল বলা যায়।যেখানে মক্কেলদের সেভাবে দেখা নাই,সেখানে রোজগার আর কোথায়? তার উপর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আইনজীবী মারা গেলে সেই পরিবারের দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটানো অত্যন্ত দুস্কর।তাই আইনজীবীদের বড় অংশ একাধারে যেমন রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছে, ঠিক তেমনি বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের মুখাপেক্ষী তাঁরা।কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বৈদুর্য্য ঘোষাল জানিয়েছেন -” দেরীতে হলেও রাজ্য সরকার ও বার কাউন্সিল পাশে দাঁড়াচ্ছে জেনে আমরা খুশি তবে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ টি যথেষ্ট নয়”। ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র তরফে আনসার মন্ডল জানিয়েছেন – ” আমরা কর্ণাটক বার কাউন্সিলের আগেই করোনা আক্রান্ত আইনজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।তবে কোন আইনজীবী আক্রান্ত হলে তাঁর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট সহ লিখিত আবেদন জানাতে হবে। এছাড়া নিহত আইনজীবীর পরিবারকেও লিখিত আবেদন জানাতে হবে আর্থিক সহযোগিতার জন্য। এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে “।সেইসাথে করোনা আবহে ‘অভাবী’ আইনজীবীদের ৩ হাজার টাকা গড়ে সর্বমোট ৫ কোটি টাকা সাহায্য করেছিল বার কাউন্সিল বলে জানা গেছে । সেইসাথে কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের পক্ষে বিত্তশালী আইনজীবীরা চাঁদা তোলে অভাবী আইনজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল একসময়। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ষাট হাজারের বেশি নথিভুক্ত আইনজীবী রয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন নিম্ন আদালতে তাঁরা পেশাগতভাবে যুক্ত।বিগত দেড় বছরে তাঁরা একপ্রকার ‘কর্মহীন’ ছিল বলা যায় মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্তে।কেননা আদালত গুলি ভার্চুয়াল শুনানিতে জোর দিয়েছে করোনার সংক্রমণ এড়াতে। শুধুমাত্র জামিনের আবেদন ছাড়া অন্য কোন শুনানি সেভাবে চলছিলনা নিম্ন আদালত গুলিতে।আইনজীবীদের সুত্র মারফত প্রকাশ, তিন হাজারের বেশি আইনজীবী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দেড়শোর বেশি আইনজীবী। একেই কর্মহীন তার উপর ব্যয়বহুল করোনার চিকিৎসায় সর্বশান্ত তাঁরা। তাই আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি – আক্রান্ত আইনজীবীদের চিকিৎসায় এবং নিহত আইনজীবীদের পরিবারের উপর আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক রাজ্য সরকার ও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।আইনজীবীদের এই সংগঠন আইনজীবিদের আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে বার কাউন্সিল কে আবেদনও করে থাকে।আইনজীবীদের রেজিষ্ট্রেশন থেকে ল কলেজ থেকে যা আর্থিক আয় হয়, তাতে এহেন অতিমারী পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের সহযোগিতা করা উচিত বলে অনেকেরই দাবি।অনেকেই বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের ইমেলে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র তরফে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেখানে করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবার এবং চিকিৎসাধীন আইনজীবীদের উপযুক্ত তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে। দেরিতে হলেও বার কাউন্সিলের এই ভূমিকায় খুশি রাজ্যের একাংশ আইনজীবী।এরেই মধ্যে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এডভোকেট ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ এর চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক রাইটার্স বিল্ডিংয়ে জানিয়েছিলেন – ” করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবার পিছু ৫০ হাজা টাকা দেওয়া হবে”। পাশাপাশি বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের তরফে জানানো হয়েছে – ‘”করোনায় মৃত আইনজীবীদের পরিবার পিছু ৩০ হাজার টাকা এবং করোনা পজিটিভ আইনজীবীদের ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে আবেদনের ভিক্তিতে “। এরেই মাঝে নিহত আইনজীবীর পরিবার কে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৮০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৫ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি করা এবং বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত আইনজীবীদের তালিকা প্রকাশ করা সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে বার কাউন্সিল কে স্মারকলিপি দিল ‘সারা বাংলা আইনজীবী ঐক্য মঞ্চ’ নামে আইনজীবীদের রাজ্যস্তরের এক সংগঠন।