বাল্য বিবাহ বন্ধের ব্যাপারে একযোগে জেলাব্যাপী বিশেষ সচেতনতা মূলক কর্মসূচি পালন
সেখ রিয়াজুদ্দিন,বীরভূম
বীরভূম জেলার বুকে মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে বাল্যবিবাহ। যারফলে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসন সহ অন্যান্য দপ্তরে। পড়াশোনা, সঠিক বয়সে বিবাহের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী চালু করেছেন কন্যাশ্রী,রুপশ্রী প্রকল্প তবুও কমছে না বাল্য বিবাহ। সরকারি ভাবে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান সহ নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় বাল্যবিবাহ রোধে। তথাপি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না যারপরনাই জেলা প্রশাসন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও আধিকারিকদের নিয়ে জেলা জুড়ে একযোগে সর্বত্র বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হয় সোমবার ২৪ মার্চ । জানা যায় যে বীরভূম জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে (অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত)সকাল এগারোটা থেকে বাল্যবিবাহ বিরোধী পদযাত্রার আয়োজন করা হয় । ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা মূলক শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে স্থানীয় এলাকা পরিক্রমা করে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের ছবি, ভিডিও জেলা প্রশাসনকে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । বাল্যবিবাহের জেলা পরিসংখ্যানে জানা যায় ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সিউড়ি মহকুমায় চুয়াল্লিশটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গিয়েছে কিন্তু ৩২১৮টি বাল্যবিবাহ রোখা যায় নি। রামপুরহাট মহকুমায় ৪৩টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গিয়েছে কিন্তু ৫৩৯৮টি বাল্যবিবাহ রোখা যায় নি । বোলপুর মহকুমায় ১৪০টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা গিয়েছে কিন্তু ১৮৬০টি বাল্যবিবাহ রোখা যায় নি। মুরারই ২ নম্বর ব্লক,মুরারই ১ নম্বর ব্লক এবং নলহাটি ১ নম্বর ব্লকে বাল্য বিবাহের হার চরম উদ্বেগজনক । স্বভাবতই প্রশ্নের মুখে প্রশাসনের ভূমিকা । বীরভূম জেলার গ্রামেগঞ্জে বাড়ছে নাবালিকা প্রসূতি । ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত অর্থবর্ষের তথ্যে চমকে উঠছে জেলার বাসিন্দারা । বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় নাবালিকা প্রসূতি ১৯.৫১ শতাংশ । তারমধ্যে শীর্ষে খয়রাশোল ব্লক । খয়রাশোল ব্লকে ২৪.৬৮ শতাংশ নাবালিকা প্রসূতি । নাবালিকা বিয়ে রুখতে রাজ্য সরকার চালু করেছে কন্যাশ্রী প্রকল্প কিন্ত তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে নাবালিকা বিয়ে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ – নাবালিকা প্রসূতিতে রাজ্যে প্রথম রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা যা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন । রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলায় ২৯ শতাংশ নাবালিকা প্রসূতি । রাজ্যের মধ্যে রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলায় ২৯ শতাংশ, মুশিদাবাদ স্বাস্থ্যজেলায় ২৬ শতাংশ,বীরভূম স্বাস্থ্যজেলায় ১৯.৫১ শতাংশ নাবালিকা প্রসূতি । রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মধ্যে নাবালিকা প্রসূতিতে প্রথম ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর ব্লক (২৭.৯২ শতাংশ), দ্বিতীয় নলহাটি ২ নম্বর ব্লক এবং তৃতীয় মুরারই ২ নম্বর ব্লক । নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকমী বলেন, “গরিব ঘরের মা বাবাদের সচেতনতার অভাবে নাবালিকা বিবাহের মতো ঘটনা ঘটছে ।” প্রতিটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গ্রামে গ্রামে আশাকমী ও অঙ্গনাওয়াড়ী কেন্দ্র রয়েছে । নাবালিকা বিয়ে রোধে তাদের ভূমিকা কি ? – উঠছে প্রশ্ন । সমাজমাধ্যমের দৌলতে নাবালক,নাবালিকাদের মধ্যে পালিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা বাড়ছে বলে মত জেলার অনেক বাসিন্দার । এপ্রিল ২০২৩ – আগস্ট ২০২৪ অর্থবর্ষে গোটা বীরভূম জেলায় মাত্র ১৪৭জন নাবালিকার বিয়ে রুখতে পেরেছিল জেলা প্রশাসন ।
রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লকে ২৪ শতাংশ নাবালিকা প্রসূতি । বুধবার ২৬ মার্চ দুপুর বারোটা থেকে বীরভূম জেলার স্কুলে স্কুলে (অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত) বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার জন্য নাটক “নারীনক্ষত্র” পরিবেশিত হবে । নাটকটির নির্মাতা “বীরভূম সংস্কৃতি বাহিনী” । সকাল ১১:৩০টা থেকে বাল্যবিবাহের কুফল,আইন নিয়ে আলোচনা ও শপথ বাক্য পাঠ করা হবে । বিবাহের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের যেমন ক্যাটারার, জনপ্রতিনিধি,বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সদস্য, অভিভাবক,আশাকমী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, অঙ্গনাওয়াড়ী কমী, পুরোহিত,ডেকোরেটারস – সকলকেই আমন্ত্রণ জানাতে বলা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বাল্যবিবাহ রোধে জেলা প্রশাসন এবার শক্ত হাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সচেতনতার পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক,কর্মী সহ অন্যান্য ব্যাক্তিবর্গ দের মধ্যেও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে তাই তাদেরকেও এই কর্মসূচির মাধ্যমে জড়িয়ে রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।