মোল্লা জসিমউদ্দিন,
একুশে বিধানসভা নির্বাচনে একদা ‘পরাজিত’ প্রার্থীর উপর ভরসা রাখলো তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনে(২০১৬ সাল) সংখ্যালঘু নেতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জিতলেও তাঁকে এই বিধানসভা আসন থেকে সরিয়ে পাশ্ববর্তী মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে। মন্তেশ্বরের বিদায়ী বিধায়ক সৈকত পাঁজা সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। গত ২০১১ সালে খুব অল্পভোটে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী ওরফে অচল এবার মঙ্গলকোটের একুশে বিধানসভা নির্বাচনের তৃণমূল প্রার্থী। যদিও এই নির্বাচনে শাসক দলের দলীয় অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা প্রবল রয়েছে বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ । তুমুল পরিবর্তনগামী হাওয়ায় গত ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে দলীয় অন্তর্ঘাতের জন্যই হেরেছিলেন অপূর্ব বলে জেলা রাজনৈতিক মহলের দাবি।তবে যার নেতৃত্বে এই অন্তর্ঘাত বলে অভিযোগ, তিনি ( বিকাশ চৌধুরী) অবশ্য ডালিম সেখ খুনের মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে।এবারে অবশ্য এই কেন্দ্রে টিকিট না পাওয়া সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামীদের অন্তর্ঘাত করবার সম্ভাবনা আছে বলে আশংকা ।তবে পুলিশ এখানে অনুব্রত মন্ডল অনুগামীদের হয়ে খুব ভালো ‘সার্ভিস’ দেয় বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ।বিশেষত গাঁজা থেকে অস্ত্র মামলার বহর দেখলেই তার সারবত্তা মিলবে।এইরুপ দাবি অনেকেরই। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যাইহোক, এই কেন্দ্রে রাজ্যের মন্ত্রী তথা সংখ্যালঘু নেতা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে সরিয়ে পুনরায় অপূর্ব চৌধুরী কে প্রার্থী ঘোষণাতে জয় দেখছে বীরভূমের দাপুটে নেতাঅনুব্রত মন্ডল অনুগামীরা। যেভাবে মঙ্গলকোট নিয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর টিকিট( প্রতীক) পাচ্ছিই ব্যাপক প্রচার ছিল স্থানীয়গত দিক দিয়ে।তাতে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর রাজনৈতিক ওজন অনেকটাই কমে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মঙ্গলকোটে দ্বিমুখী শাসক দলের বিবাদ সক্রিয়তা একসময় থাকলেও মন্তেশ্বরে আবার চতুর্মুখী লবিবাজি আছে তৃণমূলের অন্দরে! এখন দেখার মন্তেশ্বরের ‘চাপ’ টা সহ্য করে বিধানসভার ভোটে জিততে পারেন কিনা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী? তবে মঙ্গলকোটের গত ২০১১ সালে অল্পভোটে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব চৌধুরী ওরফে অচল এবার একুশে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হওয়ায় খুশি তৃণমূলের সাধারণ কর্মীসমর্থকদের একাংশের । গত দশ বছরের সেভাবে অভিযোগ নেই এই তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধে। বিগত বাম জমানার ‘রবিনহুড’ আজাদ মুন্সি খুনে প্রাথমিকভাবে এই নেতার নাম উঠলে তা এফআইআর অবধি যায়নি। মঙ্গলকোটের কৈচর এলাকায় একবার সশস্ত্র দুস্কৃতিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই থেকে পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকেন সর্বদা।সংখ্যালঘু মহলে সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে বিপক্ষ শিবিরের দাবি।তবে বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের অত্যন্ত প্রিয়জন তিনি।সাংগঠনিক স্তরের যোগাযোগ সর্বদা রাখেন নিচুতলার কর্মীদের উপর।এবারের বিধানসভার নির্বাচনে যারা তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে ছিলেন, তারাও কিভাবে ভোট করাবে মঙ্গলকোটের বুকে তা নিয়েও উঠছে প্রশ্নচিহ্ন।মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি অপেক্ষা সিপিএম যথেষ্ট শক্তিশালী।বামেদের উপর কংগ্রেসের জোট থাকায় মঙ্গলকোটে তৃণমূল প্রার্থীর সাথে বাম প্রার্থীর লড়াই জোরদার হবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের মুরিদ ( অনুগামী)দের সংখ্যা বেশি আঠারো অলি খ্যাত মঙ্গলকোটে। তাই ভোটের ময়দানে একদা বিরোধীশুন্য ( গত পঞ্চায়েত ভোটে) মঙ্গলকোটে তৃণমূলের লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। বিরোধী দলের অভিযোগ, মঙ্গলকোট ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক একই পদে দীর্ঘ দশ বছর রয়েছেন। যিনি শাসক দলের পক্ষে ভোট অনুকূলে আনতে অতীতে ‘নজির’ গড়েছেন। যদিও ব্লক প্রশাসনের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।