মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছে এক এবং একমাত্র টার্গেট বলা যায় – বাংলা দখল।গত লোকসভা নির্বাচনের আগেথেকে ‘উনিশে হাফ, একুশে সাফ’ স্লোগানের আবির্ভাব ঘটে বাংলায়।উনিশে লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টি আসন জিতে যাওয়ায় একুশে বিধানসভা ভোটের বিজেপির পারদ তুঙ্গে। দুশোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলে প্রচার চলছে মধ্যগগনে। একাধারে সিবিআই – ইডি – কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা এই বাংলা কে ঘিরে যেমন দেখা যাচ্ছে। ঠিক তেমনি আবার তৃণমূলের নেতানেত্রীদের দলবদল করানোটা বিজেপির কালচারে পরিণত হয়েছে বলে শাসক দলের দাবি। ঘটনা যাইহোক, ২০১৭ সালে বাংলার রাজনীতিতে চাণক্য নামে পরিচিত মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায়, বাংলা দখলের স্বপ্নে বাস্তবতা কিছুটা আসে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদে মুকুল রায় আসাতে তাঁর তৃণমূলের পুরাতন অনুগামীদের দলবদলের বিশ্বাসযোগ্যতা বহুগুণ বেড়ে যায়। অপরদিকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার রাজনৈতিক প্রভাবে ভালোমতন ভাঁটা পড়ে যায়। বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অন্তরে মেনে না নিলেও তৃনমূল ত্যাগ করা নেতাদের মঞ্চে বাহ্যিক বন্ধুত্ব দেখাতে হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে পড়ে। এইরূপ দাবি বিজেপির একাংশের। একদা পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসায় চতুর্মুখি অনুগামী মহল গড়ে উঠেছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আসানসোলের যে সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র দু চোখের বিষ ছিলেন তৎকালীন আসানসোল পুরসভার মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ তেওয়ারি। সেই তেওয়ারি বর্তমানে বাবুল সুপ্রিয়র পাশে মঞ্চ আলোকিত করছেন বিজেপির হয়ে! রাজনীতিতে সবই সম্ভব! এবার আসা যাক, দলীয় প্রার্থীপদ ঘিরে বিজেপির এত ক্ষোভ বিক্ষোভ কিসের? কলকাতার হেস্টিংসে বিজেপির অফিসের সামনে হাজার হাজার কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলীয় প্রার্থীপদে মনোমত ব্যক্তিদের না পেয়ে।তৃণমূলের যেসব নেতা মন্ত্রীরা এসেছিলেন বিজেপির পক্ষে বিধানসভার টিকিট পাবেন বলে।তাঁরা টিকিট না পাওয়ায় কেউ কোটি টাকাতে বিজেপির টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করছেন। আবার কেউ পুরাতন দলে যেকোনো শর্তে ফিরতে চাইছেন। বিজেপির রাজ্য অফিসে ( কলকাতায়) প্রার্থী হওয়ার আবেদনপত্র জমা নেওয়া সত্বেও কেন এই বিক্ষোভ প্রদর্শন? বিশেষ সুত্রে প্রকাশ, মন্ডল সভাপতি থেকে জেলা সভাপতি, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল থেকে আসা হেভিওয়েট নেতাদের তালিকা দিল্লিতে পাঠানো হলেও, তা বাছাই করতে হিমসিম খেতে হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কে।তাই মাস খানেক আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ( আইবি) র কাছে রিপোর্ট নাকি চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। যেখানে দলীয়ভাবে এক একটি বিধানসভা আসনে ৫ থেকে ৬ টি নাম পাঠানো হয়েছিল।সেখানে আইবি কে প্রতিটি কেন্দ্রে ২ টি জনপ্রিয় নাম চাওয়া হয়েছিল।প্রকাশ্যে অবশ্য আইবি এই রিপোর্ট তলব কে স্বীকার করেনি।তবে এই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইবির আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন – ” আমরা সারাবছর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক রিপোর্ট পাঠিয়ে থাকি।এবার আমাদের টিম কে আলাদাভাবে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের সমস্ত খুটিনাটি তথ্য সহ এলাকার জনপ্রিয় ২ থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছিল।আমাদের থানা ভিক্তিক নিজস্ব নেটওয়ার্ক ( ইনফরমার) এর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলেছি।এমনকি বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনী ভোটের উত্তাপ বুঝেছি “। এখান থেকেই বিজেপির অন্দরে উঠছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। তাহলে কি রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন লবি থেকে উঠে আসা নামগুলি বাতিল হয়েছে ঘোষিত প্রার্থীপদ ঘোষণায়।সেজন্যই কি প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় কে বিধানসভার ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।যাতে দলীয় অন্তর্ঘাত না ঘটে? মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সুপ্ত আশা দেওয়া হচ্ছে দিলীপ – মুকুলদের