বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস: হাড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস
কলকাতা – ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস হিসাবে পালিত হয়, যা হাড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা বাড়ানোর একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। অস্টিওপোরোসিস হল এমন একটি রোগ যেখানে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, বিশেষত মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি করে দেখা যায়। এই দিনটি আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রাথমিকভাবে নির্ণয়ের গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
অস্টিওপোরোসিসকে প্রায়ই ‘নীরব রোগ’ বলা হয় কারণ এটি সাধারণত লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় যতক্ষণ না কোনো হাড়ের ক্ষয় বা ভাঙন ঘটে, যা প্রায়ই গুরুতর জটিলতার দিকে নিয়ে যায়। মেরুদণ্ড, নিতম্ব এবং কব্জির মতো জায়গাগুলি সাধারণত ভাঙনের প্রবণ থাকে। এই ধরনের আঘাতগুলি গুরুতরভাবে স্বাস্থকে প্রভাবিত করতে পারে।
নারায়ণা হাসপাতাল, হাওড়ার অর্থোপেডিকস এবং ট্রমাটোলজি
বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ অতুল শ্রীবাস্তব বলেন, “আজ, বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবসে, আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর প্রভাব ফেলা এক নীরব রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছি যা হলো অস্টিওপোরোসিস। এটি প্রায়ই ‘নীরব চোর’ (সাইলেন্ট থিফ) হিসাবে পরিচিত, যা হাড় দুর্বল করে, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে, এবং হাড় ভঙ্গুর ও ভাঙনপ্রবণ করে তোলে। অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধযোগ্য, নির্ণয়যোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য, তবুও এটি প্রায়ই অজান্তেই থেকে যায় যতক্ষণ না কোনো চরম ফলাফল দেখা যায়। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য, এবং নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যাদের রোগের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য প্রাথমিক স্ক্রিনিং একটি বড় পার্থক্য আনতে পারে। আসুন আমরা সচেতনতা বৃদ্ধি করি, সক্রিয় স্বাস্থ্য পদক্ষেপের জন্য উৎসাহ দিই এবং যারা অস্টিওপোরোসিসের রোগে আক্রান্ত রয়েছে তাদের সমর্থন করি। একসাথে আমরা সবার জন্য শক্তিশালী, সুস্থ হাড়ের প্রচার করতে পারি।”
“অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের মূল বিষয় হল ছোটবেলা থেকেই হাড়ের স্বাস্থ্যের প্রতি মনোনিবেশ করা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যালসিয়াম গ্রহণ বাড়ানো এবং শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ানো এই রোগের প্রভাবকে ব্যাপকভাবে কমাতে পারে। এছাড়াও, যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং হাড়ের খনিজকরণে সহায়ক। হাঁটা, দৌড়ানো বা শক্তি প্রশিক্ষণের মতো ব্যায়ামগুলি হাড়ের ঘনত্ব তৈরি এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে। সীমিত মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয়ই হাড়কে দুর্বল করে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ঝুঁকির কারণগুলি প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে, যা সারা জীবন হাড়ের স্বাস্থ্য সংরক্ষণে সময়মতো হস্তক্ষেপের সুযোগ দেয়,” এই বিষয়ে আরো জানান নারায়ণা হাসপাতাল, আর এন টেগোর হাসপাতাল, মুকুন্দপুরের অর্থোপেডিকস এবং রোবোটিক হাঁটু প্রতিস্থাপন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সূর্য উদয় সিং।
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে হাড়ের স্বাস্থ্যের প্রতি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অপরিহার্য। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন দুধজাত পণ্য, শাকসবজি এবং সুরক্ষিত খাদ্য, সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ডি এবং নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করে এবং পেশীর শক্তি বাড়ায়। তাছাড়াও, ধূমপান থেকে বিরত থাকা এবং অ্যালকোহল সেবন সীমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উভয়ই হাড়ের ক্ষতির উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি জন্য দায়ী। মহিলাদের মধ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়সী এবং যারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন তাদের জন্য নিয়মিত হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা (ডেক্সা স্ক্যান) করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে অস্টিওপোরোসিস প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।
অস্টিওপোরোসিস একজন ব্যক্তির জীবনের মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস উপলক্ষে, স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য উৎসাহিত করেন, বিশেষত যদি কারও পরিবারে অস্টিওপোরোসিসের ইতিহাস বা অন্যান্য ঝুঁকির কারণ থাকে। হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে সনাক্তকরণ ভাঙন প্রতিরোধ করতে এবং রোগটি আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়ক।