খায়রুল আনাম (সম্পাদক আয়না টেলি নিউজ )
তৈলবীজ ও ডাল শস্যের সাথে জেলায় জোর ভুট্টা চাষে
রাজ্যের যে সব জেলা ধানচাষে সাফল্য পেয়ে থাকে, তারমধ্যে অন্যতম হলো বীরভূম জেলা। ধান উৎপাদনে এজেলার নাম উৎপাদক জেলা তালিকার উপর দিকেই রয়েছে। সেইসাথে পরবর্তী ফসল হিসেবে আলু উৎপাদনেও এজেলা এগিয়ে রয়েছে। এবার বর্ষা ভালো হওয়ার ফলে জেলায় আমন ধান চাষও একশো শতাংশই হয়েছে বলে বলা হয়েছে। বিগত বছরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে জেলায় খরিফে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে থাকলেও, চাষ হয় ২ লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ৮৬ শতাংশ জমিতে চাষ করা সম্ভব হয়েছিল। এবার আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলায় ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব হওয়ায়, একশো শতাংশ জমিতেই ধান চাষ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। পরবর্তী ফসল হিসেবে আলু চাষের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। এবার আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা এই চাষে উৎসাহিত হবেন বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার ফলে, কায়িক এবং পশু শ্রমের ব্যবহারও কমেছে। তাই চাষিরা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে আগামীতে বোরোধান এবং রবিশস্যের চাষের দিকেও ঝুঁঁকবেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর সে ক্ষেত্রে জেলায় স্বল্পজলের তৈলবীজ, ডাল শস্যের মতো চাষে যেমন জোর দেওয়া হচ্ছে তেমনি, উত্তরবঙ্গের সাফল্য দেখে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার মতো বীরভূম জেলাতেও স্বল্পজলের ভুট্টা চাষের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। আর সেই সূত্রে জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ভুট্টা থেকে যেমন বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত হচ্ছে তেমনি, পোলট্রির মুরগীর খাবার হিসেবে ভুট্টার ভালো রকমের চাহিদাও রয়েছে। তাই ভুট্টাকে বাজারজাত করে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন অনায়াসেই। ভুট্টা চাষের জন্য জেলায় নতুন করে পাঁচটি প্রদর্শনী ক্ষেত্রও তৈরী করা হচ্ছে। জেলায় অপেক্ষাকৃত কম জলের তৈলবীজ ও ডাল শস্যের চাষে চাষিদের উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে বীজ, বীজ শোধনের ওষুধ, অনুখাদ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি দফতর। সেইসাথে চলতি মাসের মধ্যেই তৈলবীজ ও ডাল শস্য চাষের প্রদর্শনী ক্ষেত্র গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিগত বছরের চেয়ে চলতি বছরে এই প্রদর্শনী ক্ষেত্রের জমির পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। সেইসাথে জেলায় গম চাষের উপরেও জোর দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। এজন্য বোরো ধান ও গম চাষিদের জন্যও বিশেষ প্রদর্শনী ক্ষেত্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি দফতরের। এইসব জায়গায় চাষিরা হাতে-কলমে চাষ করে যে সাফল্য পাবে তা তাঁরা অন্যদের সাথে আদান- প্রদানও করতে পারবেন। জেলায় তৈলবীজ চাষে সর্ষের উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি করে। আর এজন্য আগে জেলায় শঙ্কর সর্ষে চাষের জন্য যেখানে ৮ টি প্রদর্শন ক্ষেত্র হতো, এবার তা বাড়িয়ে ৩৮ টি প্রদর্শন ক্ষেত্র জমি হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য ১০০ হেক্টর জমি বরাদ্দ হওয়ায় জেলায় ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শঙ্কর সর্ষে চাষের প্রদর্শনী ক্ষেত্র হচ্ছে। ঠিক একইভাবে আগে যেখানে মসুর ডাল চাষের ৬ টি প্রদর্শনী ক্ষেত্র ছিলো, এবার তা বাড়িয়ে ১৬ টি করার ফলে জেলায় ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মসুর ডালের চাষ হবে। চাষিদের উন্নত প্রযুক্তির চাষে এভাবে হাতে- কলমে শিক্ষা দিলে, তা জেলার কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনে দেবে বলেই রাজ্য কৃষি দফতর মনে করছে । তৈলবীজ হিসেবে জেলায় তিল চাষেরও প্রচলন রয়েছে ভালোরকমই। তবে, তিসি চাষ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। এই দু’টি তৈলবীজ চাষে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে, সেটিও তৈল উৎপাদনে যথেষ্ট সহায়ক হবে বলেই বিশ্বাস রয়েছে সকলের ।।