বেহাল রাস্তা – মৃত্যুর হাতছানি
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়েছে আবেগ ও নৈতিকতাবোধ। আবেগহীন জীবন মাঝে মাঝে বিবেচনাহীন ও বিবেকহীন হয়ে ওঠে। গতিই হয়ে ওঠে মুখ্য। চলার পথের মাঝে দাঁড়িয়ে মৃত্যু কখন যে গর্তরূপে তার মায়াবী হাতছানি দিয়ে ডাকবে সেটা আমরা খেয়াল করিনা। পরিণাম হয় ভয়ংকর।
সাধারণ সময়ে ভিড় যাইহোক বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর সময় ভিড়টা অনেক বেড়ে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্যাণ্ডেলে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। কার্যত কোথাও কোথাও জনপ্লাবন ঘটে যায়। শহরের ভিড় বেশি হলেও গ্রামগুলো খুব একটা পেছিয়ে থাকেনা।
ওদিকে পুজোর সময় বাড়িতে থাকেনা অভিভাবকদের কড়া শাসন বা নজরদারি। সুযোগ পেলেই প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। মুক্তির আনন্দে ওরা গতির আনন্দে মেতে ওঠে। বেপরোয়া গতিই যে ওদের 'গত' করে দিতে পারে সেই খেয়াল ওদের থাকেনা। উৎসবের আনন্দ মুহুর্তে পরিণত হয় গভীর বিষাদে।
ওরা জানলেও মানেনা, জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে রাজ্য সড়ক ছাড়িয়ে বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তায় ছড়িয়ে আছে মৃত্যুর ফাঁদরূপী গর্ত। কোথাও ব্রীজে ওঠার মুখে বা মাঝে সদর্পে বিরাজ করছে গর্ত। কোথাও রাস্তার মাঝখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে পিচ উঠে গেছে। বেশ কিছু জায়গায় গর্ত ভর্তি জল দেখলে মনে হবে সুইমিংপুল অথবা মৎস চাষের জন্য এগুলো তৈরি করা হয়েছে। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা বলে ঘটে যায় চরম বিপদ। নিজেদের তো বটেই, পথচারীদের ক্ষেত্রেও তারা চরম আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে।
কথা হচ্ছিল পিডব্লিউডির অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। তিনি বললেন - রাস্তা ভাল রাখার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, মানুষকেও সচেতন হতে হবে। পিচের শত্রু জল। বাড়ির সামনের রাস্তায় একটু জল জমলে সেটুকু কেটে বের করে দেওয়ার দায়িত্বটা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিতেই হবে। তবেই চলার পথ ভাল থাকবে।
আউসগ্রাম তথা রাজ্যবাসীকে দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে আউসগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার বললেন – অস্বীকার করার উপায় নেই বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা খারাপ আছে। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে পুজোটা সবার কাছে আনন্দের হয়ে উঠবে। তিনি প্রত্যেককে একটু সাবধানে গাড়ি চালানোর জন্য অনুরোধ করেন।
একই সুর শোনা গেল মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর কণ্ঠে। তিনি বললেন - পুজোর সময় সবাই আনন্দে মেতে উঠবেই। তবে যতটা সম্ভব বেহাল রাস্তার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষার সময় রাস্তা কিছুটা বেহাল হয়ে ওঠে। রাস্তার নীচের অংশটা একটু শুকনো হলেই অবশ্যই সেগুলো মেরামতের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি গাড়ি চালানোর সময় প্রত্যেককে একটু সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেন।