নেওয়া হচ্ছে সেন্ট্রাল গ্রাউণ্ড ওয়াটার বোর্ডের সহায়তা
বোরিং করে জল না মেলায় ভূগর্ভে জলস্তর বাড়াতে উদ্যোগ
খায়রুল আনাম
একটা সময় হয়তো এমনও পরিস্থিতি হতে পারে যাতে, জ্বালানি তেলের চেয়েও বেশি মহার্ঘ হয়ে যেতে পারে আমাদের হাতের কাছে পাওয়া সহজলভ্য পানীয় জল। জলই জীবন, কথার এই অতি সরলীকরণের সাথে আমাদের বাস্তব যোগ আর জল ব্যবহার ও তার প্রতি দায়িত্ববোধে আমরা কতোখানি যত্নবান সে প্রশ্ন বার বার উঠেছে। জলের ব্যবহার এবং তার অপচয়রোধে বিশেষজ্ঞরা আমাদের বার বার সতর্ক করা সত্বেও, আমরা কতোখানি সচেতন হয়েছি, তা নিয়ে এবার প্রশ্নটা আরও জোরালো হয়েছে। কেননা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ জলত্তোলন করে তা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও কৃষিকাজে এভাবে জলত্তোলন করে তা ব্যবহার করার ফলে মাটির নীচের জলেও তীব্র সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলত্তোলনের ফলে বহু জায়গায় জলে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে তা বিষময় হয়ে উঠেছে। এরাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বীরভূম, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জেলাগুলিতে এই সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এইসব এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু জায়গায় মাটির নীচে সমীক্ষা চালিয়ে নির্দিষ্ট স্তরে কোনও জলই পাওয়া যায়নি। যা দেখে ভ্রূ কুঁচকে গিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাই জলের সন্ধান পেতে আরও গভীর পর্যন্ত বোরিং করতে হয়েছে। কিন্তু সেই স্তরও কতোখানি এবং কতোদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ জলত্তোলনের ফলে।
এই পরিস্থিতিতে এবার রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বা পিএইচই সেন্ট্রাল গ্রাউণ্ড ওয়াটার বোর্ডের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ভূগর্ভের জলস্তর বাড়াতে চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই কাজ শুরু করে দিচ্ছে। এই কর্মসূচিতে চিহ্নিত জায়গাগুলিতে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে বৃষ্টির জলকে নির্দিষ্ট ভূগর্ভের নির্দিষ্ট স্তরে পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে বোর্ডের নির্দিষ্ট জায়গাগুলিতে রিচার্জ ওয়েল বা পারকোলেশন ট্যাঙ্কের মতো পরিকাঠামো গড়ে তুলে বৃষ্টির জলকে ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ব্যাসার্ধ অনুযায়ী এই ধরনের এক একটি ট্যাঙ্ক তৈরী করতে খরচ পড়বে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। জলচক্রের নিয়মানুযায়ী জলস্তরের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা না গেলে ভবিষ্যতে ভূগর্ভস্থ জলের ক্ষেত্রে চরম সমস্যা তৈরী হয়ে যাবে। এই কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির জেলাশাসকদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলাগুলিতেও এই কাজ করা হবে বলেই স্থির হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।।
ছবি : ভূগর্ভস্থ জলত্তোলন করে ব্যবহার ।