বৌমা ষষ্ঠী বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের জামিরাপাড়া গ্রামে।

Spread the love

বৌমা ষষ্ঠী বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের জামিরাপাড়া গ্রামে।

সাধন মন্ডল বাঁকুড়া:— আজ বাংলা জুড়ে পালিত হলো জামাই ষষ্ঠী ।জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে বাজার ছিল অগ্নি মূল্য। সবজি বাজার থেকে শুরু করে ফলের বাজার, এবং মাছ ও মাংসের বাজার ছিল চড়া, প্রতিটি জিনিসের স্বাভাবিক দামের তুলনায় অনেক বেশি দাম ছিল, কিন্তু সেই বাড়তি দাম কে উপেক্ষা করে জামাইদের তাতে ফল উপকরণ থেকে শুরু করি মিষ্টি মিষ্টান্ন এবং মাছ মাংসের কোন ঘাটতি ছিল না যে যতটা পেরেছেন জামাইদের আপ্যায়িত করার চেষ্টা করেছেন । কোথাও জামাই বাবাজি মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে আবার কোথাও বড় মাছ ও ফলের ঝুড়ি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হয়েছেন। সেখানে জামাইকে বিশেষভাবে আপ্যায়িত করতে ও বরণ করে নিতে প্রস্তুত ছিলেন শাশুড়ি মায়েরা। নানান ধরনের পদ রান্না করে শাশুড়ি মায়েরা জামাইয়ের সামনে তুলে ধরেছেন এবং সন্ধ্যা প্রদীপ দিয়ে জামাইকে ফোঁটা দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে বাঙ্গালীদের এটি একটি অন্যতম উৎসব। জামাইষষ্ঠীর দিনেই ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটালো জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা ব্লকের জামিরাপাড়া গ্রামের কাকলি মন্ডল। তিনি বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর সাথে সাথে বৌমা ষষ্ঠীও যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভালোবাসায় পালন করলেন এক ধারে জামাইকে বসিয়ে যেভাবে আদর আপ্যায়ন করা হলো অন্যদিকে তার পাশেই বৌমাকে বসিয়ে সেই একইভাবে আদর আপ্যায়ন করা হলো। এই প্রসঙ্গে কাকলি মাইতি বলেন আমরা দেখে এসেছি জামাইষষ্ঠী পালন করা হয় কিন্তু মেয়েরাও কম কিসে? তারাই বা কেন সম্মান ও ভালোবাসা পাবে না? যে কোন পূজো পার্বণে মেয়েদের ভূমিকা থাকে সবার প্রথমে। মাতৃ শক্তি হলো সমস্ত ক্ষেত্রে জয়ের মূল শক্তি তাই আমি এবছর বৌমা ষষ্ঠী পালন করলাম। আমার বাড়িতে এ বছর প্রথম বৌমা এসেছে তাকে আমি লক্ষী বলেই মনে করি।তবে এর মূল উদ্যোক্তা হলো আমার মেয়ে দেবী মন্ডল মাইতি। এ প্রসঙ্গে দেবী মন্ডল মাইতি বলেন চিরকাল ছেলেরাই সমস্ত কিছুতেই প্রাধান্য পাবে এটা ঠিক নয়। ছেলেদের সাথে সাথে মেয়েরাও আজ বিশ্ব জয় করছেন তাই মেয়েদেরও এই ধরনের অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা উচিত বলে আমি মনে করি সেই জন্যই এই বৌমা ষষ্ঠীর উদ্যোগ। তবে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন আমার স্বামী বিশিষ্ট শিক্ষক তনোজ মন্ডল। বৌমা ষষ্ঠীর পিঁড়িতে বসে আনন্দে চোখে জল এসে যায় বৌমা প্রতিমা মাইতির। তিনি বলেন আমার এবছর বিয়ে হয়েছে বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি শ্বশুরমশাই সহ বাড়ির সকলের কাছ থেকে অত্যন্ত স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়ে আসছি। বুঝতেই পারছি না যে আমি আমার বাপের বাড়িতে রয়েছি নাকি শ্বশুরবাড়িতে রয়েছি তাছাড়া আজকের এই অনুষ্ঠানে আমাকে যেভাবে স্নেহের সাথে সম্মানিত, আপ্যায়িত করা হলো। তা আমার জীবনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আগামী প্রজন্মের কাছে আমিও আমার শাশুড়ি মায়ের এই কীর্তিটি তুলে ধরবার চেষ্টা করব। আজকের দিনে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত। শিক্ষক তনোজ মণ্ডল বলেন আমার স্ত্রী যখন এই প্রস্তাবটি আমার কাছে তুলে ধরে আমি তাকে সাথে সাথেই সম্মতি জানাই। বৌমা ষষ্ঠী পালন করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো জামিরা পাড়া গ্রামের মাইতি পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *