ব্যথার কোজাগরী

Spread the love

ব্যথার কোজাগরী

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

দিন গড়িয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যে আসে নেমে
হাত চালিয়ে নাড়ু বানায় কমলা থাকে না থেমে।
এমন সময় ছোট্ট মেয়ে বলে আধো স্বরে
একটা আমায় দাও না মা খেতে ইচ্ছে করে।
মা বলে ‘ওরে সোনা বলিস না এসব কথা
গিন্নি মা শুনতে পেলে কেটেই নেবে মাথা’।
কাজের মেয়ের এসব বায়না রাখতে নেই ওরে
পুজোর আগে খেলে নাড়ু মা যায় যে মরে।
এমন সময় গিন্নি হাঁকেন ‘কমলা জোগাড় কতদূর?’
তোদের মা মেয়ের গল্প দেখে ক্রুদ্ধ হবেন ঠাকুর।’
হচ্ছে গিন্নি মা আর একটু সময় দিতে হবে মোটে
মেয়ে বলে পাশে থেকে ‘মা পাচ্ছে বমি খিদের চোটে’।
মায়ের মন ব্যথায় কাতর অভুক্ত সন্তানের যন্ত্রনায়
বলে নে নাড়ু মুখে পুড়ে যেন কেউ দেখতে না পায়।
পুজোর কাজ দেখতে এসে গিন্নির চোখে পড়লো তা
রাগের চোটে চাকী ছুঁড়ে ফাটিয়ে দিলেন মেয়ের মাথা।
ছোট্ট মেয়ে কচি শরীর রক্ত তার ভীষণ রকম তাজা
সেই রক্তে স্নান করে পেল সে অন্যায় কাজের সাজা।
কমলা কাঁদে ‘ওরে লক্ষী তোকে কেমন করে বাঁচাই?
আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে তোর যে আর কেউ নাই।
কাজের থেকে ছাড়িয়ে গিন্নি বলেন ‘যা বিদায় হয়ে’
কখনও আর আসিস না এদিকে তোরা মায়ে ঝিয়ে’।
ভাঙা ঘরে মাদুর পেতে কমলা জাগতে থাকে রাত
যন্ত্রণায় মেয়ের মাথা আস্তে আস্তে হয়ে গেল কাত।
কোজাগরী পূজার দিনে দেবী দেখতে আসেন রাতে
কেউ কি সেদিন জেগে থাকে তাঁর অপেক্ষাতে?
নিথর দেহ নিয়ে কমলা জেগেছে কোজাগরী
আসেনি কোনো দেবী,পায়নি সাজা হত্যাকারী।
এ কেমন সমাজ মা গো এ কেমন বলো বিচার
প্রাণের থেকে হয় কি বড়ো কোনো পূজার আচার?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *