ভাই ফোঁটায় সম্প্রীতির নজির

Spread the love

ভাই ফোঁটায় সম্প্রীতির নজির

সেখ সামসুদ্দিন, ২৩ অক্টোবরঃ সম্প্রীতির নজির গড়ে মহিন্দরে ভাই ফোঁটার আয়োজন করে তারামা ট্রাস্ট। আজ ভাই ফোঁটার পূণ্য তিথিতে বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় কপালে ফোঁটা দেয়। এটাই আমাদের ভারতের রীতি নীতি ও ঐতিহ্য। সেই পরম্পরাকে বজায় রেখেই জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মহিন্দরের তারামা মন্দিরে আয়োজন করা হয় ভাইফোঁটা। এলাকার প্রায় শ’তিনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা অংশ নেয়। আর এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জামালপুরের তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য মেহেমুদ খান (তিনি নিজেও তারামা ট্রাস্টের সদস্য)। তার সাথে ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধক্ষ্য শিপ্রা ওঝা ও ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা। আশ্রমের গেটের মুখে মেহেমুদ খানকে বরণডালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে তাকে আশ্রমের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। মন্দিরে গিয়ে তিনি মাতৃদর্শন করেন। সেখানে আয়োজিত ভাই ফোঁটায় তিনি কচি কাঁচাদের সাথে মিশে যান। তার মঙ্গল কামনায় তাকে ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ নেন শিপ্রা ওঝা সহ অন্যান্যরা।একই সঙ্গে বসে ফোঁটা নিয়ে খাবার খান মেহেমুদ খান। তারই পাশে বসে খাচ্ছেন এই মন্দিরের পুরোহিত, এ এক বিরল দৃশ্য। ৩০০ জন বাচ্চা প্রত্যেকের হাতেই নতুন পোশাক যা বোনেদের হাত দিয়ে ভাইয়েদের ও ভাইয়েদের হাত দিয়ে বোনেদের তুলে দেয় এই তারামা ট্রাস্ট। ছোট ছোট বাচ্চারা মেহেমুদ খানের কপালে ফোঁটা দেন আর তিনি প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন তাদের। মেহেমুদ খান বলেন প্রায় ১২ বছর ধরে বাপিন দা এই অনুষ্ঠান করেন এবং তিনি প্রতিবছরই এই আজকের অনুষ্ঠানে আসেন। এখানে এলে তার এক অন্য অনুভূতি হয়। তিনি বলেন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় কপালে ফোঁটা দেবে এর আবার জাত ধর্ম কী? তিনি তারামা মন্দিরের বা ট্রাস্টের কর্ণধার বাপিন দাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তাকে প্রতিবছর আমন্ত্রণ করার জন্য। তিনি বাপিন দার বিশেষ প্রশংসা করেন আজকের দিনে আমাদের সব সংস্কৃতি আমরা ভুলতে বসেছি। সেই জায়গায় ছোট্ট থেকেই এই বাচ্চাদের মনে সংস্কারের বীজ বপন করে দেওয়া হচ্ছে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আবার একই আসনে বসে জাতি – ধর্ম – বর্ন – ধনী – দরিদ্র নির্বিশেষে বসে ভাইফোঁটা নিচ্ছে মানে তাদের মধ্যে এক একাত্মতা গড়ে উঠছে। আর সবচেয়ে যেটা তার ভালো লেগেছে তা হলো এই বাচ্চাগুলোকে নতুন বস্ত্র উপহার দেওয়ায়। শিপ্রা দেবী বলেন ১২ বছর ধরে তিনিও এখানে আসছেন মায়ের মন্দিরে মায়ের সামনে এই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান সত্যি এক অন্য অনুভূতি। আর যিনি এই কর্মকাণ্ডের মূল কান্ডারী সেই বাপিন দা (দীপঙ্কর ঘোষ) নির্বাক। তিনি কোনো প্রচারের আলোয় আসতে চান না। তার এই তারামা মন্দির এক সুন্দর পরিবেশ যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। এরই পাশাপাশি আজ মেহেমুদ খানের ব্লক পার্টি অফিসেও ভাই ফোঁটার অনুষ্ঠান করেন ব্লকের ১৩ টি অঞ্চল থেকে আসা দলের মহিলা কর্মী তার স্নেহের বোনেরা। এখানেও এক সম্প্রীতির আবহ লক্ষ করা যায়। এখানেও জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আসেন মেহেমুদ খানকে ভাই ফোঁটা দিতে। পার্টি অফিসে তাঁর মঙ্গল কামনায় তাঁর কপালে প্রথম ফোঁটা দেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক, ছিলেন বিদ্যুৎ কর্মাধক্ষ্য শিপ্রা ওঝা আর ছিলেন ব্লকের সমস্ত স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী ঝর্না বেগম শেখ। এছাড়াও পঞ্চায়েত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, সাধারণ কর্মী মিলে প্রায় একশজন উপস্থিত ছিলেন। এক মুসলমান ভাইয়ের কপালে এক হিন্দু বোন ফোঁটা দিচ্ছেন সত্যি সম্প্রীতির এক চরম নিদর্শন। ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে উপহারে ভরিয়ে দেন তার বোনেরা। তিনিও বোনেদের হাতে উপহার হিসাবে তুলে দেন একটি করে শাড়ি। মেহেমুদ খান বলেন তিনি আপ্লুত। এই ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান তিনি সরাজীবন মনে রাখবেন। তিনি নিজে মুসলিম কিন্তু এক হিন্দু ব্রাহ্মণ বোন তাকে ফোঁটা দিতে এসেছেন। এ তার কাছে পরম পাওয়া। তিনি সকলকে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। সকলে যেনো নিজের নিজের সংসারে সকলকে নিয়ে ভালো থাকে তিনি আলাহর কাছে এই প্রার্থনা করবেন। আর উপস্থিত তার বোনেরাও ভগবানের কাছে তাঁদের প্রিয় দাদার মঙ্গল কামনা করেন। সত্যি বার বার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামালপুরে সম্প্রীতির নজির সৃষ্টি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *