ভারতে শেয়ার সূচক আবার শীর্ষচূড়ায়:
পার্থপ্রতিম সেন (প্রাক্তন চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাংক)
গত শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া সবস্থানে শেয়ার বাজারে বিশেষ চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হয়।
মূল কারণ একটি খবর ছড়িয়ে পড়া, আমেরিকায় গত অক্টোবর মাসের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৭ শতাংশে, যা কিনা এই বছরের জানুয়ারি থেকে সবচেয়ে কম।
সবাই যখন ভাবছিল আমেরিকায় আরও বেশি করে মুদ্রাস্ফীতি হবে, সুদের হার বাড়বে, অর্থনীতিতে মন্দার ছায়া আরও ঘনীভূত হবে, সেই সন্ধিক্ষণে গতকাল আমেরিকার অর্থনীতিতে এই একটি আশাব্যঞ্জক খবর বিশ্বের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার বাজারে একটি দমকা হাওয়া বইয়ে দিয়ে শেয়ারের দামের সূচকগুলিকে বেশ উঁচুতে ঠেলে তুললো।
তাছাড়া মুদ্রাস্ফীতি নিম্নগামী হওয়ার এই খবরে ডলারের দামেও কিছুটা ভাঁটা পড়ল অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মুদ্রার তুলনায় ডলার দুর্বল হল বা ডলারের দাম কমে গেল।
ফলস্বরূপ আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিটে এসএন্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক সূচকে একদিনে ছয়-সাত শতাংশ বৃদ্ধি হল যা কিনা ২০২০ সালের পর একদিনে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি।
চীনের শেয়ার বাজারেও বিশেষ তেজী ভাব দেখা যায়, তার আরেকটি কারণ হল চীনে কোভিড সংক্রান্ত কড়াকড়ি শিথিলের খবর আসে।
হংকং শেয়ার বাজারের সূচক হ্যাঙস্যাঙ গতকাল আট শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখ্য শেয়ার বাজারে কোম্পানির শেয়ারের দাম উঠা-নামা করাটা কিছুটা হলেও নির্ভর করে এই ধরণের পজিটিভ-নিগেটিভ সংবাদের উপর। তবে শেয়ার সূচক বাড়লেও সূচকে থাকা প্রতিটি শেয়ারের দাম একদিনে বাড়ে না।
যেমন ঐদিন মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে ১৭৫৬ টি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ১৬৯০টি শেয়ারের দাম কমেছে। উল্লেখ্য মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজারের মত কোম্পানির শেয়ার লিস্টেড আছে।
এদিকে ভারতবর্ষে মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ‘সেন্সেক’ গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার ১,১৮১ পয়েন্ট বেড়ে দিনের শেষে ৬১,৭৯৫ পয়েন্টে থামে বা ক্লোজ হয়।
সূচকের এই নতুন উচ্চতা গত ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবরের অর্জিত সর্বোচ্চ উচ্চতা ৬১,৭৬৬ পয়েন্টকে অতিক্রম করে যায়। অর্থাৎ একবছর পর আগের উচ্চতা অতিক্রম করলো।
সেই দিক থেকে ১১ নভেম্বর, ২০২২ ভারতের শেয়ার বাজার বা মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। তবে আগামী দিনে শেয়ার সূচক আরো নতুন নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে তা বলাই বাহুল্য।
ন্যাশনেল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ‘নিফটি ফিফটি’ ঐদিন ৩২২ পয়েন্ট বেড়ে ১৮,৩৫০ পয়েন্টে থামে বা বন্ধ হয়, তবে নিফটি তেরো মাসের আগের উচ্চতা ১৮,৪৭৭ পয়েন্টকে ঐদিন স্পর্শ করতে পারেনি।
পাওয়ার এবং এফএমসিজি ছাড়া মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের অন্যান্য সেক্টরেল ইনডেক্সগুলি শুক্রবার দিন ভালো তেজী ভাব দেখিয়েছে। আইটি স্টক ইনডেক্সের পারফর্ম্যান্স সবচেয়ে ভালো, একদিনে ৩.৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং এইচডিএফসি। সূচকের বৃদ্ধির ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে এই দু’টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বৃদ্ধি থেকে। তাছাড়া ইনফোসিস, টেক মহিন্দ্র, এইচসিএল টেক এর শেয়ারের দামে ভালো বৃদ্ধি হয়েছে। তবে স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মহিন্দ্র ব্যাঙ্ক এর মতো ব্যাঙ্কিং স্টকগুলি ঐদিন বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি।
ঐসব ব্যাঙ্কিং স্টকে লগ্নিকারীরা ঐদিন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভারতে শেয়ার বাজারের পক্ষে আশাব্যঞ্জক ও স্বস্তির খবর হল বিদেশি লগ্নিকারীরা ঐদিন ৪,০০০ কোটি টাকার দেশী শেয়ারে লগ্নি করছেন এবং এই নভেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টররা ভারতের শেয়ার বাজারে প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন।
ভারতের শেয়ার বাজারে চাঙ্গাভাব অনেকটা নির্ভর করে এইসব বিদেশের লগ্নিকারীদের উপর। তবে দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ডস এবং অন্যান্য দেশীয় লগ্নিকারী সংস্থা বর্তমানে দেশের শেয়ারবাজারে বেশ উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করছে এবং অতিসম্প্রতি রিটেল ইনভেস্টররাও মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে শেয়ার বাজারে লগ্নি করছে।