খায়রুল আনাম,
নিউটাউনের ঘটনায় সতর্কতা
ভাড়াটিয়াদের তথ্য রাখার উপরে জোর দিচ্ছে পুলিশ
সাময়িক হলেও, একটি ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে বীরভূম জেলা পুলিশ প্রশাসনকে। কলকাতার প্রান্ত ঘেঁষা নিউটাউন উপনগরীর ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসন থেকে ৯ জুন গ্যাংস্টারদের গুলি বৃষ্টির সাথে জড়িয়ে গিয়েছে বীরভূম জেলার নাম। ৬ জুন সিউড়ির শেওড়াকুড়ি থেকে এসটিএফ পাঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড, বিহার হয়ে আসা একটি ট্রাক আটক করেই তা থেকে উদ্ধার করেছিলো ৫টি সেভেন এমএম পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৩০ রাউণ্ড গুলি ও ২০ কেজি কালো এবং লাল রঙের বিস্ফোরক। আটক করা হয়েছিলো গাড়ির চালক ও খালাসিকে। আর এই অভিযানের দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন বীরভূমের বিভিন্ন থানার ওসি হিসেবে কাটিয়ে যাওয়া কার্ত্তিকমোহন ঘোষ। নিউটাউনের অভিযানে সেখানে আত্মগোপন করে থাকা পাঞ্জাবের দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার জয়পাল সিংহ ভল্লার ওরফে মনজিৎ সিংহ এবং যশপ্রীত খারার ওরফে জাসসির খতম হলেও, সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এসটিএফের ইন্সপেক্টর কার্ত্তিকমোহন ঘোষ। আর এই ঘটনার সাথে বীরভূমের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বীরভূম জেলা পুলিশ এখন নড়েচড়ে বসেছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে স্থানীয় থানাগুলির মাধ্যমে এখন প্রচার করা হচ্ছে যে, কেউ বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে যেন তাঁর নাগরিকত্ব সম্পর্কে সমস্ত তথ্য নেওয়া হয় এবং তা স্থানীয় থানাকে জানানো হয়। হোটেল, লজে এসে যাঁরা থাকবেন তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ, সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ডের জেরক্স কপি জমা রাখার কথাও বলা হচ্ছে। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ঝাড়খণ্ড রাজ্য লাগোয়া হওয়ার জন্যই জেলা পুলিশ প্রশাসন এমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। বহু অবিক্রীত ফ্ল্যাটেও অনেকে এসে স্বল্পকালীন বা দীর্ঘ মেয়াদি ভাড়ায় থেকে যাচ্ছেন। যাঁদের সম্পর্কে কোনও তথ্যই ফ্ল্যাট বাড়ির মালিকরা থানায় জমা দেন না। শান্তিনিকেতনের আন্তর্জাতিক পরিচিতি থাকার সুবাদে এই এলাকায় দেশ-বিদেশের মানুষের আনাগোনা বেশি । যাঁদের অনেকেই এভাবে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থেকে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগেই শান্তিনিকেতনের তালতোড় এলাকা থেকে কয়েকজন ভাড়াটে খুনিকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। এক রাজনৈতিক ব্যক্তিকে খুনের উদ্দেশ্যে তাঁদের বাংলাদেশ থেকে এখানে আনা হয়েছিলো বলে জানা গিয়েছিলো। এক্ষেত্রে পুলিশ নয়, এক রাজনৈতিক ব্যক্তিই বিষয়টি জানতে পেরে বিষয়টি পুলিশের গোচরে আনার পরই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছিলো। একই ঘটনা দেখা গিয়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে। সেখানকার জঙ্গীযোগে উঠে এসেছে বীরভূমের নাম। বোলপুরের মুলুক গ্রাম থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিলো পার্শ্ববর্তী বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার শিমুলিয়া মাদ্রাসায়। বলা হয়েছিলো, মাদ্রাসার আড়ালে সেটিই ছিলো বড় ধরনের জঙ্গী ঘাঁটি। আর এই মুলুকের শান্তিপল্লিতে মুর্শিদাবাদ থেকে ফেরিওয়ালা হিসেবে এসে জঙ্গীরা এখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলো। কিন্তু পুলিশ পৌঁছবার আগেই ডেরা খালি করে চম্পট দিয়েছিলো জঙ্গীরা। বোলপুরের লালপুল, দর্জিপাড়া থেকে প্রান্তিক পর্যন্ত এখন এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং তাঁদের মধ্যে আসা-যাওয়াও রয়েছে। যাঁরা রীতিমতো বিলাসী জীবন যাপন করে থাকেন। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে, এইসব এলাকায় তল্লাশি চালানো হলেও, এখন আর কোনও বিধিনিষেধের বেড়া নেই। সবার পায়েই অবাধ যাতায়াতের ছাড়পত্র। এ যেন সেই গল্পের মতো। জঙ্গলে বাঘ লাফালে গাছের মগডালের পাখিরা ওড়ে। বাঘ তার নগালও পায় না। পাখিরা নিশ্চিন্তে বাসায় থাকে।।