মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
চলতি সপ্তাহেতেই বহু চর্চিত একুশে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ রয়েছে। তার আগেই ১৫,২৪৮ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বড়সড় স্বস্তি পেল রাজ্য সরকার। তাও দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লির সুপ্রিম কোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল পিটিশন দাখিল করেছিল।সেখানে আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের শর্তসাপেক্ষে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবার নির্দেশিকা কে বহাল রাখলো।গত ৪ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে টেট নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল।সেখানে রাজ্যের তরফে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল।পাশাপাশি দ্রুত শুনানির আবেদনও ছিল ওই পিটিশনে।ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের টেট নিয়োগে সিঙ্গেল বেঞ্চের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়,তবে তা বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে। আপিল পিটিশনে রাজ্যের দাবি ছিল যে, সিঙ্গেল বেঞ্চে রাজ্যের বক্তব্য ঠিকমতো শোনা হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ টেট নিয়োগে সিঙ্গেল বেঞ্চের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে জানিয়েছিল – ‘ দু সপ্তাহের মধ্যে টেট নিয়োগে মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে রাজ্য কে।তবে তা শুধুমাত্র ওয়েবসাইটে নয় পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, জেলা শিক্ষা সংসদে নোটিশ বোর্ডে টাঙাতে হবে।সর্বপরি মামলাকারী ৮৩০ জন টেট পরীক্ষার্থীদের আসন ফাঁকা রাখতে হবে ‘। টেট নিয়োগের বাকি মামলা গুলি পুনরায় ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গেল বেঞ্চে পাঠিয়েও দেয় ধারাবাহিক বিচারপর্ব চালু রাখার জন্য। টেট নিয়োগে স্থগিতাদেশ খারিজ একপ্রকার রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে যথেষ্ট গতি এনেছিল বলে মনে করেছে ওয়াকিবহাল মহল।।গত ২২ ফেব্রুয়ারিতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বড়সড় আইনী ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে গত ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষায় নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল সেখানে বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের সিঙ্গেল বেঞ্চ ১৬, ৫০০ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারী করেছিলেন।এই মামলার চুড়ান্ত রায় না প্রকাশ হওয়া অবধি এই স্থগিতাদেশ জারী থাকবে বলে সিঙেল বেঞ্চের নির্দেশ ছিল। শিক্ষক থেকে বনসহায়ক কিংবা পুরসভার মজদুর নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের বিভিন্ন এজলাসে চলছে অজশ্র মামলা।সবথেকে বেশি মামলা প্রাথমিক এবং উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে।গত মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরীর দায়ের করা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলাটি উঠেছিল। সেখানে মূলত শিক্ষক নিয়োগে এনসিটিই গাইডলাইন ঘিরে চলে সওয়াল-জবাব। এই কেন্দ্রীয় গাইডলাইন অনুযায়ী শুন্যপদ পূরণে প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক। সেখানে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত টানা ছয় বছর কোন শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা হয়নি।গত বছর ২৩ ডিসেম্বর রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে ১৬৫০০ টি পদ পূরণের বিজ্ঞপ্তি জারী ঘিরেই এই মামলা।হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ রাজ্যের কাছে শিক্ষক নিয়োগে এনটিসিই নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছিলেন ১ মার্চের মধ্যে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি পর্ব চলছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে বেশ কয়েকটি মামলা দাখিল হয়েছে গত দুমাসে। তাই এহেন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি একটু বেশি দীর্ঘায়িত উভয়পক্ষের সওয়াল-জবাবে। সম্প্রতি এইবিধ মামলা গুলি চারটি পর্যায়ক্রমে ভাগ করে শুনানি চলছে।এর আগে আইনজীবীরা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তোলেছিলেন রাজ্য সরকারের ( প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড) বিরুদ্ধে। অভিযোগ টি ছিলো – ‘ সম্প্রতি মালদা এবং বাঁকুড়া জেলায় মাত্র ৬ ঘন্টায় ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হয়েছে টেটের পরীক্ষার্থীদের। তাই চুড়ান্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা প্রবল’।যদিও মামলাকারীদের আইনজীবীদের কাছে এহেন অভিযোগ শুনেই বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবী কে কার্যত হুশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ‘যদি নির্ধারিত শুনানির আগেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়,তাহলে হাইকোর্ট চুপ করে বসে থাকবেনা’।আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন – রাতারাতি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তালিকা প্রকাশ হলে হাইকোর্ট সেই তালিকাতে স্থগিতাদেশ কিংবা বাতিল ঘোষণা করে দিতে পারে। গত ২৩ শে ডিসেম্বর রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কয়েক টি মামলা দাখিল হয়েছে। এরমধ্যে আরও একটি মামলা দাখিল হয়। মামলাকারী বিবেক গাজীর পক্ষে আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী মামলাটি দাখিল করেছেন । মূলত এনসিটিই আইনের ১৪ এবং ১৬ নং ধারা মানা হয়নি গতবছরের ২৩ শে ডিসেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলে দাবি।এই বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এই মামলা।ইতিপূর্বে আরেক আইনজীবী এই বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দাখিল করেছিলেন। মূলত গত ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার্থীদের ৬ টি ভূল প্রশ্নের নাম্বার অন্তর্ভুক্তকরণ নিয়ে। ওই মামলায় অবশ্য হাইকোর্ট চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৬ নাম্বার যুক্ত করে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে দাখিল করা মামলায় ন্যাশনাল স্কুল অফ টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) এর ১৪ এবং ১৬ নং ধারায় গাইডলাইন মেনে গতবছর ২৩ শে ডিসেম্বর ১৬৫০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি টি অবৈধ দাবি করা হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে ২০২০ পর্যন্ত টেটের কোন পরীক্ষা হয়নি।তাই ২০২১ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোন শুন্যপদ তৈরি হচ্ছেনা বলে মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি। বিগত বাম জমানায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বামেদের স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার ওই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করেছিল।তা সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে বৈধতা পেয়ে থাকে।।গত ২০০৭ সালে বাম আমলে জেলা ভিক্তিক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারী হয়েছিল। ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল।২০১১ সালে পালবদলের পর বাম আমলেও এই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করে তৃণমূল সরকার। তবে তা মামলাকারীদের সৌজন্যে আদালতের আদেশে কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ চলেছে। তবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা সহ হাওড়া জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।২০১৭ সালে দায়ের করা হাইকোর্টের মামলায় ওইদিন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে ৩০ দিনের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবার নির্দেশ জারি হয়েছিল।প্রথম পর্বে ১৫ দিনে পরীক্ষার্থীদের মেধা তালিকা প্রকোশ।পরবর্তী ১৫ দিনে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন, ইন্টারভিউ সহ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবার নির্দেশ ছিল উক্ত মামলার আদেশনামায়।শুন্যপদ না থাকলে রাজ্য সরকার কে শুন্যপদ তৈরি করে ফেলতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬০০ এবং হাওয়ায় ১৩৩১ টি শুন্যপদ পূরণে তৎপর হতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টে অন্য বেঞ্চে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিগত বাম জমানায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলা বিচারধীন রয়েছে, তাই ওইদিনকার আদেশনামা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য কার্যকর হয়নি।তবে অর্ডারকপি ওই মামলায় যুক্ত করলে মামলাকারীদের নিয়োগে সবুজ সংকেত পেতে পারেন আদালতে। এইরূপ মনে করছে আইনজীবীদের একাংশ। উল্লেখ, গত বছরে ২৩ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে সাড়ে ১৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ঘোষণা করেছেন।একাধারে ২০০৭ সালে এই শিক্ষক নিয়োগে আদেশনামা এবং সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার্থীদের ভূল প্রশ্নের অতিরিক্ত ৬ নাম্বার সংযোজন করে মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশজারি হয়েছে। এইরুপ পরিস্থিতি তে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে গত ২৩ শে ডিসেম্বর রাজ্যের জারি করা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলার শুনানি চলছে। মূলত এনসিটিই এর ১৪ এবং ১৬ নং ধারার গাইডলাইন না মেনে এই বিজ্ঞপ্তি টি অবৈধ দাবি করেছেন মামলার আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী মহাশয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে মামলার শুনানি চলেছিল।সেখানে মামলাকারীর আইনজীবী মাত্র ৬ ঘন্টায় বাঁকুড়া ও মালদা জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ইন্টারভিউ পর্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।আশংকা ছিল, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে ফেলবে রাজ্য সরকার। তবে মামলাকারীদের আইনজীবীর কাছে এহেন অভিযোগ শুনেই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ রাজ্য কে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, রাতারাতি নিয়োগ তালিকা প্রকাশ পেলে কড়া অবস্থান নেবে হাইকোর্ট। চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চলছে এইবিধ মামলার শুনানি।গত শুনানিতে হাইকোর্ট প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এনসিটিই গাইডলাইন সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল ১ মার্চের মধ্যে। গত ২২ ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৬৫০০ জন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারী করে থাকে। মামলার চুড়ান্ত রায়দান অবধি এই স্থগিতাদেশ জারী থাকবে বলে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ ছিল।গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকার সিঙ্গেল বেঞ্চের টেট নিয়োগে স্থগিতাদেশ জারীর বিরুদ্ধে আপিল পিটিশন দাখিল করে। গত ৪ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে সিঙ্গেল বেঞ্চের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। মামলাকারী ৮৩০ জন টেট পরীক্ষার্থীর আসন ফাঁকা রাখবার পাশাপাশি দু সপ্তাহের মধ্যেই মেধা তালিকা প্রকাশ। তাও শুধু ওয়েবসাইটে নয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সহ ডিআই অফিসে টাঙাতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল পিটিশন দাখিল করেছিল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীরা।আজ সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কে বহাল রাখলো। তাতে চরম স্বস্তিতে রাজ্য সরকার। তাও একুশে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের আগেই!