তিন বছর পরে শ্রীনিকেতনে আনন্দের রেশ
ভোরের সানাই ও বৈতালিকের মধ্যে দিয়ে সূচনা মাঘোৎসবের
খায়রুল আনাম
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে স্বয়ং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেছিলেন, তাঁর স্বপ্নের বিশ্বভারতী বেঁচে থাকলে কলা আর সঙ্গীতকে আধার করে বেঁচে থাকবে। আর এই বিশ্বভারতীকে সজীব রাখতে তিনি এখানকার সুরুলের জমিদারদের কাছ থেকে কুঠিবাড়ি কিনে নিয়ে প্রতীষ্ঠা করেছিলেন শ্রীনিকেতনের। আশপাশের গ্রামের মানুষদের সঙ্গে বিশ্বভারতীর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে তিনি এখানে প্রবর্তন করেন মাঘোৎসবের। শ্রীনিকেতনকে পূর্ণতা দিতে তিনি পুত্র রথীন্দ্রনাথকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য। পল্লি-পুনর্গঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সুরুল কুঠিবাড়িতে পল্লি ভাবনায় শুরু হয় ‘ইনস্টিটিউট অফ রুলাল রিকনস্ট্রাকশন’-এর কাজ। রবীন্দ্রনাথের এই গ্রামীণ ভাবনার সাথে একাত্ম হয়ে বিদেশ থেকে লিওনাদ এলমহার্স্ট স্ত্রী ডরোথিকে নিয়ে পল্লি-পনর্গঠন কাজে হাত লাগান। রবীন্দ্রনাথের এই কর্মকাণ্ডের শরীক আরেক বিদেশী দীনবন্ধু এন্ড্রুজ। আশপাশের গ্রামের মানুষদের উৎপন্ন ফসলের প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরী করতে উৎপন্ন সেরা ফসলের প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করে দিতে মাঘ মাসে বা ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রীনিকেতনে সূচনা হয় মাঘ মেলা বা মাঘোৎসবের। এটিই শ্রীনিকেতনের বার্ষিক উৎসব। এখানে অনুষ্ঠিত হয় হল কর্ষণ উৎসবও। সুরুলের জমিদারদের কাছ থেকে এখানকার কুঠিবাড়ি কিনে নেওয়ার পরে এই মাঘোৎসবের সূচনা হওয়ায় আজও এই এলাকার মানুষের কাছে এটি কুঠির মেলা নামেও পরিচিত। আজও এই মেলায় আশপাশের গ্রাম এলাকার কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের প্রদশর্নী ও সেরা কৃষকদের সম্মাননা জানানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়াও ব্রতী বালকদের খেলাধূলা, শিশু প্রদর্শনী, বাউল গান, লোকসঙ্গীত, সুফি ও বাউল গান এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ ।
তিন বছর পরে এবার ৬ ফেব্রুয়ারী সূচনা হলো তিন দিনের মাঘোৎসবের। কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প সামগ্রী-সহ অন্যান্য সামগ্রীর ১২০ টির বেশি দোকানে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এবারের মাঘোৎসবের সূচনা করেন এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি অ্যাপ্লিকেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা প্রদীপ দে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সঞ্জয়কুমার মল্লিক বলেন, সমগ্র বিশ্বভারতী গুরুদেব শুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরীর হলে শ্রীনিকেতন অবশ্যই তাঁর হাত।
ছবি : উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।