মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু ,
পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট বরাবরই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত নাম। এই মঙ্গলকোটের ভূমিপুত্র ছিলেন তৃনমূলের জনপ্রিয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত পাঁজা।আবার বাম আমলে একদা জাঁদরেল সাংসদ হিসাবে ছিলেন নিখিলালন্দ সর মহাশয়। নকশাল আন্দ্রোলনে রাজ্য নেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন অশোক মল্লিক।এইরুপ ডান বাম হেভিওয়েট নেতাদের জন্মভূমি মঙ্গলকোট ক্রমশ কুখ্যাত হয়েছে ২০০৯ সালে ১৫ জুলাই নিহত সিপিএম নেতা ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে কং বিধায়কদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায়। মঙ্গলকোটের ধান্যরুখিতে জমির মেঠোপথ ধরে মানস ভুঁইয়ার সেই দৌড় বাঙালি ভূলেনি!এরপর মঙ্গলকোটে সিপিএম নেতা ডাবলু আনসারীর দলবলের হাতে একের পর এক খুন মঙ্গলকোট কে রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ হিসাবে বাংলার কাছে পরিচিতি দিয়েছে। বাম জমানার অবসান ঘটলেও শাসক দলের আভ্যন্তরীণ বিবাদে রক্তাক্ত হয়েছে তৃণমূলের একাংশ। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী শুন্য এলাকা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে তৃণমূল। এহেন মঙ্গলকোটে তৃনমূলের দুই যুযুধান শিবিরের অন্তর্ঘাত কে সামনে রেখে গেরুয়া শিবির প্রস্তুতি নিচ্ছে আগামী বিধান সভার ভোটের কথা ভেবে।বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বনাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর বনিবনার মাঝেই রাজনৈতিক মাটি ক্রমশ শক্তিশালী করছে বিজেপি।মঙ্গলকোটের সদর মঙ্গলকোটের সমগ্র অঞ্চল এবং ঝিলু ১ এবং ঝিলু ২ নং অঞ্চলের একাংশের ভোট ম্যানেজ করতে পারলে বিজেপি এখানে লড়াই দেবে। এইরূপ মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মঙ্গলকোট বিধানসভার ১৮ টি অঞ্চলের মধ্যে ১০ টিতে তৃণমূলের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ নেই। কাটমানি ইস্যুতে বেসামাল মঙ্গলকোটের বেশ কয়েকজন গ্রামপ্রধান / উপপ্রধান জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামছাড়া পর্যন্ত হয়েছিলেন। স্থানীয় থানার পুলিশও আদিবাসী মহল্লায় অবরুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছিল একসময়। এখন সব অতীত।মঙ্গলকোটের বিজেপি প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম উঠে আসছে,তাঁরা হলেন অলোক তরণ গোস্বামী, প্রশান্ত কুমার দাস, নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় এবং চন্দ্রনাথ মুখার্জি। গত দুটি বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন অলোক তরণ গোস্বামী। যিনি রাজনৈতিক লড়াই করতে গিয়ে বাম আমলে বেশকিছু খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। তবে এই মামলা গুলিতে তিনি খালাস হয়েছেন আদালতের নির্দেশে।ভোটব্যাংকে সেভাবে প্রতিফলন ঘটাতে পারেনিনি অলোকবাবু।কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি ছেড়ে গত লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন মঙ্গলকোটের কৈচরের বাসিন্দা আইসিএস প্রশান্ত কুমার দাস মহাশয়। গত লোকসভা নির্বাচনে জিততে না পারলেও ভালো সাড়া ফেলেছিলেন প্রশান্ত বাবু।অপরদিকে আউশগ্রামের গুসকারা পুরসভার একদা প্রভাবশালী তৃণমূল কাউন্সিলর নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায় বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডল কে সরাসরি হুমকি ( কুড়ি লক্ষ টাকা ফেরত প্রসঙ্গে) দিয়ে দু সপ্তাহের সময়সীমায় জেলে ছিলেন। তিনি সম্প্রতি নাম লিখিয়েছেন বিজেপিতে।আউশগ্রামের এই রাজনৈতিক নেতা জেলা রাজনৈতিক মহলে সুবিধাবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত। নানান বিতর্ক রয়েছে নিতাই বাবু কে ঘিরে।অলোক তরণ গোস্বামী, প্রশান্ত কুমার দাস, নিত্যানন্দ চট্টপাধ্যায়দের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় এগিয়ে চন্দ্রনাথ মুখার্জি ওরফে বাবলু মুখার্জির নাম।বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই নেতা গত ২০০১ সালে মঙ্গলকোট বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠন হওয়ার পর ‘সর্বপ্রথম’ বিধানসভার ভোটে বাম বিরোধী হিসাবে ভালো ভোট পেয়েছিলেন চন্দ্রনাথ মুখার্জি। ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা দশবছর মঙ্গলকোটে যারা সিপিএমের অত্যাচারে এলাকাছাড়া হয়েছিলেন। তাদের আশ্রয়দানের পাশাপাশি দুবেলা খাবার ও কর্মসংস্থান করে গেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। যেখানে রাজনীতি করে নেতারা গাড়ি বাড়ি করে নিয়েছেন। সেখানে চন্দ্রনাথ মুখার্জির বুনিয়াদি বাড়ীর ছাদ ভেঙ্গে পড়ছে পরোপকারী হতে গিয়ে।এইরূপ জানা গেছে স্থানীয় সুত্র মারফত। তাই দলবদল করে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে গেলেও মঙ্গলকোটের আদি তৃনমূলীরা আজও ‘ব্যক্তি’ চন্দ্রনাথ মুখার্জি কে ভালোবাসে।যার ফলস্বরূপ বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলকোটে টিকিট পেলে তৃণমূলের একাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পাশাপাশি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মঙ্গলকোটে চন্দ্রনাথ মুখার্জির প্রতি মুসলিম ভোটারদেরও আলাদা বিশ্বাস রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে।