মঙ্গলকোটে বড়সড় রাজনৈতিক হিংসা রুখে দিল মঙ্গলকোট থানার পুলিশ
পারিজাত মোল্লা ,
সেখ রাজু,
শুক্রবার সকালেই সদর মঙ্গলকোট এলাকায় এক তৃণমূল অফিসের দখল – বেদখল ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য পড়ে গেল। যদিও মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ মুখোমুখি সংঘর্ষ এর আগেই বিশাল বাহিনী নিয়ে পৌঁছে যান।পরবর্তীতে কাটোয়া মহকুমা পুলিশ অফিসার কাশীনাথ মিস্ত্রি নিজে এসে পুরো ঘটনার পূঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ চালান ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে। সীমান্তবর্তী ভাতাড়-কেতুগ্রাম-কাটোয়া এমনকি বর্ধমান সদর থেকে বাহিনী আসে মঙ্গলকোটে।পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারা বসে এই দলীয় অফিসে।যেভাবে দুশো – আড়াইশো ব্যক্তি লাঠিসোঁটা সহ রড নিয়ে মুখোমুখি চলে আসে। সেখানে মঙ্গলকোট আইসি লোকজন জড়ো হওয়ার সাথে সাথেই অভিযান না চালালে এদিন হয়তো হানাহানির ঘটনা নিশ্চিত ঘটতো বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ২০০৯ সালে ১৫ জুলাই উত্তর-পূর্ব মঙ্গলকোটের ধান্যরুখিতে তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার জমির আলপথে সেই দৌড় টি কেউ ভুলেননি বোধহয়!রাজ্যে পালাবদলের আগে এই মঙ্গলকোটে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে তিনজন ব্যক্তিত্ব,সিপিএমের জোনাল নেতা সহ রাজনৈতিক নেতা – জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে খুন হয়েছেন।রাজ্যে ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার এলেও খুনোখুনির ইতিহাস অক্ষত রয়ে গেছে। আজাদ মুন্সি – ডালিম সেখ – অসীম দাসদের মতো তৃণমূল নেতারা দলীয় বিবাদে নিহত হয়েছেন এই মঙ্গলকোটের বুকে। ২০১৩ সালে পর থেকে বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোট। ২০২২ সালে জেলযাত্রার আগে পর্যন্ত মঙ্গলকোটে নিরঙ্কুশ প্রভাব ছিল অনুব্রত মন্ডলের। এহেন বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটে ফের তৈরি হচ্ছে অশান্তির ঘনকালো মেঘ। যার প্রতিফলন পাওয়া গেল শুক্রবার সাতসকালেই।থানা লাগোয়া তৃণমূল অফিসে দখল অভিযান ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য পড়ে গেল সদর মঙ্গলকোট এলাকায়।৭ নং রাজ্য সড়কের (বাদশাহী রাস্তা) ধারেই হাসপাতাল লাগোয়া এলাকায় অবস্থান করছে তৃণমূল অফিস। এই অফিসে থাকেন শান্ত – লাল্টুর অনুগামীরা। চন্দন সরকার ওরফে শান্ত হলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। একদা মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন। লাল্টু হলেন তৃনমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতা।যারা জেল তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী।অপরদিকে মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান উপপ্রধান রহিম মল্লিক হলেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর অনুগামী। রহিম একদা মঙ্গলকোট বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামী ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মঙ্গলকোট বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সাথে তৎকালীন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর বিরোধ রাজ্য রাজনীতিতে বারবার আলোকিত হত।রাজনৈতিক ময়দানে কেউ চিরশত্রু, কেউ চিরবন্ধু হয়না। বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন -”দলের অফিসে দলের লোকজন বসলে অসুবিধা কোথায়?” অপরদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক চন্দন সরকার ওরফে শান্ত বলেন -”আমাদের পৈতৃক জায়গার উপর এই দলীয় অফিস।সেখানে অশান্তি করা লোকজন কেন সশস্ত্র ভাবে হামলা করবে?” জানা গেছে, গত চতুর্থ দফা নির্বাচনে এলাকার মানুষজন নিজ নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যারা বিক্ষুব্ধ হিসাবে পরিচিত, তারা এবার উপেক্ষিত হয়েছেন ভোটের ময়দানে। শুক্রবারের দলীয় অফিস দখল ঘটনা টি ইতিমধ্যেই জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রাজ্য নেতৃত্ব কে জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে । আগামী ৪ জুন লোকসভার ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন পরবর্তীতে এই সমস্যা মিটবে।তবে মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েত, ঝিলু ২ নং পঞ্চায়েত, লাখুড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকা গুলি রাজনৈতিক হানাহানির উত্তেজনা রয়েছে। এইসব এলাকায় চোরাগোপ্তা হুমকি দেওয়া চলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৩ টি গাড়ি এবং স্থানীয় থানার গাড়িগুলি টহল দিচ্ছে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে। মঙ্গলকোট আইসি মধুসূদন ঘোষ জানিয়েছেন -” অশান্তি রুখতে সবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে “। জানা গেছে, এই ঘটনার উপর জেলার পুলিশ সুপার বিশদ খবরাখবর রাখছেন।