মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহাসিক প্রতীক সুফি সাধক আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ, যিনি ‘হামিদ বাঙালি’ নামেই পরিচিত সবার কাছে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু ছিলেন আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ।যাঁর সমাধিস্থল রয়েছে মঙ্গলকোট গ্রামে।এই সমাধিস্থলের পাশেই রয়েছে মুঘল আমলের গড়া এক মসজিদ। যেখানে ( মসজিদের ঈদগার) ঈদের নামাজ পড়তে আসেন অসংখ্য এলাকাবাসী। কেননা এই মসজিস সহ অন্যান্য মুসাফিরখানা, শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক আয় ৯৩ হাজার স্বর্ণমুদ্রার খরচে। তাই অতীতের গরিমা কে সামনে রেখে ঈদের নামাজ পড়তে ঢল নামে এখানে। প্রসঙ্গত, সূদুর পারস্য থেকে সুফি সাধক আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ মঙ্গলকোটের আঠারো অলির টানে পায়ে হেঁটে এসেছিলেন। এবং পরবর্তীতে এলাকায় থেকেও যান আমৃত্যু পর্যন্ত। আফগান – মুঘল যুদ্ধের সময় শাহজাদা খুরম ( পরবর্তীতে শাহজাহান বাদশা) মিত্রপক্ষ বর্ধমানের রাজাদের কাছে এসেছিলেন। সেসময় মঙ্গলকোটে নিবাসী পারস্যের সুফি সাধক আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ এর মহত্মের কথা জানতে পারেন।পরবর্তীতে ভারতের সিংহাসনে মুঘল সম্রাট হিসাবে শাহজাহান বাদশা দায়িত্ব নেওয়ার পরই তাঁর শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ এর টানে সূদুর দিল্লি থেকে পায়ে হেঁটে এই মঙ্গলকোটেই আসেন। ইতিহাসে এইরকম গুরুভক্তি বিরল বলা যায়।যেমন সূদুর পারস্য থেকে মঙ্গলকোটের আঠারো অলির টানে পায়ে হেঁটে এসেছিলেন আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ। ঠিক তেমনি মুঘল আমলের সম্রাট শাহজাহান বাদশা তাঁর শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ এর টানে সূদুর দিল্লি থেকে পায়ে হেঁটে এই মঙ্গলকোটে আসেন।মুঘল সাম্রাজ্যের শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু উপাধি দেওয়া হয় এই সুফি সাধক কে।মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক আয় ৯৩ হাজার স্বর্ণমুদ্রা মঙ্গলকোটে শিক্ষা, ধর্মীয়, সহ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে দেওয়া হয় বলে জানা যায়। মুঘল আমলের শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ নিজেকে পারস্যের বাসিন্দা, কিংবা মুঘল – আফগান বলে পরিচয় দিতেন না।নিজেকে ‘বাঙালি’ বলেই পরিচিত হতেন সবার কাছে।যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক ঐতিহাসিক প্রতীক বলা যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার মঙ্গলকোটের ১৪০ টির বেশি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া হলো। এদিন মঙ্গলকোট থানার আইসি পিন্টু মুখার্জি ৬০ টির বেশি মসজিদে ঈদের নামাজ শেষে ইমাম সাহেব সহ অন্যান্য ধর্মপ্রাণদের রাজ্য পুলিশের পক্ষে অভিনন্দন বার্তা, ফুলের তোড়া সহ মিস্টির প্যাকেট তুলে দেন।যার মধ্যে মঙ্গলকোট গ্রামে একদা মুঘল সম্রাট শাহজাহান বাদশার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরু আব্দুল হামিদ দানেশখান্দ এর গড়া মসজিদ অন্যতম। মুঘল যুগে একজন পারস্য থেকে আগত সুফি সাধক নিজেকে বাঙালি পরিচিতিতে থাকতেন তা সত্যিই এক উজ্জ্বল নিদর্শন। মঙ্গলকোট আইসি পিন্টু মুখার্জি জানান – ” বাংলা কে এবং বাঙালি কে গভীরভাবে ভালো না বাসলে ভারতের বাইরে কোন ব্যক্তি নিজেকে বাঙালি বলেনা। সমস্ত ধর্মীয় ভেদাভেদ কাটিয়ে তিনিই তো ‘প্রকৃত’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহাসিক প্রতীক। খুব ভালো লাগছে এইরকম ব্যক্তিত্বের স্মৃতিভূমি তে আসতে পেরে”।