মনের কথা,
চিত্রা কুণ্ডু বারিক,
যখন আমি এই জীবনে থাকবো না। আমার মনের ইচ্ছেগুলো একটু যেন যত্ন করে রাখে। আমার ইচ্ছেগুলো চারিদিক ছড়িয়ে আছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে, একটু গুছিয়ে রেখো। আর যদি ভালো না লাগে , তাহলে যেখানে মন চায় বিলিয়ে দিও।
আমার স্বপ্নগুলো এখনো ঘরের কোণে জমা হয়ে আছে। আমার স্বপ্নের সাজিয়ে রাখা একটা সংসার আছে তুলে রেখেছি ওই রান্না ঘরের প্রথম তাকে। যেখানে এতদিন একটা মন দিয়ে নানান স্বাদের কম বেশি টেস্টের খাবার হতো। সেটা যে মেয়েটি অনেক স্বপ্ন দেখেও সুযোগ পায় নি তাকে উপহার দিও। সাথে নিজের হাতে তৈরি করা কত ধরনের মশলা আছে, সেটাও অবশ্যই যেন সেই মেয়েটিই পায়।
বাইরের বারান্দায় একটা বস্তায় ভরে অনেক মান অভিমান রাখা আছে, সেটা বারান্দার ঠিক ডানদিকে উঁকি দিয়ে দেখলে একটি ভ্যাট দেখা যায় সেখানে ছুঁড়ে ফেলে দিও, কারণ ওটা জঞ্জাল।
আয়নায় রাখা কিছু রাগ, হিংসা আর আর্তনাদ, কিছু রং রাখা আছে যা ধূলোয় মিশে গেছে তা ভেঙেচুরে আগুনে গলিয়ে দিও। তার সাথে কিছু রঙিন চুড়ি তবে সখ করে কেনাই ছিল কখনো পড়ে দেখা হয়ে ওঠে নি, তাই সেগুলো কোনো মেয়ের হাত ফাঁকা থাকলে সুন্দর করে পরিয়ে দিও। তাতে জীবনের আফশোস টুকু আমার মিটবে।
জুতোর বাক্সে কিছু নতুন চটি আছে, ওই যে রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু মানুষ যাদের খালি পায়ে নিত্যদিন এখানে ওখানে ছুটতে হয় তাদের দিও। ভীষণ আরাম পাবে।
আমার কষ্টগুলো বাথরুমের নর্দমায় ফেলে দিও কেউ যেন ছুঁতে না পারে। আর বালিশে নিঙড়ে রাখা চোখের জল আছে সেটা পথে শুয়ে থাকা কোনো গরিব মানুষের জন্য রেখো। অনন্ত মাথায় আরাম বোধ করবে।
আর আমার যেটুকু বাকি থেকে গেছে সামান্য কিছু শান্তি, সেটা এমন কাউকে দিও যে মানুষ খুশি হবে।
আর যে মায়েরা খিদে পেটে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। যে ঘরের গৃহবধূর কপালে সারাদিন খাটনি পর মুখে অন্ন বস্ত্র জোটে না, ওই যে বড় আলমারিতে ভর্তি শাড়ি এবং সামান্য কিছু গয়না আছে তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিও।
আর আমার ভালবাসার যন্ত্রণা, যেটা কখনো প্রকাশ পায়নি। সেগুলো লেখা আছে একটা মর্চে ধরা টিনের বাক্সে। সেগুলো নয় সেখানেই থাক। কখনো যদি কোনো চিত্রকর ছবি করে তবে তার হোক।