সেখ মিলন (ভাতাড়, পূর্ব বর্ধমান)
সমাজ সভ্যতা বিকাশের জন্য প্রয়োজন সৎ সমাজকর্মীর। বর্তমান সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা কাজ নয় বড় বড় কথাবার্তার মাধ্যমে বিশ্বজয় করেন। অন্যের কাজের সমালোচনা করতেও তারা বিন্দুমাত্র পিছপা হন না। তবে এই সমস্ত মানুষকে গুরুত্ব না দিয়ে সমাজ সভ্যতার অগ্রগতির কাজে দেখা গেছে বহু সমাজকর্মীদের। তেমনি এক নিদর্শন ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা। কথায় নয় বিভিন্ন সমাজ কল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষদের মন জয় করেছেন ভাতার পূর্ব বর্ধমান গ্রুপের সদস্যরা। গুটি কতক বন্ধুবান্ধব মিলে ‘ভাতার পূর্ব বর্ধমান ফেসবুক’ গ্রুপ তৈরি করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দেখতে দেখতে প্রায় কয়েক বছর পার হয়ে গেছে। বর্তমানে গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। বিগত কয়েক বছরে একাধিকবার রক্তদান শিবির, বস্ত্র বিতরণ, হুইল চেয়ার প্রদান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে নিযুক্ত থাকাটা ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের কাছে প্রতিনিয়ত অভ্যাস। তবে এদিন এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে আবারও একবার মানবিকতার পরিচয় দিল ফেসবুক গ্রুপে সদস্যরা। পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামের বড়া চৌমাথা সংলগ্ন লাফারপাড়ার রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধার জীবনযাত্রার অসহায় চিত্র তুলে ধরেন গ্রুপের এক সদস্য সৌরভ ঘোষ। পাশাপাশি সাতদিন টিভি সহ দৈনিক এক সংবাদ পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হন গ্রুপের সদস্য। জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানার আলমপুর এলাকায় ছেলে বৌমার কাছে থাকতেন বছর ৭৫ বয়সী গন্ধেশ্বরী কর্মকার নামে এক বৃদ্ধা। তাঁর ছেলে বিনোদ কর্মকার বড়া চৌমাথা সংলগ্ন লাফারপাড়া এলাকায় এটি কামারশালা তৈরি করেন জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। বৃদ্ধার দাবি, ছেলে বৌমার অশান্তির ফলে ছেলে বড়াচৌমাথায় চলে আসার পর তাঁর বৌমা তাঁকেও বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এরপরই ওই বৃদ্ধা তাঁর ছেলের কাছে বছরখানেক ধরে বড়া চৌমাথা সংলগ্ন লাফারপাড়া এলাকায় একটি ছিটেবাড়ার মাটির বাড়িতে থাকতেন। এখানে কামারশালা থেকে সেভাবে আয় না হওয়ার ছেলে ভিন্ন রাজ্যে কাজে চলে যায়। মাসে ৫০০ টাকা করে পাঠিয়ে দিতেন তাঁর মায়ের জন্য। মাসখানেক আগে ঝড় বৃষ্টির ফলে ওই বৃদ্ধার ঘরের চাল উড়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টিতে চরম দূর্দশার মধ্যে জীবন কাটাতে হয় ওই বৃদ্ধাকে। অসহায় বৃদ্ধার দুর্দশার চিত্র সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেতেই ওই বৃদ্ধার ঘর তৈরির উদ্যোগী নেন ভাতার পূর্ব বর্ধমান ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা। গ্রুপের সদস্যদের পূর্ণ সহযোগিতায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে ওই বৃদ্ধার চাইনা প্রাচীরের বাড়ি তৈরি করা হয়। শনিবার প্রবল ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাত পর্যন্ত থেকে বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করেন গ্রুপের সদস্যরা। ভাতার পূর্ব বর্ধমান গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ভাতারের ঘোলদা গ্রামের বেশ কিছু যুবক। বাড়ি তৈরি হওয়ায় খুশি ওই বৃদ্ধা। তিনি গ্রুপের সকল সদস্যদের প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করেন। ভাতার পূর্ব বর্ধমান ফেসবুক গ্রুপের সদস্য অমিত সরকার, হুম কুমার রানা, সংকল্প সেনগুপ্ত, সৌরভ ঘোষরা জানিয়েছেন, গ্রুপের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই যাদের সহযোগিতায় একের পর এক সমাজ কল্যাণ মূলক কাজ করে যেতে পারছি। আগামী দিনেও এই ধরনের কাজে অঙ্গীকারবদ্ধ আমরা। বড়া চৌমাথা ঠাকুরমার বাড়ি নির্মাণ হলো। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রুপের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে আমরা হাসিমুখে ঠাকুমাকে গৃহপ্রবেশ করাবো। ঠাকুরমার মতো মানুষের মুখের হাসিই আমাদের আগামী দিনের পথ চলার প্রেরণা।