জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জি,
আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ওদের দেখা যেত। খাকি জামা ও হাফপ্যান্ট পড়ে গ্রামের রাস্তায় ওরা হেঁটে বা সাইকেল চেপে ঘুরে বেড়াত। কাজ ছিল ঢেঁড়া পিটিয়ে সরকারি নির্দেশ প্রচার করা বা নোটিশ টাঙানো, গ্রামে কোনো অঘটন ঘটলে সেটা থানায় গিয়ে জানিয়ে আসা ইত্যাদি। ওদের পোষাকি নাম ছিল ‘চৌকিদার’।
বাম আমলে বিলুপ্ত হলেও তৃণমূল আমলে ২০১২ সালের মে মাসে পদগুলি আবার ফিরে আসে। তবে এবার অন্য নামে। পোষাকি নাম হয় ‘ভিলেজ পুলিশ ভলান্টিয়ার’ সংক্ষেপে ভি.পি। এক সরকারি নির্দেশনামায় রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতে দৈনিক ৩১০ টাকার বেতনে (বাস্তবে মজুরি) প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভি.পি নিয়োগ করা হয়। প্রথমে বলা হয় মাসে ২২ দিন কাজ পাবে এবং ১৪ দিন অন্তর একদিন বিশ্রাম। পরে বলা হলো একটানা ৯০ দিন কাজ করার পর দুই দিন বিশ্রাম।
নাম যাইহোক, কাজের চাপ আগের থেকে অনেক বেশি হলো। এলাকার কোনো গণ্ডগোল, দুর্ঘটনা, রাস্তা অবরোধ, অস্বাভাবিক মৃত্যু, নতুন আগমন, সন্দেহজনক গতিবিধি ইত্যাদি সরাসরি থানার ওসি বা আই.সিকে জানাতে তো হয়, এছাড়াও রাজ্য পুলিশের সঙ্গে থেকে মোবাইল ভ্যান পেট্রোলিং, নাকা চেকিং, কোর্টের সমন জারি, আসামী নিয়ে কোর্টে যাওয়া, এমনকি ভোটের সময় ডিউটিও করতে হয়। এককথায় পঞ্চায়েত এলাকায় এরাই হলো পুলিশের চোখ-কান। দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এদের মাধ্যমেই গোটা রাজ্যে পুলিশের পক্ষে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ হয়ে উঠেছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এত কাজ করেও গত আট বছরে এদের বেতন এক টাকাও বাড়লনা। নিয়োগের সময় দিন প্রতি বেতন ৩১০ টাকা ছিল, এখনো সেটাই থেকে গেছে। অথচ সরকারের অন্যান্য চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারীদের বেতন যথেষ্ট বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভি.পি বললেন – যেভাবে জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে তাতে দৈনিক ৩১০ টাকা বেতনে সংসার চালানো কঠিন কাজ। সরকার যদি সহানুভূতির সঙ্গে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে তাহলে একটা সুরাহা হয়। তবে তাদের একটাই আশা যেহেতু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে আছেন মমতাময়ী মমতা ব্যানার্জ্জী হয়তো অন্যান্যদের মত তাদেরও বেতন বৃদ্ধি হবে।