মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত কর্মসাথী প্রকল্পের আওতায় পরিযায়ী শ্রমিকরা

Spread the love

জেলায় নব্বই হাজারের বেশি নাথ  নথিভুক্ত

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত কর্মসাথী প্রকল্পের আওতায় পরিযায়ী শ্রমিকরা

       খায়রুল   আনাম

কৃষি প্রধান জেলা বীরভূমে শিল্পক্ষেত্রে বন্ধ্যাভাব থাকার কারণে, এজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু সংখ্যক মানুষ জীবীকা  অন্বেষণের  তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিন্নরাজ্যে পারি  দেয়। কেউ কেউ সুযোগ পেলে বিদেশেও যায়।  কিন্তু এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে  সরকারের কাছে কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান না থাকার কারণে সেইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ বাইরে বিপদে পরলে বা কোনও দুর্ঘটনায় কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলে তাঁদের পরিবারের লোকজন মৃতদেহ বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েন। বিগত বছরের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরে হাওড়াগামী  করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পরলে অনেকেই মারা যান। যারমধ্যে এরাজ্যের যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বীরভূমের পরিযায়ী শ্রমিক। কৃষি প্রধান জেলা বীরভূমে চাষের মরশুমে কৃষিকাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিনরাজ্যে পারি দেন। মৃত এইসব পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে সরকারের হাতে সঠিক কোনও তথ্য-পরিসংখ্যান না থাকার কারণে সেইসব মৃতদেহগুলি পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে চরম সমস্যা দেখা দেয়।

    এই পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বিষয়ে সমস্ত তথ্য-পরিসংখ্যান  সরকারিভাবে নথিভুক্ত করে রাখতে  ‘কর্মসাথী’ প্রকল্পের সূচনা করেন। তারপরই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়  পরিযয়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তিকরণ  শুরু হয় কর্মসাথী প্রকল্পে। বীরভূম জেলায় দুয়ারে সরকার প্রকল্পে এবং বিশেষ শিবির করে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণ শুরু হয়।  এই কর্মসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলে  কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের  ভিনরাজ্যে গিয়ে মৃত্যু হলে, মৃতের  পরিবারকে সরকারিভাব আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। বিদেশে গিয়ে কোনও পরিযায়ী  শ্রমিকের মৃত্যু হলে, মৃতদেহে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য মৃতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে।  দুর্ঘটনায় কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের অঙ্গহানি হলে তাঁকেও দেওয়া হয় আর্থিক সহযোগিতা। বাইরে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা পারিশ্রমিক না পেলে রাজ্য শ্রম দফতর সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা বিদেশে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে  শ্রমিকের পারিশ্রমিক উদ্ধারের ব্যবস্থাও করবে।   এছাড়াও নির্মাণ শ্রমিকদের ৭০০ টাকা ও পরিবহন  শ্রমিকদের ১,৫০০ টাকা  পেনশন দেওয়ারও সংস্থান রাখা হয়েছে এই  কর্মসাথী প্রকল্পে।  বীরভূম জেলাতে দু’টি দুয়ারে সরকার এবং বিশেষ শিবির করে বিগত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত  জেলার  ৯০ হাজার  ৪২৮ জন পরিযায়ী শ্রমিকের নাম কর্মসাথী প্রকল্পে নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এরমধ্যে রাজনগর,  খয়রাশোল,  মুরারই, নলহাটি, নানুর, বোলপুর ও ইলামবাজার ব্লকে সবচেয়ে  বেশি পরিযায়ী  শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। করোনাকালে ‘লকডাউন’  ঘোষিত হওয়ার পরে এইসব এলাকার পরিযায়ী পুরুষ-মহিলা শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে যে ভাবে নিদারুণ  কষ্টের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, সেইসব দৃশ্য  দেখে অনেকেই শিহরিত হয়েছিলেন।  এইসব পরিযায়ী শ্রমিকরাই বেশিমাত্রায় কর্মসাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে। 

ছবি  : লকডাউনে পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে পরিযায়ী  শ্রমিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *