মির্জা মহঃ মশিহুর রহমান,
আজ অর্থাৎ শুক্রবার সারাদেশ জুড়ে চলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মবার্ষিকী পালন।টানা কুড়ি দিন চলবে এই কর্মসূচি। যেখানে মারণ ভাইরাস করোনা আবহে দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো দূর্বল, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি চরমে।সেখানে এহেন রাজকীয় জন্মদিন পালন নিয়ে নানান প্রশ্নচিহ্ন দেখা গেছে। বিরোধী দল গুলির বক্তব্য, যতই বিজেপি প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বগুরু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করুক মোদী দেশের বিশ্বকর্মা হয়ে উঠতে পারেননি। অর্থনৈতিক মন্দাই তা বলে দিচ্ছে। বিরোধী রাজনীতিকরা তো বটেই, সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষও এহেন রাজকীয় জন্মদিন পালন ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। আবার অনেকেই বলছেন, মানুষের আবেগকে তো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটা হল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ভালবাসার উদযাপন। অতীতেও রাজীব গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে কংগ্রেসের ‘আদিখ্যেতা’ নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। এবার বিজেপির ক্ষেত্রেও সেই একই। গোটা বিজেপি পার্টি মোদীর জন্মদিন উদযাপনকে দলের কর্মসূচি হিসেবে পালন করছে রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায়। বাংলাতেও তা মোদীর জন্মদিন বেশ ঘটা করেই পালন করছে বঙ্গ গেরুয়া শিবির। একটা সাংগঠনিক দলে কী ভাবে একজন ব্যক্তির জন্মদিনকে উদযাপন করা পার্টি কর্মসূচি হতে পারে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কোথাও বাজি ফাটানো, কেক কাটা, মোদীর কাটআউটকে দুধ-গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে তাতে মালা পরানো—কিচ্ছু বাদ নেই। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতারা পৃথক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন করছেন। গতবার যেমন কাক ভোরে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে যজ্ঞ করতে বসেছিলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। এবার তা না করলেও মোদীর মঙ্গল কামনায় মাতাবাড়িতে পুজো দিতে গিয়েছেন বিপ্লব। বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজভবনের বাগানে চারা পুঁতেছেন। গোয়ার রাজ্যপাল আবার ৭১টি বৃদ্ধাশ্রমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। মোদীর জন্মদিন পালনে গেরুয়া শিবরের ঢক্কানিনাদ নিয়ে শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার বলেন, ‘আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারেন না। তিনি আত্মকেন্দ্রিক। দেশের মানুষের মন বুঝতে প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ। তিনি নিজেকে সাজাতে ভালোবাসেন। এরকম মানুষ দেশের মাথায় বসে রয়েছেন। তাই আমরা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখোমুখি। যে কারণে দুর্মূল্যের বাজার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই মানুষের ক্ষুধার অন্ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেসব নিয়ে কোও পরিকল্পনা নেই। তাই জন্মদিন পালন করার এই ধুমধামের কোনও কারণ দেখিনা। এই সংকটের পরিস্থিতিতে এত বড় করে জন্মদিন পালন ন্যাক্কারজনক।’ বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কী অর্জন করেছেন? তাঁর বোঝা উচিত, এটা জন্মদিন পালনের সময় নয়। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি, করোনা পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী। দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এরমধ্যে এত ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করতে পারছেন কী করে? কোনও সংবেদনশীল মানুষ এটা করতে পারেন না!’নাটক্যকার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একজন নার্সিসিস্ট, মেগলোম্যানিয়াক মানুষ এরকমটা করবেই। উনি নিজেকে সবথেকে বেশি ভালোবাসেন। সবাই জানে এই পরিস্থিতিটা সেলিব্রেট করার মতো নয়। কিন্তু উনি তো এরকমটা করবেনই। এতে আমি অবাক হচ্ছি না।’ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মোদীর জন্মদিন পালনে দেখা গিয়েছে বিপুল আয়োজন। অনেকে মনে করছেন সারা দেশে মোদীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে যে অর্থ খরচ হচ্ছে তা এই সংকটের সময়ে বিলাসিতা, ঔনাস্যিকতা ছাড়া আর কিচ্ছু না। দেশের মানুষ মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্তে রুজিরোজগারহীন, কাজকর্ম নেই।সেখানে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনে মহা হুল্লোড় বিজেপির মধ্যে।সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ….