‘যে কোন বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষ্মণরেখা থাকা উচিত ‘,
বিজেপির জোড়া বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে জানালেন প্রধান বিচারপতি
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বিজ্ঞাপন মানেই যা খুশি তাই নয়! বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে বড়সড় আইনী ধাক্কা খেল বঙ্গ বিজেপি শিবির। লোকসভা নির্বাচন আবহে সংবাদপত্রে সম্প্রতি প্রকাশিত বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, -‘যেকোনও বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষণরেখা থাকা উচিত। কোনও ব্যক্তিগত আক্রমণ করা উচিত নয়’।এর আগে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।এদিন ডিভিশন বে়্ঞ্চে শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, -‘ যেকোনও বিজ্ঞাপনে একটি লক্ষ্ণণরেখা থাকা উচিত। কোনও একটি প্রকল্প নিয়ে প্রচার করা যেতেই পারে। তবে বিতর্কিত বিজ্ঞাপন কোনও সংবাদমাধ্যমে দেওয়া যাবে না। আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হতে পারে, এমন কোনও বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি’। এদিন প্রধান বিচারপতি এই মামলার শুনানি পর্বে জানান, -‘ আদর্শ আচরণবিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে পোস্টার, ব্যানার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে যদি কেউ যান, তাহলে সেখানে দেখা যাবে, সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে’। তবে আদালত এদিন জানিয়ে দিয়েছে, -‘সিঙ্গল বেঞ্চে গিয়ে নির্দেশ প্রত্যাহার বা পুনর্বিবেচনার আর্জি করতে পারবে বিজেপি’।এর আগে গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিজেপির দুটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেন। বিজেপির বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল তৃণমূল। তৃণমূলের এই আবেদনের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিঙ্গল বেঞ্চ। উল্লেখ্য, বিজেপির দুটি বিজ্ঞাপনের একটিতে ‘দুর্নীতির মূল মানেই তৃণমূল’ ও অন্যটিতে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ নামে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল।কয়েকটি সংবাদপত্র এবং টিভি মাধ্যমে দুটি বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি। একটিতে দাবি করা হয়েছিল তৃণমূল মানেই দুর্নীতি এবং অপরটিতে বলা হয়েছিল তারা হিন্দুদের বিরোধী। বিজেপির জোড়া বিজ্ঞাপনে আপত্তি তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল।কিন্তু তাঁদের (তৃণমূল) অভিযোগ, কমিশন কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। এরপরই তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সোমবার এই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্পষ্ট নির্দেশ দেন, -‘বিজেপি আপাতত এই বিজ্ঞাপন দুটি দেখাতে পারবে না’।সিঙ্গল বেঞ্চের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়েছিল বিজেপি। যদিও মামলা খারিজ করে ফের সিঙ্গল বেঞ্চেই ফেরৎ পাঠিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। গত ৪,৫,১০ এবং ১২ মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল বিজেপি, সেই রকম কোনও বিজ্ঞাপন আর প্রকাশ করা যাবে না’।একটিতে ‘দুর্নীতির মূল মানেই তৃণমূল’, আর অন্যটিতে ‘সনাতন বিরোধী তৃণমূল’ স্লোগান ছিল। বিজেপির জোড়া নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে থাকে কলকাতা হাইকোর্ট। যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছে আদালত, ততদিন ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না কোনও সাংবাদমাধ্যমে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। শুধু মিটিং-মিছিল নয়, ভোটের প্রচারে এখন সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপির দুটি বিজ্ঞাপনে আপত্তি জানিয়ে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শোকজ করা হয়েছিল দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে সুকান্তকে শোকজের জবাব দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন।তৃণমূলের অভিযোগ, প্রথমে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে তৃণমূল কংগ্রেস। গত সোমবার মামলাটির শুনানি হয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে। কলকাতা হাইকোর্ট এর সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায়, -‘ কমিশনের যে পদক্ষেপ করার ছিল, সেই পদক্ষেপ করা হয়নি। নির্বাচনী বিধি না মেনে, অসম্মানজনক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল’।তৃণমূলের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে ‘সনাতন বিরোধী’ বলে তুলে ধরা হচ্ছে, তা নিয়মবিরুদ্ধ। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর, বেঠিক ও অবমাননামূলক।কড়া নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন – ‘যে কোন ধরনের সংবাদমাধ্যমে এখন আর এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না বিজেপি। বিজ্ঞাপন নিয়ে তৃণমূল যে অভিযোগ করেছিল তা নিয়ে যে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ছিল কমিশন সেটা করেনি’। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলার শুনানিতে বিজেপির পক্ষের কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। বিচারপতি জানিয়েছেন -‘আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে এমন কোনও বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না’।লোকসভা ভোটের মাঝেই একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিজেপি। সেই বিজ্ঞাপন নিয়েই আদালতে মামলা হয়েছিল।।শুধু সংবাদমাধ্যমে নয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যেভাবে অশালীন রাজনৈতিক প্রচার চলছে, তাতে নজরদারি চালাবার দাবি রেখেছেন অনেকেই।বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে বহাল রাখলো।