রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার

Spread the love

রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার

পারিজাত মোল্লা, ,

উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি প্রাঙ্গনে অবস্থিত রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি গত শনিবার ও রবিবার দুইদিন ধরে মহাসমারোহে আয়োজন করল একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার রথীন্দ্রমঞ্চ প্রেক্ষাগৃহে। সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল – “Philosophy of Rabindranath Tagore and its relevance at the present world scenario” (বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি/দর্শন এবং বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তার প্রাসঙ্গিকতা)। সেমিনার শুরু হয় সকাল সাড়ে দশটায়, শেষ হয় বিকাল পাঁচটায়। বিভিন্ন পর্বে নানা ভাবনায় সাজানো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলে এই সেমিনারের পর পর পর্বগুলি। সেমিনারের প্রথম দিনের শুরুতে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সৃষ্টি, পথচলা, বিকাশ কাল, নানা পরিক্রমা স্তর পার হওয়া এবং তার বর্তমান রূপের উপর নির্মিত একটি প্রামাণিক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তথ্যবহুল তথ্যসমৃদ্ধ এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন সোসাইটির সদস্য মুজিবর রহমান। হিমাদ্রী মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে “পিতা নো বোধি” উপনিষদের বাণী উচ্চারণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পর শুরু হয় বক্তৃতামালা। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কলকাতাস্থিত চীন দূতাবাসের কনসাল জেনারেল শ্যু ওয়েই, জাপান দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল ইয়ামাসাকি মাৎসুতারো, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। সোসাইটির তরফে ছিলেন সোসাইটির কার্যকরী সভাপতি ড. সুজিত কুমার বসু, সহ-সভাপতিদ্বয় অনিন্দ্য কুমার মিত্র, বিচারপতি সৌমিত্র পাল এবং সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। চীন ও জাপান দেশের প্রতিনিধিদ্বয় বিশ্বকবির চীন, জাপান ইত্যাদি দেশ ভ্রমণ, সেই দেশের মানবসমাজ, কৃষ্টি ও সাহিত্যের প্রতি কবির আগ্রহ পরিচিতি ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করেন বিশেষ করে শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতীর সাথে ঐ দুই দেশের প্রগাঢ় সম্পর্ক সবিশেষ উল্লেখ করেন। বক্তৃতা দেন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। সোসাইটির তরফে প্রারম্ভিক ভাষণ ও ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণ দেন সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি সৌমিত্র পাল মহাশয়। সেমিনার উপলক্ষ্যে একটি স্মারকপুস্তিকা প্রকাশ করা হয় মঞ্চে। পরবর্তী পর্বগুলিতে বিশ্বকবির বিভিন্ন দর্শনের উপর বক্তৃতা করেন ড.সমীর রক্ষিত (ছত্তিশগড়), ড. সুদৃপ্ত ঠাকুর (শান্তিনিকেতন), ড. রিচার্ড শার্প (শান্তিনিকেতন), আবদুল কাফি (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়) ও অশোক বিশ্বনাথন। পর্ব পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন অনিন্দ্য কুমার মিত্র ও স্নেহাশীষ সুর মহাশয়। এর পর সাংস্কৃতিক পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিঞ্জিনী আচার্য্য মজুমদার। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সদস্য/সদস্যাদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় “তাসের দেশ”, পরিচালনায় শ্রীমতী বুলা বাগচী।
সেমিনারের দ্বিতীয় দিনে প্রথম পর্বে রবীন্দ্র-দর্শনের উপর বক্তৃতা দেন ড. চিন্ময় গুহ, তরুণ গোস্বামী ও নম্রতা চাড্ডা (ওড়িশা); পর্ব পরিচালনায় শ্রীমতী অমিতা দত্ত। দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রগান ও গানে সুরের প্রয়োগের উপর বিস্তারিত আলোচনায় ছিলেন দেবাশীষ রায়চৌধুরী, দেবজ্যোতি মিশ্র – পর্বটি পরিচালনা করেন ডা.পরাগ বরণ পাল। সেমিনারের শেষ পর্বে ছিল একটি বিতর্কসভা। বিতর্কের বিষয়বস্তু – “আজকের রবীন্দ্রনাথ যতটা জনপ্রিয় ততটা প্রাসঙ্গিক নয়”। বিতর্কসভাটি পরিচালনা করেন ডা. কুণাল সরকার। বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে বক্তাগণ ছিলেন – তিলোত্তমা মজুমদার, অদিতি বসু রায়, শুভময় মৈত্র, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, চৈতি ঘোষাল, সুমন মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষা ব্যানার্জী। বিতর্কসভা পর্বটি বিশেষ ভাবে সমাদৃত ও চিত্তাকর্ষক হয় সকলের কাছে। দুই দিনের সেমিনারে রথীন্দ্রমঞ্চ প্রেক্ষাগৃহ সবসময়ই ছিল শ্রোতৃদর্শকমণ্ডলী পরিপূর্ণ।
এই দিনের অন্তিম লগ্নে সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *