রাইপুরে নির্বাচনী সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন আমি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধন মন্ডল,রাইপুর,বাঁকুড়া ৮ এপ্রিল:-বাঁকুড়ার কৃষ্টি ,সংস্কৃতি, শিক্ষা , পোড়ামাটি বালুচরী সহ বিভিন্ন শিল্প কে ও বাঁকুড়ার মনীষীদের সম্মান জানিয়ে আজ রায়পুর সবুজ সংঘের মাঠে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য শুরু করলেন। এরপরে ই মঞ্চে উপস্থিত বিশিষ্টদের কথা তুলে ধরে মা মাটি মানুষের সরকারের বিভিন্ন জনমুখী কন্যাশ্রী শিক্ষাশ্রী লক্ষ্মীর ভান্ডার কৃষক পেনশন বার্ধক্য ভাতা সহ বিভিন্ন প্রকল্পগুলিরসুবিধা সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন কিনা তা জানতে চান সাথে তিনি বলেন গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর কেন্দ্র দুটি বিজেপি জয়লাভ করেছিল তার পরে কি আপনারা ওই জয়ী সংসদের দেখা পেয়েছেন? তারা কি কাজ করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিজেপি একটি জুমলার সরকার ধাপ্পাবাজের সরকার তারা এনায়ে এডি সিবিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারকে ধমক দিচ্ছে হুংকার দিচ্ছেন। জেলে ঢোকাবার ভয় দেখাচ্ছেন। আমি বলি।হুংকার যদি দিতে হয় তাহলে আপনার দলকে দিন, এটা গণতন্ত্রের পক্ষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনি যত খুশি সভা করুন প্রয়োজনে ব্লকে ব্লকে সভা করুন। তাতে আমার কোন আপত্তি নেই আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা। তবে হুংকার দেবেন না বাংলা কারো অহংকার কে ভয় পায় না আমি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ রাইপুর সবুজ সংঘের মাঠেএক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে এভাবেই সতর্ক করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর সমর্থনে এক নির্বাচনী জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনের জনসভার সময় দেওয়া হয়েছিল দুপুর বারোটা প্রায় সঠিক সময়েই তার হেলিকপ্টার ট্রাই করে চক্কর দেয়, দুপুর বারোটা ১০ মিনিটে তার হেলিকপ্টার অবতরণ করে, হেলিকপ্টার থেকে নেমে তিনি হেলিকপ্টার কে ঘিরে যে বেড়া দেওয়া ছিল বেড়ার পাশে পাশে গিয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পরে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলে সেখানে তাকে আদিবাসী প্রথায় বরণ করে নেওয়া হয়। বরণ করে নেয় রাইপুর ব্লকের চাতরি পন্ডিত রঘুনাথ মুরমু আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ।মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে আগাগোড়া ছিল প্রবল আক্রমণাত্মক এবং বিস্ফোরক।
তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাঁকুড়া স্টেশনের আধুনিকীকরণ, নতুন ট্রেন, আরামবাগ তারকেশ্বর রেল লাইন তিনি মঞ্জুর করেছিলেন বলে দাবি করেন। জয়রামবাটি কামারপুকুর থেকে দক্ষিণবঙ্গ হয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি র সড়ক পথ হচ্ছে বলে জানান। সেই সাথে জল প্রকল্পের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি অতীত দিনের এই রাইপুরের কথা তুলে ধরে বলেন, এই জায়গাটা ছিল সন্ত্রাসের জায়গা, এখানে অপকর্ম করে রাইপুর দিয়ে গুন্ডারা বেরিয়ে যেত সাঁকরাইল হয়ে। আজ সেখানে কোন অশান্তি নাই। তিনি বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার কথা বলে জেলার একের পর এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৭৪ হাজার কোটির প্রকল্প শুরু হয়েছে, কাজ শেষ হলে এখানে দেড় লক্ষ বেকার ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গুলির জন্য জেলায় জেলায় মার্কেট কমপ্লেক্স করা হচ্ছে এই সকল গোষ্ঠীগুলিকে প্রথমেই ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে গ্রুপটি চালু করার জন্য। আদিবাসীদের জমির জন্য আইনের কথা উল্লেখ করে বলেন ,কোন অবস্থাতেই আদিবাসীদের জমি হস্তান্তর করতে দিব না। সেই সাথে বলেন ,কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতির ফলে আদিবাসীদের উপর অত্যাচার চলছে, মণিপুরে আদিবাসী যুবতীকে উলঙ্গ করে পৈশাচিক অত্যাচার করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। যে মেয়ে দেশের জন্য অলিম্পিকসে সোনা এনে দিয়েছে সেই সোনার মেয়ের উপর পৈশাচিক অত্যাচার করেছে এই বর্বর বিজেপি। এবার তিনি বাঁকুড়া জেলার দুটি আসনেই বিজেপির দুজন এমপি আছেন তাদের কথা উল্লেখ করে বলেন ,এরা জেলার জন্য কিছু কাজ করেছে কি, যা করেছে নিজের জন্য ,ওরা নিজের কাজ করেছে মানুষের কাজ করে না।
এইবার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ এর নাম করে বলেন, এবার আমরা বিষ্ণুপুর আসনে ওর স্ত্রীকে প্রার্থী করেছি, জানিনা ওদের ডিভোর্স হয়ে গেছে কিনা। বিজেপি দলটা কত মিথ্যাবাদী তার যাবতীয় প্রমাণ আমার কাছে আছে। সৌমিত্রর অনেক ছবি আমার কাছে আছে । যদি সেগুলি তুলে ধরি তাহলে বিষ্ণুপুরের মানুষ বুঝতে পারবেন সৌমিত্র কেমন মানুষ।
সারি ও সারনা ধর্মের মর্যাদা কেন্দ্র দিচ্ছে না, অথচ আমরা সমস্ত কিছু কাগজপত্র কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। জয় জোহার তফসিলি পেনশন ছাড়াও ২ কোটি ১৫ লক্ষ মা-বোনদের লক্ষ্মীর ভান্ডার দিচ্ছি। মা বোনদের বয়স ষাট বছর হয়ে গেলেও এটা বন্ধ হবে না। আমৃত্যু তারা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবে।আমরা কেন্দু পাতার দাম বাড়িয়ে দিয়েছি, হাতির আক্রমণে মারা গেলে সেই পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ সহ একজনের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। হুল করম ,সহ একাধিক আদিবাসীদের অনুষ্ঠান এর দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছি। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আশ্রমিক আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা আগে এক হাজার টাকা ভাতা পেতো বর্তমানে ছাত্র ছাত্রীদের ভাতার টাকা বাড়িয়ে প্রতিমাসে ১৮০০ টাকা করেছি। জাহের খান, শ্মশান ,কবরস্থান ছাড়াও গুণীজন সংবর্ধনা, আদিবাসী উৎসব করে চলেছি। মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী পরিচালিত ল্যাম্পসের কথা উল্লেখ করে বলেন বিডিওরা এই বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন, দেখবেন ইলেকশনের সময়ে যেন সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি বলেন আমরা জিতে লক্ষীর ভান্ডার ,বিনা পয়সায় রেশন ,সাইকেল, ১০ লক্ষ টাকা স্মার্ট কার্ড, কৃষক ভাতা, সহ অন্যান্য ভাতা দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি।এছাড়াও সরকারি কর্মচারীরা ৪% ডিএ পেয়েছেন এবং আগামী মে মাসে ফের ৪% পাবেন। কেন্দ্র আমাদের কাছ থেকে ৬৬৫ হাজার কোটি নিয়ে গেছে বিনিময়ে দিয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জলপাইগুড়িতে সভা করেছেন , অথচ জলপাইগুড়িতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের কথা একবারও বললেন না, আমি মধ্যরাতে সেখানে গিয়ে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি সাত দিন আগে পাঁচ হাজার বাড়ি দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছি অথচ নির্বাচনের কারণে সেই আবেদন মঞ্জুর করেনি। প্রত্যেকটি বাড়ির জন্য এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দেব সম্পূর্ণ রাজ্যের তহবিল থেকে কিন্তু পারমিশন পাইনি।
এবার তিনি উগ্রমূর্তি ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন , গতকাল উত্তরবঙ্গের জনসভায় বলেছেন ৪ তারিখের পর বেছে বেছে জেলে ভরব, তিনি প্রশ্ন করেন ,হেমন্ত সরেন কে কেন এরেস্ট করা হলো? মনে রাখবেন ৫ জনকে এরেস্ট করলে পাঁচ জনের স্ত্রীরা আমাদের পক্ষে লড়াই করবে।গণতন্ত্রকে আপনি জেল বানিয়ে দিয়েছেন। তিনি ক্যাকে মাছর মাথা এবং এনআরসিওকে মাছের লেজের সাথে তুলনা করে বলেন কোন ভাবেই ওদের পাল্লায় পড়লে সোজা ডিটেনশন ক্যাম্পে চলে যেতে হবে। উপস্থিত মানুষজনকে সতর্ক করে বলেন কোনরকম ফরম ফিলাপ করবেন নাএন আই এ ,সিবিআই ভাই ভাই, ইডি ইনকাম ট্যাক্স বিজেপির ফান্ড। কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা তিন বছর দেননি । আমরা ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দিয়েছি সেটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৬০ দিনও হতে পারে।আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি ইতিমধ্যেই ৪৫ দিন করে কাজ হয়ে গেছে। ১১ লক্ষ বাড়ির তালিকা দিয়েছি১৩৬ বার টিম পাঠিয়েছেন, তা ছাড়াও আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী সাথে তিন বার দেখা করে টাকা চেয়েছি ,এখন বিজেপির কল সেন্টার থেকে ফোন করে দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে। তিনি জোর গলায় বলেন ভোট শেষ হয়ে গেলেই আমরা প্রত্যেককে প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে দিব, আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইবো না। সেই সাথে বলেন আর একটা বিল ১৪৭ জন এমপি কে বাদ দিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি আইন চালু করে দিয়েছে কিনা জানিনা, এটা হলে নিজের ধর্ম বলে কিছু থাকবে না। কান ধরে তুলবে আর কানমুলা দিয়ে বসাবে। আমি বলি নতুন পার্লামেন্টটা জেলখানা করে দাও, তাহলে আর বলার কিছু থাকবে না, তাহলেও তোমার হুঙ্কার আমরা মানছি না মানবো না। তিনি আরো সুর চড়িয়ে বলেন আমরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার আহত বাঘ অনেক বেশি সাংঘাতিক! এই কথা বলে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ঘাসফুল চিহ্নে ভোট দেয়ার আবেদন রাখেন। সেই সাথে বাংলা নববর্ষ ,অন্নপূর্ণা ,নীল সংক্রান্তি ও ঈদের শুভেচ্ছা জানান। বক্তব্যের শেষে আদিবাসী ভাষায় আবেদন জানান ভোট দেওয়ার।
এরপর মঞ্চে মন্ত্রী ইন্দ্রনীলের গানের সাথে ধামসা বাজিয়ে মন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি সহ আদিবাসী মহিলাদের হাত ধরে গানের তালে তালে নাচ করে উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নেন মুখ্যমন্ত্রীর এই নৃত্য দেখে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মহিলারাও নৃত্য করতে শুরু করেন। আজকের নির্বাচনে জনসভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য সরবরাহ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী, জোৎস্না মান্ডি, প্রাক্তন মন্ত্রী অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা, রায়পুর বিধানসভার বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়, তালডাংরা বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী। বাঁকুড়া পৌরসভার পৌর প্রধান অলকা সেন মজুমদার , প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী সহ জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব।