মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
গত শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে বেশ কয়েকটি মামলা দাখিল হয়েছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই। তাই এহেন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি একটু বেশি দীর্ঘায়িত উভয়পক্ষের সওয়াল-জবাবে। তাই সোমবার এইবিধ মামলা গুলি চারটি পর্যায়ক্রমে ভাগ করে শুনানি চলবে।তবে এরেই মধ্যে শুক্রবার মামলাকারীদের আইনজীবীরা এদিন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তোলেন রাজ্য সরকারের ( প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড) বিরুদ্ধে। অভিযোগ টি হলো – ‘ এদিনই ( শুক্রবার) মালদা এবং বাঁকুড়া জেলায় মাত্র ৬ ঘন্টায় ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হয়েছে টেটের পরীক্ষার্থীদের। তাই রবিবার রাতে চুড়ান্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা প্রবল। কেননা রবিবারেই ইন্টারভিউ পর্ব এর শেষদিন’।মামলাকারীদের আইনজীবীদের কাছে এহেন অভিযোগ শুনেই বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবী কে কার্যত হুশিয়ারি দেন যে, ‘যদি সোমবারে নির্ধারিত শুনানির আগেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়,তাহলে হাইকোর্ট চুপ করে বসে থাকবেনা’।আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন – রাতারাতি প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে তালিকা প্রকাশ হলে হাইকোর্ট সেই তালিকাতে স্থগিতাদেশ কিংবা বাতিল ঘোষণা করে দিতে পারে। গত ২৩ শে ডিসেম্বর রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কয়েক টি মামলা দাখিল হয়েছে। এরমধ্যে চলতি সপ্তাহে আরও একটি মামলা দাখিল হয়। মামলাকারী বিবেক গাজীর পক্ষে আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী মামলাটি দাখিল করেছেন । মূলত এনসিটিই আইনের ১৪ এবং ১৬ নং ধারা মানা হয়নি গতবছরের ২৩ শে ডিসেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলে দাবি।এই বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এই মামলা।ইতিপূর্বে আরেক আইনজীবী এই বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দাখিল করেছিলেন। মূলত গত ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার্থীদের ৬ টি ভূল প্রশ্নের নাম্বার অন্তর্ভুক্তকরণ নিয়ে। ওই মামলায় অবশ্য হাইকোর্ট চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৬ নাম্বার যুক্ত করে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। তবে গত বৃহস্পতিবারের দাখিল করা মামলায় ন্যাশনাল স্কুল অফ টিচার এডুকেশন (এনসিটিই) এর ১৪ এবং ১৬ নং ধারায় গাইডলাইন মেনে গতবছর ২৩ শে ডিসেম্বর ১৬৫০ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি টি অবৈধ দাবি করা হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে ২০২০ পর্যন্ত টেটের কোন পরীক্ষা হয়নি।তাই ২০২১ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোন শুন্যপদ তৈরি হচ্ছেনা বলে মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি। আগামী ৩১ শে জানুয়ারি টেট পরীক্ষা হওয়াতে তাই ধোয়াশা রয়েছে বলে মামলাকারীর দাবি। সম্প্রতি বিগত বাম জমানায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। বামেদের স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার ওই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করেছিল।তা সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে বৈধতা পেয়ে থাকে।।গত ২০০৭ সালে বাম আমলে জেলা ভিক্তিক প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারী হয়েছিল। ধাপে ধাপে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল।২০১১ সালে পালবদলের পর বাম আমলেও এই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিল ঘোষণা করে তৃণমূল সরকার। তবে তা মামলাকারীদের সৌজন্যে আদালতের আদেশে কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগ চলেছে। তবে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা সহ হাওড়া জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল।২০১৭ সালে দায়ের করা হাইকোর্টের মামলায় ওইদিন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবার নির্দেশ জারি হলো।প্রথম পর্বে ১৫ দিনে পরীক্ষার্থীদের মেধা তালিকা প্রকোশ।পরবর্তী ১৫ দিনে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন, ইন্টারভিউ সহ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করবার নির্দেশ রয়েছে উক্ত মামলার আদেশনামায়।শুন্যপদ না থাকলে রাজ্য সরকার কে শুন্যপদ তৈরি করে ফেলতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনায় ২৬০০ এবং হাওয়ায় ১৩৩১ টি শুন্যপদ পূরণে তৎপর হতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টে অন্য বেঞ্চে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিগত বাম জমানায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলা বিচারধীন রয়েছে, তাই ওইদিনকার আদেশনামা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জন্য কার্যকর হয়নি।তবে অর্ডারকপি ওই মামলায় যুক্ত করলে মামলাকারীদের নিয়োগে সবুজ সংকেত পেতে পারেন আদালতে। এইরূপ মনে করছে আইনজীবীদের একাংশ। উল্লেখ, গত বছরে ২৩ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে সাড়ে ১৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ঘোষণা করেছেন।একাধারে ২০০৭ সালে এই শিক্ষক নিয়োগ আজকের আদেশনামা এবং সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার্থীদের ভূল প্রশ্নের অতিরিক্ত ৬ নাম্বার সংযোজন করে মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশজারি হয়েছে। এইরুপ পরিস্থিতি তে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে গত ২৩ শে ডিসেম্বর রাজ্যের জারি করা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলার শুনানি রয়েছে। মূলত এনসিটিই এর ১৪ এবং ১৬ নং ধারার গাইডলাইন না মেনে এই বিজ্ঞপ্তি টি অবৈধ দাবি করেছেন মামলার আইনজীবী আশীষ কুমার চৌধুরী মহাশয়।শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে মামলার শুনানি চলে।সেখানে মামলাকারীর আইনজীবী মাত্র ৬ ঘন্টায় বাঁকুড়া ও মালদা জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়গের ইন্টারভিউ পর্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।আশংকা, রবিবার রাতেই হয়তো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে ফেলবে রাজ্য সরকার। তবে মামলাকারীদের আইনজীবীর কাছে এহেন অভিযোগ শুনেই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ রাজ্য কে হুশিয়ারি দিয়েছেন যে, রাতারাতি নিয়োগ তালিকা প্রকাশ পেলে কড়া অবস্থান নেবে হাইকোর্ট। সোমবার দুপুরে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চলবে এই মামলার শুনানি।