মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার ‘।তবে করোনা থাবায় সবকিছুই উলটপালট। যদিও এবছর গঙ্গাসাগরে দর্শনার্থীদের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৯০% কম।বুধবার গঙ্গাসাগর মেলা মামলায় দু দুবার শুনানির শেষে প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিলো।রাজ্যের উপর আস্থা রেখেই এই অনুমতি কলকাতা হাইকোর্টের। গত সপ্তাহে শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্য – কেন্দ্র ও মামলাকারীর আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব চলেছিল। সেখানে স্বাস্থ্য সচিবের রিপোর্ট দেখে মোটামুটি সন্তুষ্ট হাইকোর্ট। তবে আজ মুখ্যসচিবের রিপোর্ট দেখেই গঙ্গাসাগরে মকরস্নান নিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। নদী থেকে দূরে ই স্নানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের। ‘ই স্নানে’র উপর জোর দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ‘ই স্নান’ টা আসলে কি? হাইকোর্ট আদেশনামায় উল্লেখ করেছে যে – ‘ অনলাইনের মাধ্যমে বুকিং করতে হবে দর্শনার্থীদের কে।এরপর বুকিং গ্রাহকদের বাড়ি বাড়িতে পৌঁছে যাবে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল।এছাড়াও গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন কিয়স্কে পাওয়া যাবে এই পবিত্র জল ‘। মোদ্দাকথা, গঙ্গাসাগরে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণদের একসাথে স্নান করা যাবেনা।রাজ্য সরকার কে ‘ই স্নান’ নিয়ে গত শনিবার থেকেই প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যা রাজ্য সরকার প্রচার কর্মসূচি চালিয়েছে । উল্লেখ্য, গতবছর রাজ্য সরকারের তরফে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে এক বিশেষ প্যাকেজ চালু করেছিল।সেখানে পুজোর বিভিন্ন সামগ্রীর পাশাপাশি গঙ্গাসাগরের জলও পেতেন আগ্রহীরা।এ বছর ভার্চুয়াল মকরসংক্রান্তির সাক্ষী থাকতে আগ্রহীদের গুগলের লিংক পাঠানোর কথাও বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পুরী সহ বিভিন্ন জায়গায় আগে থেকেই দর্শনার্থীদের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক ছিল।যেটা এবছর গঙ্গাসাগরে করা হয়নি।সবরীমালা স্নান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মারণ ভাইরাস করোনা রুখতে।এমনকি মন্দির মসজিদ গির্জার মত ধর্মীয়স্থান গুলিতেও একসময় বন্ধ রাখা হয়েছিল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে। গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন এই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট কে মন্দির এবং স্যানিটাইজার কে চরণামৃত বলে অভিহিত করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন -‘ মানুষের জীবন আগে, ধর্মীয় বিশ্বাস তারপর। ধর্মের থেকে জীবনের অধিকার আগে’। গত শুনানির আগে আদালত আসার পথে প্রধান বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্ট ঢুকবার আগে বাবুঘাটে মাস্কবিহীন গঙ্গাসাগর মেলা যাওয়ার দর্শনার্থীদের দেখে চিন্তিত হয়েছিলেন।তাই তিনি ওইদিন রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কে মুখ্যসচিবের হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন করোনা সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে রিপোর্ট টি জমা দিতে বলা হয়েছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গতবছর ২৫ লক্ষ দর্শনার্থীরা এসেছিলেন গঙ্গাসাগর মেলায়। গঙ্গাসাগর মেলার সাথে কুম্ভমেলার তুলনা করা যায়।তবে দুর্গাপুজো – ছটপুজো – জগদ্ধাত্রী পুজোর তুলনা টানা যায়না বলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ওইদিনকার মামলায় শুনানিতে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছিল।এত বিপুল মানুষ স্নান করলে মুখ ও নাকের নিঃসৃত ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে।যারা গঙ্গাসাগরে যাবেন তাদের তো বটেই তাদের সাথে পরবর্তীতে যারা সংস্পর্শে আসবেন তারাও করোনা পজিটিভ হতে পারেন।তাই ওইদিন প্রধান বিচারপতি রাজ্য কে গঙ্গাসাগর মেলার মকরসংক্রান্তির স্নান কে প্রতীকী করবার পরামর্শও দিয়েছে সার্বিক জনস্বাস্থ্য এর কথা ভেবে। গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল যাতে দর্শনার্থীরা সরকারি সহযোগিতায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারে, সেই বিকল্প ভাবনাও রাজ্য গ্রহণ করতে পারে।কলকাতা হাইকোর্ট গঙ্গাসাগর মেলার দর্শনার্থীদের ভীড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত নয়, চিন্তিত করোনা আবহে একসাথে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের মকরস্নান ঘিরে।কেননা করোনা ভাইরাস টি দ্রুত সংক্রমিত হয়ে যায় মানুষের মধ্যে।এই মামলার আইনজীবী সব্যসাচী চট্টপাধ্যায় জানিয়েছিলেন – ‘ রাজ্য সরকার ১৯৭৬ সালের গঙ্গাসাগর মেল নিয়ে বিশেষ আইনে সার্বিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বন্ধও করে দিতে পারে ‘।গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হলেও মুখ্যসচিবের রিপোর্ট টি ১৩ জানুয়ারির মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল । গত শনিবার থেকেই ই স্নান নিয়ে রাজ্য সরকার কে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিল। অনলাইনে বুক করে দর্শনার্থীরা ই স্নানের পবিত্র জল পাবেন।পাশাপাশি গঙ্গাসাগরে বিভিন্ন কিয়স্ক থেকে মিলবে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল।মকরসংক্রান্তিতে সাক্ষী থাকতে ভার্চুয়াল লিংক পাঠানোর পরিকাঠামো করে দিতে হবে রাজ্য সরকার কে। বুধবার দু দুইবার শুনানি শেষে শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। মূলত ই স্নানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।