শাকচুন্নি জব্দ
মৌসুমী মন্ডল (কলকাতা)
(১)
কংসাবতী নদীর ধারের জঙ্গলটাতে অসংখ্য ভূত- পেত্নী - শাকচুন্নিদের বাস। ভূতেদের কমিউনিটিও বলা যেতে পারে। তেনারা জায়গাটার নাম দিয়েছেন ভূতানন্দ অ্যাপার্টমেন্ট। রকমারি ভূতের সমাহার এখানে। সব ভূতেরা মিলে মিশে সুখে দুঃখে এক সাথে দিন কাটায় , খায় দায়, আনন্দ উৎসবে যোগ দেয়। শুধু মাত্র এই অ্যাপার্টমেন্টের শুটকি আর মুটকি এই দুই শাকচুন্নিকে নিয়েই যত সমস্যা। যেমন বদ তেমন শয়তান শুটকি- মুটকি। প্রত্যেকের হাঁড়ির খবর চাই ওদের আর সারাদিন pnpc. কারণে অকারণে সব ভূত পেত্নী দের সাথে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া না করলে ওদের আবার ভালো হজম হয় না। এই তো দিন তিনেক আগে মেছো পেত্নীর সাথে একচোট লেগেছিল। সেদিন সন্ধ্যাবেলা মেছো পেত্নীটা নদীর ধারে বসে মাছ ধরে খাচ্ছিল। অমনি কোথা থেকে মুটকি - শুটকি এসে পেত্নীর চুলের মুঠি ধরে একবারে অ্যাপার্টমেন্ট কাঁপিয়ে শুরু করে দিলো," ওই ওই মেঁছো, মাঁছ ধরছিস কেঁন রে ? দে আমাদের মাঁ ছ গুলো..... খুঁব সাহস।" তখন মেছো পেত্নী ও চেঁচিয়ে উঠল," কেঁন রে মুটকি- শুটকি? অঁ্যাপার্টমেন্ট কিনে ফেলেছিস মনে হচ্ছে? খুঁব বাঁড় হয়েছে তোদের।" সে কী অশান্তি বাপ রে বাপ। যেন মনে হচ্ছে কুরুক্ষেত্রের পরে পেত্নীক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হল। বলবে বিশ্বাস করবে কি... ওই দুটো শাকচুন্নি এত শয়তান যে কমিউনিটিতে নতুন কোনো ভূত পেত্নী এলে খালি পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করবে আর বলবে " শোন এঁখানে থাকতে গেঁলে শাকচুন্নি সেলামী দিয়ে থাকতে হবে না হলে অঁ্যাপার্টমেন্ট ছাঁড়া করে দেব ।" দাদাগিরি দেখো!!.... থুড়ি ..থুড়ি... শাকচুন্নি গিরি।
(২)
বর্তমানে যে ব্রহ্মদত্ত্যি অ্যাপার্টমেন্ট সেক্রেটারি হয়েছে এই বয়সেও কী হ্যান্ডসাম ... ইয়ে মানে মরার পর ও যে কেউ এত হ্যান্ডসাম থাকতে পারে ওনাকে না দেখলে বোঝাই যায় না। তার উপর আবার বেশ শিক্ষিত। একবারে ভূতেদের ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করা। তাই উনি বর্তমান সেক্রেটারি হলেন। তো যাই হোক শুটকি হ্যান্ডসাম সেক্রেটারিকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রপোজ করে বসলো... একবারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিলো। ব্রহ্মদত্ত্যি সেক্রেটারি তো রেগে ফায়ার। সে রুদ্রাক্ষের মালা হতে বলে উঠলো,"হে ইউ শুটকি শাকচুন্নি, বিহেভ ইওর সেলফ। হ্যাভ ইউ নো ম্যানার্স? গেট আউট ফ্রম আওয়ার অ্যাপার্টমেন্ট এজ কুইক এজ পসিবল। ইউ অ্যান্ড মুটকি বোথ।"
ব্রহ্মদত্ত্যির তীব্র হুংকার। আর এসব কাণ্ড দেখে অন্যান্য ভূত পেত্নী রা প্রচন্ড ক্ষেপে গেল। তাদের সেক্রেটারির এত বড় অপমান !!! যাকে বলে একবারে ক্ষিপ্ত জনতা... ও সরি... সরি... ক্ষিপ্ত ভূত পেত্নী বৃন্দ। মুটকি- শুটকির কার্যকলাপ সকলেরই জানা। তবে সেক্রেটারির অপমান, এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না । মুটকি- শুটকিকে আর এই ভূত সমাজে থাকতে দেওয়া যাবে না। ব্যাস! অমনি সব ভূতেরা লাঠি সোটা চকোলেট বোম্ব নিয়ে একবারে আক্রমণ করলো মুটকি - শুটকির বাড়িতে। তারপর কী হলো সেটা তো সবাই বুঝতেই পারছো। আর তারপর তো দুই শাকচুন্নিকে বার করে দেয় আর কী। মুটকি- শুটকি কোনো রকম সেক্রেটারির হাতে পায়ে ধরল,"স্যার, ভুল হয়ে গেছে। আর কোঁরব না।"
কিন্তু শুকনো কথায় চিঁড়ে ভেজে না। চলে ওদের যেতেই হল। তারপর অ্যাপার্টমেন্ট এর ভূতেদের কী উল্লাস-- "যাক বাবা, বাঁচা গেল। কুচুটে দুটো বিদেয় হল তবে।" ওরা সেক্রেটারির অনারে একটা পার্টি দিলো । খুব নাচা গানা , খাওয়া দাওয়া হল। সত্যি কথা বলতে সব ভূতেরা একটা সুযোগ খুঁজছিল, কিভাবে ঐ দুটোকে বিদেয় করা যায়।
তা মুটকি শুটকি এখন বেশ কিছুটা দূরে একটা বাঁশবাগানে আশ্রয় নিয়েছে। ওরা কুট কচালি ছেড়ে এখন একটা ভৌতিক স্মার্টফোন কিনে দিনরাত নেচে কুঁদে রীল বানায় আর ছুঁচো র মত মুখ করে সেলফি তোলে। কাউকে বিরক্ত করে না। সেই আক্রমণের কথা ওরা এখনও ভুলতে পারেনি যে! আবার যদি সেই ভয়ানক আক্রমণ হয়!!! ওরে বাবা!!! হরি! হরি!!