শারীরশিক্ষা মামলায় ২১ জনকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে নির্দেশ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বুধবার নবম – দশম শ্রেণির শারীরশিক্ষা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কে অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর সিঙ্গেল বেঞ্চ। গত ২০১৬ সালে অন্তত ১৬৩ জনকে বেআইনি ভাবে চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছিল বলে ইতিমধ্যেই হলফনামা দিয়ে মেনে নিয়েছেন এসএসসি কর্তৃপক্ষ। এই মামলায় এদিন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু নির্দেশ জারি করেছেন যে, -‘আপাতত অভিযুক্ত ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই’। এদিন অভিযোগকারীদের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় আদালতকে জানিয়েছেন, -‘নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক পদে শারীরশিক্ষা বিষয়ে ১০১৯ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বহু অযোগ্য প্রার্থী সুযোগ পেয়েছেন’। এই দাবিতে কলকাতায় ধর্নাও শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। বুধবার এই মামলায় ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু। তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের অ্যাকাডেমিক নম্বর এবং বয়স বাড়িয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে ।১৯২ জন মামলাকারী বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর এজলাসে মামলা করেছেন। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, -‘ মেধার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়নি’। এদিন শুনানি শেষে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। পাশাপাশি বিচারপতি বলেন, -‘ বেআইনি ভাবে নিয়োগ পাওয়া ২১ জন প্রার্থীকে অবিলম্বে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই’। সেইসাথে আগামী ১৬ জানুয়ারি রিপোর্ট জমা দেবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।ওইদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।বুধবার শুনানি পর্বে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, ”দুর্নীতি কোথায় হয়েছে তা দেখা হবে। কিছু যোগ্য প্রার্থীর কথা বিবেচনা করবে আদালত। যদি দেখা যায় অধিকাংশকেই বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে তবে প্রয়োজনে সব নিয়োগ বাতিল করে দেব।” সেই সঙ্গে বিচারপতির মন্তব্য, ”স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধাতালিকায় থাকা ৪০ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।” গত ২০১৬ সালে নবম এবং দশম শ্রেণিতে বয়স এবং অ্যাকাডেমিক নম্বর বেশি দেখিয়ে অনেককে শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ১৯২ জন চাকরিপ্রার্থী। ওই বছর নভেম্বরে পরীক্ষা হয়। এই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছর সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।এর পাশাপাশি এসএসসি কর্তৃপক্ষকে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, -‘সমস্ত প্রার্থীর মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। মেধাতালিকা সামনে আসার পরই এই তথ্য প্রকাশ পায়’ । এদিন এই নির্দেশে জারি করার পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ওই ২১ জন কে দপ্তরে তলব করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে। এই ২১ জন শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সে কারচুপির অভিযোগটির ক্ষেত্রেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল আদালত।বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসু এই নির্দেশ দিয়েছেন।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর এজলাসে এই মামলা উঠেছিল। মামলাকারীদের দাবি, -‘ এক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োগের জন্য বয়সসীমা ৪০ বছর। কিন্তু সেই বয়স পেরিয়ে গেলেও নিয়োগ হয়েছে ‘। মামলাকারীদের আরও দাবি, “এসএসসি-র দেওয়া মেধাতালিকা তথ্যেই স্পষ্ট, বয়স পেরোনোর পরেও চাকরি। এই তথ্যই সিবিআই তদন্তের দরকার।” এদিন বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর হুঁশিয়ারি, “এমন লজ্জাজনক দুর্নীতি দেখলে পুরো প্যানেল বাতিল করে দেব।”উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই বছরেরই নভেম্বর মাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। অথচ পরবর্তী সময়ে ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। চলতি বছরে এসএসসির ওই নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে সমস্ত প্রার্থীর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। আদালতের নির্দেশ মতো মেধাতালিকা প্রকাশও করে এসএসসি। আর সেই মেধাতালিকা প্রকাশ্যে আসতেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে । এদিন হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিত্ বসুর এজলাসে নতুন এই মামলাটি উঠলে বিচারপতি সংশ্লিষ্ট ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নির্দেশ দেন। আগামী জানুয়ারি মাসে ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে। এখন দেখার আগামী দিনে এই মামলার গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নেয়।উল্লেখ্য, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতের প্যানেল বাতিলের হুঁশিয়ারি এই প্রথম নয়। এর আগে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় প্যানেল বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।এরপর এদিন হুশিয়ারির সূর শোনা গেল কলকাতা হাইকোর্টের আরেক বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর গলায়।