শালবনীতে এনআইএ তদন্ত চালাবে, জানালো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু)
একদা জঙ্গলমহলের জন সাধারণের কমিটির নেতা তথা অধুনা তৃনমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য ছত্রধর মাহাতোর তদন্তের স্থান পরিবর্তনের আবেদন কে মান্যতা দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকবার পর কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানে সম্প্রতি জেলমুক্তি ঘটে ছত্রধর মাহাতোর। এরপর রাজনৈতিক সক্রিয়তার মাধ্যমে তিনি এই রাজ্যের শাসকদলের রাজ্য কমিটিতে স্থান পান। আর এতেই কেন্দ্রীয় শাসকদলের কুনজরে পড়েন ছত্রধর মাহাতো বলে দাবি। অভিযোগ, প্রায় একযুগ আগেকার দুটি ফৌজদারি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ পুন তদন্তের নামে অতিসক্রিয় হয়ে উঠে। ইউএপিএ ( রাস্ট্রদ্রোহিতা) মামলায় ফের জরুরি তলব করা হয় ছত্রধর মাহাতো কে। করোনা আবহে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এনআইএ এর এহেন অতিসক্রিয়তা দেখা যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন ছত্রধর মাহাতো।গত মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে ছত্রধরের আইনজীবী আবেদনে জানান – ” সারাদেশে মারণ ভাইরাস করোনা সংক্রমণ এড়াতে গণপরিবহন একপ্রকার বন্ধ বলা যায়। বিশেষত ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ নিত্য যাত্রী পরিবহনে।তাই এনআইএর তদন্তে কলকাতা যাওয়া সম্ভব নয়। শালবনীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা এই দুটি ফৌজদারি মামলার পুন তদন্ত করুক”। কলকাতা হাইকোর্ট ছত্রধরের এহেন আবেদন কে মান্যতা দিয়ে তদন্তে পূর্ন সহযোগিতা করবার নির্দেশ দেয়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবী এই দুটি মামলায় নিস্কৃতি পাবারও আবেদন জানিয়েছিল। তবে সেটি অবশ্য কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়।,প্রায় এগারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে বিগত বাম জমানায় শালবনীতে জিন্দালদের কারখানার উদঘাটন পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয় জঙ্গলমহল। ধারাবাহিক পুলিশি সন্ত্রাসে এবং তৎকালীন শাসকদলের নেতাদের অত্যাচারে গড়ে উঠে জনসাধারণের কমিটি। সিপিএমের তরফে বারবার এই কমিটি কে মাওবাদীদের প্রকাশ্য মুখ হিসাবে অভিযোগ তোলা হত। সেসময় জঙ্গলমহলে এক বাম নেতা খুনে ছত্রধর মাহাতো সহ ৩০ জনের নাম জড়ায়। এই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। অপরদিকে সমসাময়িক ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন বাঁশতলা স্টেশনে দিল্লি ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক অপহরণে অভিযোগ উঠে জনসাধারণের কমিটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার মামলাতেও চার্জশিট দাখিল হয় নিম্ন আদালতে। এই দুটি মামলায় প্রথম দিকে জেলা পুলিশ তদন্তকারী হিসাবে থাকলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তদন্তভার নেয়। কেননা রাস্ট্রদ্রোহিতার ( ইউএপিএ) ধারা রুজু করা হয়। যা এই বাংলায় সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর করা হয় বলে জানা যায়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে বিভিন্ন শুনানিতে ইউএপিএ ধারা রুজু করার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে দাবি রেখেছিল। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানে মুক্তি পান ছত্রধর মাহাতো সহ অন্যরা। জেলমুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখা যায়। এই রাজ্যের শাসক দলের রাজ্য কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ‘কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি হয়তো ভেবেছিল হয় ছত্রধর রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকবে নতুবা বঙ্গ গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবে’। কোনটিই না করে সরাসরি ছত্রধর তৃনমূলের রাজ্য কমিটিতে আসায় ব্যাকফুটে চলে আসে জঙ্গলমহলের বিজেপি। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অর্থাৎ এপ্রিল মাসে শেষ সপ্তাহে ছত্রধর মাহাতো সহ ২২ জন কে পুন তদন্তের জন্যে দ্রুত কলকাতায় তলব করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।এই সমন পেয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী। সেখানে মূল আবেদন এই মামলা দুটি থেকে নিস্কৃতি পাবার উল্লেখ থাকলেও কলকাতার বদলে শালবনীতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাবার আবেদন টি ছিল। করোনা আবহে সমস্ত গণপরিবহন বিশেষত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ বলা যায়। গত মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে ছত্রধরের মামলায় এনআইএ কে শালবনীতে পুনতদন্ত করবার নির্দেশ দেন বিচারপতি।