সাবেকি দূর্গা পুজোকে ঘিরে সেজে উঠেছে গ্রাম বাংলার এক মন্ডব। রাঢ়বঙ্গের প্রাচীন জনপদ শ্রীপাঠ শ্রীখন্ডের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা সিংহবাহিনী প্রায় ৮৯৫ বছর ধরে পুজিত হয়ে আসছে। কথিত আছে শ্রীখন্ড ঠাকুরবাড়িতে পূজিত হতেন মা সিংহবাহিনী। পরবর্তীকালে জয়পুরের রাজার দেওয়া রায় উপাধি নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে মা সিংহবাহিনীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন প্রতাপ চন্দ্র রায়। দেবী মূর্তির পাশাপাশি শ্রী কৃষ্ণ এখানে বিরাজ করেন বাল্য রূপে। আর তাই জন্মাষ্টমীতে এখানে যোগমায়া রূপি মা সিংহবাহিনী ও গোপালের বিশেষ পুজো হয় একসাথে। তবে এই মন্দিরে মূল উৎসব হল দূর্গা পূজো। ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত মন্দির চত্বর থাকে পুরোপুরি জমজমাট। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা স্নানের পর মা সিংহবাহিনী নিত্য সেবার ঘর থেকে দূর্গোৎসবের ঘরে আসেন। সেবাইতদের ভাষায় যা মায়ের মঙ্গল যাত্রা নামে পরিচিত। এরপর নিয়মনিষ্ঠা সহকারে চারদিন ধরে চলে পুজা পাঠ। বিশেষ করে মহাষ্টমীর সন্ধীক্ষনে ১০৮ পদ্ম ফুল অর্পণ আজো চলে আসছে। এছাড়াও পুষ্পাঞ্জলি, হোম, আরতি, স্তবপাঠ, চণ্ডীপাঠ ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে পালিত হয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। দশমীর সন্ধ্যায় পরিবারের সকলে মিলে ভূতনাথ মন্দির দর্শনের পর পালিত হয় শুভবিজয়া। শতাব্দী প্রাচীন এই এই পুজোর আকর্ষণ স্থানীয়দের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রায় পরিবারের আধ্যাত্মিক যোগ কিন্তু বরাবরই। এই বাড়ির কূলবধু সরযুবালা রায় ছিলেন শ্রী মা সারদা দেবীর অন্যতম একজন মন্ত্রশিষ্যা। স্বহস্তে তিনি শ্রী মার চরণ সেবা করেছেন। মন্দিরের সেবাইত প্রনব রায় জানান যে, সারা বছর মন্দিরে নিত্য পূজা ছাড়াও জন্মাষ্টমী, রাস, জগদ্ধাত্রী পূজো, বাসন্তী পূজোর মতো বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। মন্দির চত্বরে ব্যস্ততা এখন চরমে হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপরে শুরু হবে মা সিংহবাহিনী দূর্গোৎসব।
শ্রীখন্ডে প্রাচীন দুর্গাপূজা
