সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ারের দাম কি আপাতত উচ্চতার শেষ সীমানায়?
পার্থপ্রতিম সেন (প্রাক্তন চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাংক)
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই বছরের ১৬ জুন থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি ব্যাঙ্ক গুলোর শেয়ারের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূলত এই বৃদ্ধি সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ভালো পারফরমেন্স। অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ কমানো, ঋণ প্রদান বৃদ্ধি এবং মুনাফা বৃদ্ধি এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য হারে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে নিম্নলিখিত সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর:
১) ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক: ১৩১.৯৬%
২) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ৯৩.৯৯%
৩) ইউকো ব্যাঙ্ক: ৮১.৪৭%
৪) পাঞ্জাব ন্যাশনেল ব্যাঙ্ক: ৭৬.৫৯%
৫) ব্যাঙ্ক অফ বরোদা: ৭০.৩৭%
৬) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ৩৬.৫১%
শেয়ার ইনডেক্স এর মধ্যে
‘নিফটি পিএসইউ ব্যাঙ্ক’ ইনডেক্স-এর বৃদ্ধি হয়েছে ৬৭.৫৯%.
‘নিফটি পিএসইউ ব্যাঙ্ক’ ইনডেক্স গঠিত হয়েছে ১২টি সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ার নিয়ে। তবে প্রত্যেকটি ব্যাঙ্কের শেয়ারের ওয়েট বা ওজন ইনডেক্সে সমান নয়। ওয়েট বা ওজন হয় ব্যাঙ্কের শেয়ারের মার্কেট ক্যাপিটালইজেশন এর ভিত্তিতে। একটি ব্যাঙ্কের মার্কেট ক্যাপিটালইজেশন বের করা হয় ব্যাঙ্কের কত সংখ্যক শেয়ার আছে তাকে শেয়ারের দাম বা শেয়ার প্রাইস দিয়ে মাল্টিপ্লাই বা গুণ করে।
‘নিফটি পিএসইউ ব্যাঙ্ক’ ইনডেক্সে সবচেয়ে ওজনদার শেয়ার হল স্টেট ব্যাঙ্কের শেয়ার যার ওয়েট বা ওজন হল ৭০.০৩%.
১২ টি সরকারি ব্যাঙ্কের ওয়েট বা ওজন নিচে দেয়া হল:
১) ব্যাঙ্ক অফ বরোদা: ৯.৮১%
২) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ১.৯৮%
৩) কানাড়া ব্যাঙ্ক: ৬.৩৪%
৪) সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক: ০.৪৭%
৫) ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক: ২.১৮%
৬) ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক: ০.৪৮%
৭) ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র: ০.৫১%
৮) পাঞ্জাব ন্যাশনেল ব্যাঙ্ক: ৪.৯১%
৯) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ৭০.০৩%
১০) ইউকো ব্যাঙ্ক: ০.৩৪%
১১) ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক: ২.৮৬%
১২) পাঞ্জাব এন্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক: ০.০৯%
১২ টি ব্যাঙ্কের ওয়েট বা ওজন মিলিয়ে ১০০%.
গত ২ ডিসেম্বর ১২ টি সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ারের দাম শেয়ার মার্কেট খোলার সময় যা ছিল, তা নিম্নে দেয়া হল রুপিতে:
১) ব্যাঙ্ক অফ বরোদা: ৩১.৯০
২) ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ৮২.৫০
৩) কানাড়া ব্যাঙ্ক: ৩২০.৫৫
৪) সেন্ট্রেল ব্যাঙ্ক: ২৫.৪৫
৫) ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক: ২৭৬.০৫
৬) ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক: ২২.৯৫
৭) ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র: ২৭.৪৫
৮) পাঞ্জাব ন্যাশনেল ব্যাঙ্ক: ৫৩.৩০
৯) স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: ৬০৭.৫০
১০) ইউকো ব্যাঙ্ক: ২০.৫০
১১) ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক: ৮১.৩০
১২) পাঞ্জাব এন্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক: ২২.১৫
আর ‘নিফটি পিএসইউ ব্যাঙ্ক’ ইনডেক্স-এর ঐ দিনে দাম বা প্রাইস হল ৪০৮৩.৮০ রুপি।
বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ার এখন যে দামে ট্রেডিং বা কেনাবেচা হচ্ছে তা ঐতিহাসিক প্রাইস-টু- বুক ভ্যালু মাল্টিপুল এর কাছাকাছি, যার অর্থ এর পর এই ব্যাঙ্ক গুলোর শেয়ারের দাম আপাতত আর খুব বেশি উপরে উঠার সম্ভাবনা কম। তবে কিছু শক্তিশালী শেয়ারের ক্ষেত্রে তো ব্যাতিক্রম থাকবে।
শেয়ারের প্রাইস-টু-বুক ভ্যালু মাল্টিপুল বের করা হয় ব্যাঙ্কের ইকুয়িটি ক্যাপিটাল ও রিজার্ভ মিলিয়ে যে শেয়ারহোল্ডার ফান্ড হয়, তাকে প্রথমে শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় প্রতি শেয়ারের ‘বুক ভ্যালু’, তারপর ব্যাঙ্কের প্রতি শেয়ারের দাম বা মার্কেট প্রাইসকে প্রতি শেয়ারের বুক ভ্যালু দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ” প্রাইস-টু-বুক ভ্যালু মাল্টিপুল অর্থাৎ এই পি/বি ভ্যালু মাল্টিপুল বুঝিয়ে দেয় একটি শেয়ারের মার্কেট প্রাইস তার বুক ভ্যালু থেকে কতগুণ বেশি। যদি এই ভ্যালু মাল্টিপুল বেশ উপরের দিকে পৌঁছে যায় এবং হিষ্টোরিকেল ভ্যালুর কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তাহলে শেয়ারের দাম আর অধিক বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর শেয়ারের প্রাইস-টু-বুক ভ্যালু মাল্টিপুল বেশ উঁচুতে বা পুরোনো উচ্চতার কাছাকাছি চলে গেছে এবং কিছু ব্যাতিক্রম বাদ দিয়ে আর খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম, তাই সরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ার যাদের কাছে আছে, কিছু বিক্রী করে মুনাফা কামাতে পারেন।
প্রফিট বুকিং-এর জন্য সবাই যদি কিছু কিছু শেয়ার বিক্রী করতে থাকেন, তা হলে শেয়ার বাজারে ক্রেতা থেকে বিক্রেতার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং শেয়ারের দাম নিম্নগামী হবে। এইভাবে যখন শেয়ারের দাম নীচে নেমে যাবে, তখন আবার শেয়ার কিনে রাখা যাবে, তারপর আবার যদি সরকারি ব্যাঙ্কগুলোর ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের রেজাল্ট ভালো হয়, তবে শেয়ারের দাম আবার বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন আবার বিক্রী করে মুনাফা কামানো যাবে। এই ভাবে পর্যায় ক্রমে শেয়ারের দামের উঠানামা চলতে থাকে, সাথে সাথে কেনাবেচা চলতে থাকে, লাভ ক্ষতিও চলতে থাকে।
তবে শেয়ার বাজারে উপযুক্ত জ্ঞান নিয়ে সতর্কতার সাথে পা রাখতে হয় এবং নিয়মিত শেয়ার বাজারের খবরাখবর রাখতে হয়, তাহলে কিছু মুনাফা কামানোর সুযোগ থাকে তবে ক্ষতির ঝুঁকি নিয়েই সদাসর্বদা চলতে হয়।